শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪০ পূর্বাহ্ন
কুয়াকাটা প্রতিনিধি॥ কুয়াকাটার অত্যাধুনিক আবাসিক হোটেল খান প্যালেস এর প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ম্যানেজার, বয়সহ ২৫ জন কর্মচারীর বেতন বাবদ ছয় লাখ টাকা গুনতে হয়েছে। করোনার প্রভাবে সরকারি নির্শেনায় ১৮ মার্চ থেকে হোটেল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
আর ২৩ মার্চ থেকে কুয়াকাটা লকডাউন করা হয়েছে। শুধুমাত্র হোটেলটির নিরাপত্তা ও প্রতিনিকার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পাঁচ জন কর্মচারী কর্মস্থলে রয়েছে। ব্যবসা বন্ধ থাকায় দৈনিক অন্তত লাখ টাকার কালেকশন থেকে বঞ্চিত রয়েছেন কর্তৃপক্ষ। মূল মৌসুমেই হোটেল বন্ধ থাকায় এ দুই মাসে যেখানে ৪০ লাখ টাকা লাভ হওয়ার কথা। সেখানে লাভসহ ৫০ লাখ টাকার লোকসান গুনতে হয়েছে।
এ হোটেলের পরিচালক রাসেল খান জানালেন এসব তথ্য। করোনার প্রভাব প্রতিরোধে কুয়াকাটায় পর্যটক ভ্রমণে সরকারি নিষোধাজ্ঞার কারণে ১৮ মার্চ থেকে হোটেল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একই দশা কুয়াকাটা গেস্ট হাউসের মালিক আব্দুল মোতালেব শরীফের। তিনি জানালেন, ২০ জন স্ট্যাফের দুইজন ছাড়া সকলকে ছুটি দেয়া হয়েছে। দুইজনকে রাখা হয়েছে।
এরপরেও করোনার প্রভাবে হোটেল বন্ধ রাখলে কীভাবে বেতনভাতা দিবেন তা জানা নেই। সমুদ্র্র বাড়ি রিসোর্টের জহিরুল ইসলাম মিরন জানান, তাঁদের ছোট্ট হোটেলের চারজন স্টাফ ছুটি দিয়েছেন। তবে মাসে বেতন গুনতে হবে প্রায় ৬০ হাজার টাকা।
ইলিশ পার্কের সত্ত্বাধিকারী রুমান ইমতিয়াজ তুষার জানালেন, তার দুইটি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা স্টাফ ছাড়া বাকি ১০জনকে ছুটি দিয়েছেন। কিন্তু গুনতে হচ্ছে বেতনভাতা। কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ জানান, কুয়াকাটার শতাধিক হোটেলে কর্মরত অন্তত দেড় হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী দুই মাস বেকার।
কিন্তু প্রায় ৫০ কোটি টাকার বেতনভাতা গুনতে হবে মালিকদের। অধিকাংশ হোটেলমালিক এখন পর্যন্ত মার্চ-এপ্রিল মাসের বেতন দিতে পারেননি। মরনঘাতক করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আরো দীর্ঘসময় সংক্রমিত হলে এ ব্যবসা বন্ধের শঙ্কা রয়েছে। এতো গেল শুধু আবাসিক হোটেলের অবস্থা।
এছাড়াও অর্ধশত খাবার হোটেল। সৈকতে শতাধিক বাণিজ্যিক ফটোগ্রাফার, ৪০ জন ছাতা বেঞ্চি ব্যবসায়ী, ফিশ ফ্রাই, চটপটিসহ ক্ষুদে দোকানি রয়েছে আরও ১৫০ জন। ট্যুরিস্ট বোট মালিকসহ কর্মচারী রয়েছে ১৫০ জন। রয়েছে ভাড়াটে মোটরসাইকেল চালক, অটোবাইক, ভ্যান-টমটমচালক দুই শতাধিক। কুয়াকাটায় সাগরের অগভীর এলাকায় মাছ ধরা খুটা জেলেদের সংগঠন আশার আলো জেলে সমবায় সমিতির সভাপতি নিজাম শেখ জানান, তাদের নিয়ন্ত্রিত ২৪০০ জেলে পরিবার সম্পুর্ণভাবে বেকার হয়ে আছে। এদের এখন দিন চলছে চরম মানবেতর।
এভাবে সব মিলিয়ে শুধুমাত্র কুয়াকাটায় কমপক্ষে হোটেল ব্যবসার তিন হাজার কর্মজীবীসহ মোট সাড়ে পাঁচ হাজার পরিবার বেকার হয়ে পড়েছে করোনার প্রভাবে। এসব পরিবারে দুর্বিষহ অবস্থা বিরাজ করছে। এসব পরিবারের ঈদ উৎসব ম্লান। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, স্থানীয় ব্যক্তি উদ্যোক্তারা কয়েক শ’ মানুষকে ঈদ উপহার সামমগ্রী দিয়েছেন। কিন্তু তা খুবই অপ্রতুল।
ঈদ পরবর্তী মে মাসের পরেও যদি মরনব্যাধি করোনা প্রতিরোধ না হয়, কিংবা অবস্থা অপরিবর্তিত থাকে তাইলে কুয়াকাটায় পর্যটনকেন্দ্রীক জীবন-জীবিকা নির্ভর সরাসরি তিন হাজার ছাড়াও পরোক্ষভাবে আরও দুই হাজার পরিবার সম্পূর্ণভাবে অচল হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এখানকার অর্থনীতিতে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। পর্যটন নির্ভর ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ রয়েছে।
কবে নাগাদ এব্যবসায় ফের গতি আসবে তাও জানে না কেউ। অজানা শঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। এসব ব্যবসায়ীসহ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সাধারণ মানুষ এখন সরাসরি প্রণোদনার দাবি করছেন। কর্মহীন শত শত হোটেল কর্মচারীসহ ক্ষুদ্র পেশার মানুষের এন্তার অভিযোগ মাননীয় প্রধানমন্ত্র ঈদের উপহার হিসেবে তাঁদের পেশার মানুষকে ২৫০০ করে টাকা দেয়ার কথা।
কিন্তু ওই টাকাও তাঁদের ভাগ্যে জোটেনি। সকল দুর্বিষহ অবস্থা এবং লোকসান মেনে নিয়ে সবার কামনা করোনার মরন থাবা থেকে সারা বাংলাদেশসহ কুয়াকাটা পর্যটন এলাকার মানুষ রক্ষা পাবেন। ফের কর্মমুখর হবে। এমন প্রত্যাশা সকলের মনে। সবাই অপেক্ষা করছেন সেই শুভক্ষণের।
তবে জেলে পরিবারের সদস্যদের বিশেষ ভিজিএফএর চাল বিতরণ করা হয়েছে বলে জানালেন কলাপাড়ার ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক। কুয়াকাটা পৌরএলাকায় ১০ টাকা কেজি দরে ১৮০০ পরিবারকে ২০ কেজি করে চাল দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ২৫০০ টাকা করে বিশেষ প্রণোদনার টাকা পাওয়ার কথা ৫০০ জনের। কিন্তু এসব তালিকায় কর্মহীন এসব মানুষের অধিকাংশের নাম নেই।
Leave a Reply