বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৪:৫০ পূর্বাহ্ন
গোলাম মর্তুজা॥ সাংবাদিকরা যদি সাংবাদিকদের নায্য স্বার্থ দেখার ক্ষেত্রে নির্মোহ হতে না পারেন,পেশা হিসেবে সাংবাদিকতার পতন কেউ ঠেকাতে পারবে না। ধরুক একটি পত্রিকা বা সম্পাদকের বিরুদ্ধে আপনার রাগ আছে,ক্ষোভ আছে।ঘৃণাও করতে পারেন।সব স্বাধীনতা আপনার আছে।তা লেখেন, প্রকাশ করেন।
কিন্তু সেই পত্রিকা যদি একটি পেশাদারি প্রতিষ্ঠান হয়,সেই পত্রিকায় আপনার যেসব সহকর্মী কাজ করেন,তারা যদি তুলনামূলক বিচারে সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন,ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী নিয়মিত বেতন পেয়ে থাকেন,সেই পত্রিকার বিরুদ্ধে যদি অন্যায়- অনায্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়,তখন সংবাদ কর্মী হিসেবে আমাদের দায়িত্ব কি নিরব থাকা?আড়ালে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসা? না,অন্যায়-অনায্যতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা? সাংবাদিকরা যদি সাংবাদিকদের নায্য স্বার্থ দেখেন,তবে প্রতিবাদই করার কথা।আমরা কি তা করছি?কয়েকজন তা করছেন।বড় একটি অংশ নিরব।কেন নিরব?
আজকে যদি পত্রিকাটি সত্যি বড় কোনো বিপদে পড়ে যায়,ক্ষতি আসলে কার হবে?কাদের হবে?কত সাংবাদিক, কর্মকর্তা কাজ হারাবেন?তাদের ধারণ করার মত প্রতিষ্ঠান আছে বাংলাদেশে? ইটিভি বন্ধ করে দেওয়ার পরের ঘটনা তো আমাদের ভুলে যাওয়ার কথা নয়।তাহলে মোবাইল ফোন কোম্পানি, বহুজাতিক কোম্পানি যখন বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হলো,কেন তখন কথা বললাম না? সাংবাদিকদের সংগঠন, সাংবাদিক নেতারা তো সাংবাদিকদেরই স্বার্থ দেখেন,তাই তো?তা যদি হয় তো আপনারা নিরব কেন?
যে কোনো অপরাধের বিচার নায্যতার ভিত্তিতে হবে,তা নিয়ে কোনো দ্বিমত থাকা উচিত নয়।কোনটা কার অপরাধ,কে প্রকৃত অপরাধী বিচারের আগে তাও তো নায্যতার ভিত্তিতে নিরূপণ করতে হবে।গরুকে ধাক্কা দিয়ে নদীতে ফেলে গরুর রচনা লিখলে, আপনারা কী বুঝতে পারেন না? বুঝতে পারছেন না?
‘‘গত ১১ বছরে গণমাধ্যমের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে‘‘-একথা শুনছি, দেখছি।
তাই যদি হয়, সাংবাদিকদের জন্যে তো এর চেয়ে ভালো সংবাদ আর কিছু হতে পারে না।তাহলে অধিকাংশ পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেল বেতন দিতে পারছে না কেন?কেন চাকুরিচ্যুত চলছে?‘প্রসার‘ ঘটার এই সময়কালে কেন পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো রুগ্ন হয়ে গেল?সবল তালিকার শীর্ষে যারা তাদেরকে কেন রুগ্ন তালিকায় আনার চেষ্টা চলছে?
জানি,এসব প্রশ্ন আমরা করব না,করতে পারব না।সেই সাহস আমরা বিক্রি করে দিয়েছি।আমরা রাজসাংবাদিক হওয়ার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত আছি।‘প্রসার‘ প্রচারণায় আমাদেরও আছে অংশগ্রহণ।
কাপড় খুলে গেল কিনা,তা দেখার সময় নেই।
মনে পড়ছে মহাশ্বেতা দেবীর ‘চোট্টি মুন্ডা ও তার তীর’ উপন্যাসের মুন্ডা হেডম্যান পহানের সেই উক্তি:
‘‘তুই যদি ভালো গোরমেন (গভর্নমেন্ট), তবে আমাদের এত কষ্ট কেন?’’
(লেখকের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
Leave a Reply