শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৬ অপরাহ্ন
কুয়াকাটা প্রতিনিধি॥ কুয়াকাটা পৌর এলাকা এবং লতাচাপলী ইউনিয়নের কৃষকসহ সাধারণ মানুষের কৃষিকাজে জলবদ্ধতা নিরসনে খাল খননের কাজ নিয়ে স্থানীয়দের এন্তার অভিযোগ রয়েছে। খালের দুই পাড়ের শত শত পরিবারের অভিযোগ খালের সীমানা আগে চিহ্নিত করা হয়নি।
খালটি কি ডিজাইনে কাটা হবে এর কোন সাইনবোর্ড টানানো নেই। মানুষ জানান, দুইপাড়ের মাটি ছেঁটে দেয়া হয়েছে। বহু স্পটে খালটির পুরনো প্রস্থ আরও কমে গেছে। তলদেশ আগে যা ছিল তাই থেকে যাচ্ছে।
এমনকি খালের পাড় দখল করে থাকা স্থাপনা পর্যন্ত রয়ে গেছে। আরও যেন খাল দখলের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। স্থানীয়রা তাঁদের ভাষায় ‘বগল ছাঁচা’ অবস্থা করা হয়েছে। খালের পানি সেচ না দিয়েই কিছু কাদামাটি স্কেভেটর দিয়ে তুলে খনন কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে।
জানা গেছে, উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের অধীন কুয়াকাটাসহ লতাচাপলীর চারদিক ঘেরা ৪৮ নম্বর পোল্ডারের অধীন স্লুইস সংযুক্ত ৩০ কিলোমিটার খাল পুনঃখননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কুয়াকাটার উন্নয়নে এ খালটি রক্ষা করে যথাযথভাবে খনন করলে সুফল পাবেন অন্তত অর্ধলক্ষ মানুষ।
ইতোমধ্যে সাড়ে সাত কিমি অংশের খালের পুনঃখননের কাজ ৩০ মার্চ শুরু হয়েছে। লতাচাপলী ইউনিয়নের আলীপুর থেকে শুরু হওয়া খালটি কুয়াকাটা পৌরএলাকায় গিয়ে শেষ হয়েছে। স্থানীয়ভাবে কুয়াকাটা খাল হিসেবে বলছেন, কেউ কেউ ঘাটলার খালও বলছেন। করোনার মধ্যেও থেমে নেই এই পুনঃখনন কাজ।
সংশ্লিষ্টসুত্রে জানা গেছে, খালটির সাড়ে সাত কিমি পুনঃখনন করার কাজ শুরু হয়েছে আলীপুর অংশ থেকে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এক কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়বরাদ্দে সাত দশমিক ৪৬৫ কিমি দীর্ঘ এখালটির পুনঃখননের কথা রয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কঙ্গম ইন্টারন্যাশনাল কনস্ট্রাকশন (সিকো) খননের কাজটি করছে। নিয়ম রয়েছে খালটির তলদেশ মাথা (আগা) থেকে দুই দশমিক পাঁচ মিটার থেকে গোড়ার দিকে নয় দশমিক পাঁচ মিটার খনন করা হবে। টপ থাকবে নয় থেকে ১৫মিটার পর্যন্ত। গভীরতা এক থেকে দেড় মিটার পর্যন্ত।
আগামী জুন মাসে খালটির এই সাড়ে সাত কিমি অংশ পুনঃখননের কাজ শেষ হওয়ার টার্গেট রয়েছে। উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের পরামর্শক মো. মজিবুর রহমান জানান, এ পোল্ডারে মোট ৩০ কিমি খাল পর্যায়ক্রমে পুনঃখনন করা হবে। এই খালটির সাড়ে তিন কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
বাকি কাজ যথাসময় শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করলেন। এ পরামর্শক জানান, খালটি পুনঃখনন হলে ড্রেনেজ ব্যবস্থার সুষ্ঠু সমাধান হবে। তাছাড়া রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মৃতপ্রায় এখালগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে।
পানির প্রবাহ চলমান থাকায় পর্যটন এলাকার সৌন্দর্যবর্ধন হবে। দুই পাড়ের একাধিক বাসীন্দা জানান, আসলে মূল খালটি আগে চিহ্নিত করে তারপর পুনঃখনন করার দরকার ছিল। নইলে বাড়তি খাস জমি এখন দখল হয়ে যাবে। আর খননে নামকাওয়াস্তে মাটি বেকু মেশিনে তোলা হচ্ছে।
দুই পাড় ছেচে দেয়া হচ্ছে। রাতের বেলা কাদা তুলে সকালে পানি তুলে দেয়া হয়। বোঝার কোন উপায় নেই। এমনকি পৌরসভার ঘাটলার কালভার্ট এলাকায় খাল দখল করা স্থাপনাগুলো দাঁড়িয়ে আছে। অথচ তা বাদ দিয়ে খাল খনন করা দেখানো হচ্ছে।
মূল খালটির প্রস্থ ঠিক রেখে খননের দাবি মানুষের। তবে প্রকল্পের পরামর্শক মজিবুর রহমান এও জানান, বহুদফা সমীক্ষা চালানোর পরে যথাযথভাবে কাজটি করা হচ্ছে। লতাচাপলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনছারউদ্দিন মোল্লা জানান, খালটি আরও গভীর এবং প্রস্থ করে খনন করার দরকার ছিল।
নইলে খাস অংশ দখল হয়ে যাবে। খালটির স্লুইসের অংশের সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকা তার ইউনিয়নের মধ্যে পড়েছে।
কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আবদুল বারেক মোল্লা জানান, খালটি খননে জলাবদ্ধতার সমস্যা কেটে যাবে। তবে দুই পাড়ের মাটি সংরক্ষণ করতে পারলে দুই পাড়ে দুইটি সড়ক করে দিলে মানুষের উপকার হতো। পর্যটন এলাকার সৌন্দর্য বাড়ত।
Leave a Reply