রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫০ পূর্বাহ্ন
হারুন অর রশিদ, গলাচিপা(পটুয়াখালী) সংবাদদাতা:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-৩(গলাচিপা-দশমিনা) আসনে বিএনপি, আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী ঐক্যজোটের ৬জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন। তবে বিএনপি থেকেই ৩জন মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন দেশব্যপি বহুল আলোচিত-সমালোচিত আ’লীগের সাবেক এমপি আলহাজ্ব গোলাম মাওলা রনি। ‘ভাইয়া বাহিনী’ এর প্রধান খ্যাত এ নেতা বিএনপি থেকে মনোনয়ন দাখিল করায় আলোচনা-সমালোচনা এখন তুঙ্গে। আওয়ামী লীগ ছেড়ে সদ্য বিএনপিতে যোগ দেওয়া সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনিকে এ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার কারণে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। আ’লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে বিএনপিতে যোগ দিয়ে মনোনয়ন বাগিয়ে নেওয়ায় তাঁকে নিয়ে নানান ধরনের সমালোচনাও চলছে।আ’লীগের দুর্গ খ্যাত আসনে সমালোচিত রনিকে ধানের শীষ প্রতীক দেয়া হয় তবে বিএনপি এ আসনে আবারো হারাবে বলেও অনেকে ধারনা করছে।
এছাড়া বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন এবং গলাচিপা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. শাহজাহান খান।
জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেন গোলাম মাওলা রনি। আ’লীগ থেকে মনোনয়ন পাবার আশায় গত ১৪ নভেম্বর তিনি আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রার্থী সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে যোগ দেন। কিন্তু তাকে না দিয়ে আ’লীগ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় সিইসির ভাগ্নে এস এম শাহজাদা সাজুকে। এর পর ২৬শে নভেম্বর সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপিতে যোগ দিয়ে মনোনয়ন পত্র গ্রহন করেন।মনোনয়ন জমার শেষ দিনে ২৮ শে নভেম্বর গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রির্টানিং অফিসার শাহ মোঃ রফিকুল ইসলামের কাছে হাসান মামুন, মোঃ শাহজাহান মিয়া ও গোলাম মাওলা রনির পক্ষে তার ভাই গোলাম ঝিলানী ঝিলান মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। এর আগে গোলাম মাওলা রনি নিজে রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক কাছে মনোনয়ন পত্র জমা দেন। মনোনয়ন যাচাই-বাছাই শেষে গোলাম মাওলা রনির হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকার কারণে বাতিল করলে তিনি নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন। পরে ৬ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন গোলাম মাওলা রনির মনোনয়ন বৈধ বলে ঘোষনা দেয়।
সূত্র জানায়,২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-৩ আসন থেকে আ’লীগের মনোনয়ন পায় গোলাম মাওলা রনি। অনেকটা শূন্য মাঠে গোল করার মতো, তিনি উড়ে এসে’ই আ’লীগ মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়েছেন। ওই নির্বাচনে জয়ী হন তিনি। সাবেক এ সাংসদ ভাইয়া বাহিনীর প্রধান রনি ভাইয়া নামেই সুপরিচিত। নির্বাচিত হওয়ার পর এ বাহিনী বিভিন্ন অপতৎপরতা বেড়ে গিয়েছিল।তার হাত থেকে রক্ষা পায়নি সংখ্যলঘু পরিবাররা। যার কারণে দুই উপজেলার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। গলাচিপা উপজেলার সুতাবাড়িয়া খান বাড়িতে বিবাহের সূত্রে ভাইয়া নামে খ্যাত হয় এই গোলাম মাওলা রনি। শুধু নিজ এলাকায় নন জেলা-বিভাগীয় শহর থেকে শুরু করে দেশব্যাপী তিনি আলোচিত সমালোচিত।
