মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৬ অপরাহ্ন
তানজিল জামান জয়,কলাপাড়া( পটুয়াখালী ) প্রতিনিধি।। পর্যটনকেন্দ্র কুয়কাটার সৈকতে ভেসে আসছে মারা যাচ্ছে সামুদ্রিক কচ্ছপ। বিরল প্রজাতির মৃত এ কচ্ছপ গুলো এর আগে কখনো দেখেনি স্থানীয়রা। এক একটির ওজন ২০ থেকে ৩০ কেজি, আবার কোনটির ওজন আরো বেশি।
জলপাই রংয়ে মৃত কচ্ছপ গুলোর পিঠের অংশে ডোরাকাটা দাগ রয়েছে। চোখ এবং মুখের অংশে কাল সেড থাকায় দূর থেকে এটি অন্য কোন প্রানী মনে করছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। সৈকতের দীর্ঘ ২২ কিলোমিটার বিস্তৃর্ণ এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে ডজন খানেক মারা কচ্ছপ দেখতে পেয়েছে স্থানীয়রা।
এসব জলজ প্রাণীগুলো জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাধীনভাবে চলাচলের প্রতিবন্ধকতা, পানি দূষণ, খাদ্য সংকট, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উপকুলের কাছাকাছি এসে জালে আটকা পড়ে মারা পড়ছে বলে স্থানীয়রা প্রাথমিক ধারণা করছে।
এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে বনবিভাগ মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, মরা কচ্ছপগুলো যাতে করে দুর্গন্ধ না ছড়ায় এ জন্য ব্যবস্থা নিবে বনবিভাগ।
স্থানীয় জেলেদের ধারনা, মা কচ্ছপ গুলোর প্রজনন মৌসুম বিধায় সৈকতের বালুতে ডিম পাড়ার জন্য হয়তো আসছিল, যা জালে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে।
অপরদিকে, কচ্ছপ বিশেষজ্ঞদের মতে জলবায়ু পরিবর্তনগত কারনে পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার কারনে সাগরের কচ্ছপ গুলো তীরে ফিরতে শুরু করেছে। এছাড়া সাগরের দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে উপকূলে আসার সময় মাছ ধরার ট্রলারের পাখায় আঘাত পেয়ে মা কচ্ছপ মারা যেতে পারে। এছাড়া উপকূলীয় এলাকায় কিছুদিন ধরে তীব্র গরমও এর মৃত’র কারন হতেও পারে।
তবে অনেকের মন্তব্য তারা বিভিন্ন প্রজাতির কচ্ছপ দেখেছেন, কিন্তু এমন প্রজাতির কচ্ছপ এই প্রথম দেখলেন। কচ্ছপ গুলো সৈকত থেকে অচিরেই না সরানো হলে পঁচে এলাকার আবহওয়া দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অথবা সমুদ্রতীরে বেওয়ারিশ কুকুর মৃত এ কচ্ছপ গুলো ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করার আশংকা রয়েছে, যা পর্যটকদের বিড়ম্বনার কারন হতে পারে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।
জেলেদের সংগঠন আশার আলো সমবায় সমিতির সভাপতি নিজাম শেখ জেলেদের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন, রামনাবাদ ও আন্ধারমানিক চ্যানেলের নদীর সংযোগস্থলও সমুদ্রের মোহনায় অবাধ বিচরণ সামুদ্রিক কচ্ছপের। ডিম পাড়ার জন্য বেলাভুমিতে আসার সময় জেলেদের জালে আটকা পড়ে এগুলো মারা যেতে পারে।
কুয়াকাটা সৈকতের লেম্বুরচর, ঝাউবন, গঙ্গামতিও কাউয়ারচর এলাকার একাধিক জেলের সাথে কথা বললে তারা জানায়, গত ৪-৫ দিন ধরে কুয়াকাটা সৈকতে মরা কচ্ছপ দেখতে পেয়েছে। এছাড়া চলতি বর্ষা মৌসুমসহ গত বছরে অন্তত ৫টি শুশুক, ১২ ডলফিন, ২টি তিমিসহ সেটেশান প্রজাতির বড় বড় মাছ মরে পঁচে দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রানী বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড.মো.কামরুজ্জামান জানান, কচ্ছপের গায়ে যেহেতু আঘাতের চিহ্ন নেই, সেহেতু দূষিত পানির কারনে এ গুলোর মৃত্যুর কারন হতে পারে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মনোজ কুমার সাহা জানান, কচ্ছপের গতিপথে জেলেরা জাল ফেলানোর কারনে মৃত্যুর কারন হতে পারে।
কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আ.বারেক মোল্লা জানান, মৃত এ কচ্ছপ গুলোকে সরিয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে,যাতে কোন পর্যটকদের ক্ষতির কারন না হয়।
Leave a Reply