সংসদ সদস্য থাকাকালীন গলাচিপা উপজেলার রামনাবাদসহ দুইটি নদী ভরাটকে কেন্দ্র করে তিনি সমলোচনায় জড়িয়ে পড়েন। এর বিরুদ্ধে দৈনিক নয়াদিগন্তে ২০০৯সালের ৬ সেপ্টেম্বর “নদীর তীর ভরাট করে নির্মিত হচ্ছে মার্কেট” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ভূমি অফিস ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই এমপি রনি নিজ অর্থায়ানে রামনাবাদ নদীর তীরে ১হাজার ১৫০ফুট দীর্ঘ ও ৩৮০ ফুট চওড়া জায়গাটি ভরাট করে স্থাপনা তৈরির উদ্দ্যোগ নেয়। এ সংবাদ প্রকাশের জেরে নয়াদিগন্তের গলাচিপা সংবাদদাতা ও গলাচিপা মহিলা কলেজের প্রভাষক হারুন অর রশিদকে কলেজ কমিটি থেকে শোকজ করতে বাধ্য করে সাবেক এমপি রনি। এছাড়া প্রথম আলো, সমকাল, যুগান্তর ও মানবজমিন সহ বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। এরই সূত্র ধরে ২০০৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রথম আলো ও আমার দেশ পত্রিকার গলাচিপার দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজী ও ধর্ষণের চারটি মামলা দায়ের করা হয়।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলাসহ নদী দখলের তথ্য সংগ্রহ করতে পটুয়াখালীর জেলা সদরে কর্মরত ৬ সাংবাদিক গলাচিপা গেলে তাদের উপরও হামলার ঘটনা ঘটে।সাংসদের কর্মকান্ড তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সাংসদ নিজে বাদি হয়ে একই বছরের ৩ নভেম্বর ঢাকার একটি আদালতে প্রথম-আলো, সমকাল, যুগান্তর ও মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক, প্রকাশক ও স্থানীয় প্রতিনিধিসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ১০০কোটি টাকার মানহানির মামলা করে। এতে প্রতিবাদের ঝড় উঠে পটুয়াখালীসহ সারাদেশে। একাধিক জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় গণমাধ্যমে উঠেছিল তার এই কর্মকান্ড। সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার ৯ মাসের মধ্যেই জেলা ও উপজেলার সাংবাদিক নির্যাতনের মধ্য দিয়ে সংবাদপত্রের শিরোনাম হন গোলাম মাওলা রনি। একটি টিভি চ্যানেলে’র অনুসন্ধানকারী প্রতিনিধিদের ওপর হামলার ঘটনায় মামলায় কারাবরন করে আলোচিত হন এই সেই রনি।পরে তাদের গভীর অনুসন্ধানে এমপি রনির সব কুচক্রি কর্মকান্ড প্রকাশিত হয়।
২০০৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর তৎকালীন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী পটুয়াখালী-৪ আসনের সাংসদ মো. মাহাবুবুর রহমান তালুকদারের গলাচিপার পানপট্টি আগমন উপলক্ষে সেখানে মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সেই মঞ্চ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ এ ঘটনার জন্য সাংসদ রনি ও তার দলবলকে দায়ী করেছিলেন। সংসদ নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে সরকারের কর্মকান্ডের সমালোচনার জের ধরে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার হন রনি।
এসব বিতর্ক ও বড় একজন ব্যবসায়ীর সাথে বিরোধের কারণে ২০১৪সালের ৫ই জানুয়ারী নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন না পেয়ে অনেকটা নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। পরবর্তীতে নিজের ক্ষোভ তিনি বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতায় তুলে ধরেন। এতে তিনি দুই দলের কাউকেই ছাড় দিয়ে কথা বলেনি। এসব কারণেই গত নির্বাচনের মত এবারো দল থেকে মনোনয়ন পত্র ক্রয় করলে তাকে আ’লীগ থেকে মনোনয়ন দেয় হয়নি। এদিকে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে ২৮শে নভেম্বর তার ফেসবুক পেজে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেন।
গোলাম মাওলা রনি’র সমার্থকরা জানান, তিনি আ’লীগ থেকে বিএনপিতে যোগ দিলেও তারা আ’লীগ ছেড়ে যাবে না। যার কারণে রনির নিজস্ব কোনো ভোট ব্যাংক নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গলাচিপা উপজেলা যুবদলের এক নেতা জানায়, রনি আ’লীগের সাংসদ থাকাকালীন আমাদের নেতাকর্মীদের নামে ১৯ টি মামলা দিয়ে হয়রানী করেছিলেন। তাই বিএনপি থেকে যদি রনিকে মনোনয়ন দেয়া হয় তবে অনেক কর্মী নির্বাচনী কার্যক্রমে আ’লীগ দ্বারা হয়রানীর স্বীকার হবে।
দশমিনা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফখরুজ্জামান বাদল বলেন, রনিকে বিএনপি থেকে মনোনয়নের যে চিঠি দেওয়া হয়েছে এ বিষয়ের আমরা স্থানীয় নেতারা তীব্র নিন্দা জানাই। এই রনি আওয়ামী লীগের এমপি থাকা অবস্থায় বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম ও অত্যাচার চালিয়েছে। ২০১২ সালে তিনটি নাশকতার মামলা দিয়েছে আমার বিরুদ্ধে।
এতে জেলও খেটেছি। রনি যদি এ আসন থেকে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন তাহলে স্থানীয় নেতারা তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে।দশমিনা উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক বলেন,গোলাম মাওলা রনি বিএনপির মনোনয়ন পাবেন এটা আমরা ভাবতেও পারি না। রনি এ আসনের সংসদ সদস্য থাকাকালীন ২০১২ সালের ২২ এপ্রিলের একটি মামলায় আমিসহ ৯ বিএনপি নেতা জেল খেটেছি। এ আসনে আমরা একজন ত্যাগী নেতা চাই, যিনি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের কথা ভাববেন।
দশমিনা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো রুহুল মোল্লা বলেন, বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার পরের দিন দশমিনায় হরতাল পালন করা হয়। ওই দিন গোলাম মাওলা রনির নির্দেশে ‘ভাইয়া বাহিনী’ বিএনপি অফিস পুৃড়িয়ে দেয়। অফিসে থাকা খালেদা জিয়া ও জিয়াউর রহমানের ছবি পুড়িয়ে দিয়ে উল্লাস করে। তার বাহিনী দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার চালাতো। আমরা তাকে ঘৃণা করি। বিএনপি থেকে নির্বাচন করলে তার বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল করা হবে। আমরা মামুন ভাইকে সমর্থন করি। তার পক্ষে আমরা নির্বাচনে কাজ করবো।
দুই উপজেলার বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী জানান, বিগত বছর গুলোতে এ আসনে হাসান মামুন সবচেয়ে সক্রিয় ছিল। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি থাকাকালীন ব্যাপক বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন। এ ছাড়া দল মত নির্বিশেষে যেই তার কাছে গিয়েছে তাকেই সাহায্য করেছে। হাসান মামুন কোন্দলের রাজনীতি পছন্দ করে না। যদি তাকে মনোনয়ন দেয়া হয় তবে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে।
গলাচিপা উপজেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম মোস্তফা জানান, পটুয়াখালী-৩ আসনে তিনজনকে মনোনয়নের চিঠি দিয়েছে হাই কমান্ড। এতে কিছুটা দ্বিধায় পড়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তবে আগামী ৮ তারিখ বিএনপির পক্ষ থেকে প্রার্থী নিশ্চিত করা হতে পারে। তখন যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে তার পক্ষে কাজ করবে স্থানীয় বিএনপি।
সাবেক এমপি শাহজাহান খান বলেন, আমি পটুয়াখালী-৩ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছি। এ আসনটি মূলত আওয়ামী লীগের ঘাঁটি ছিল। সেখান থেকে ১৯৯৫ সালে আমি বিএনপির হাল ধরি। ১৯৯৬ সালে এ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই। আমার সঙ্গে স্থানীয় নেতাকর্মীদের যোগাযোগ রয়েছে, তারা আমাকে চান।এ বিষয়ে সাবেক ছাত্রনেতা হাসান মামুন বলেন, ‘নির্বাচনের সময় নীতি-নৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়ে এক দলের নেতা আরেক দলে অবস্থান নেয়, এটা আমি ঘৃণা করি। বিগত বছর গুলোতে দলের হয়ে আমি এ আসনে কাজ করেছি। যদি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ পাই তাহলে এ আসনে আমি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবো।তাই কেন্দ্রে আমাকে মূল্যায়ন করবে এটা আশা করি।
প্রথম সারীর এক জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সাৎক্ষাকারে গোলাম মাওলা রনি বলেন, ভোটে কিভাবে জিততে হয়, তা আমি বর্তমান সিইসি নূরুল হুদার কাছ থেকেই শিখেছি। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে, আমার নির্বাচন কৌশল ঠিক করে দিয়েছিলেন কেএম নূরুল হুদা। তিনি আমার বাসায় অন্তত ১৫ দিন বসবাস করে আমাকে নির্বাচনী কাজে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছিলেন। ক্যাম্পেইন করেছিলেন।তখন তিনি সিইসি ছিলেন না। এখন তিনি সিইসি। তবে আমার কাছে তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ক্যাপ্টেন নূরুল হুদা।
তার ভেতরে সেই ক্যাপ্টেন নূরুল হুদা বসত করলে, আমার নির্বাচনী মাঠে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নেই।আমি বিশ্বাস করি, তিনি আগের নূরুল হুদাই আছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি কোনোভাবেই বিতর্কিত হবেন না। এমন কি তার ভাগ্নের জন্যও না। কারণ, তার ভেতরে সেই ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো এখনও বিরাজমান।প্রতীক পাওয়ার পরে আনুষ্ঠানিকভাবে এলাকায় যাব। পটুয়াখালী-৩ আসনে আমার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। আমার বিশ্বাস, জনগণ ধানের শীষকে বিজয়ী করবেন।
Leave a Reply