শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫১ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল :
২০ নভেম্বর বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের (শেবামেক) ৫০ বছর পূর্তি।৫০ বছরে এসে আবাসন সংকটে ভুগছেন কলেজের শিক্ষার্থীরা।এই আবাসন সংকটের কারণে দীর্ঘ প্রায় তিন বছর ধরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের বেশকিছু ছাত্রী মরচুয়ারি ভবনে (মরদেহ সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত) বসবাস করে আসছেন।আর ভবনটির পাশেই থাকা মর্গটিতে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে।তাই মনে ভয় আর আবাসন সংকটের কষ্টকে পুঁজি করে বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরা দিনের পর দিন কাটিয়ে দিচ্ছেন কথিত ছাত্রীনিবাস খ্যাত মরচুয়ারি ভবনে।আধুনিক এ মরচুয়ারি ভবনটি উদ্বোধনের পর ৬ বছর পার করলেও কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের একাডেমিক কার্যক্রম ও মরদেহ হিমাগার করার কোনো কার্যক্রমই এখানে পরিচালতি হচ্ছে না।আর আধুনিক ওই ভবনটির সঙ্গে সরকার যে মূল্যবান মালামালা ক্রয় করেছিলেন তাও তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে লেকচার গ্যালারির একটি কক্ষে।ফলে অব্যবহারে সেগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন।কলেজ সূত্র জানা গেছে,২০১২ সালের ২৪ এপ্রিল ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের একাডেমিক কার্যক্রম ও মরদেহ সংরক্ষণের জন্য দোতলা মরচুয়ারি ভবনটির উদ্বোধন করা হয়।
শুরুর দিকে কয়েকদিন ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের ক্লাস হলেও নানান জটিলতায় তা বন্ধ হয়ে যায়।এদিকে,২০১১-১২ সেশনে কলেজে বিডিএস বা ডেন্টাল অনুষদের শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত ৫০টি আসনের অনুকূলে ভর্তি হতে শুরু করে।একই সাল থেকে এমবিবিএস কোর্সেও মেয়েদের ভর্তির সংখ্যা বাড়তে থাকে।ফলে ২/১ বছরের মাথায় বরিশাল মেডিকেল কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নির্ধারিত হোস্টেলে দেখা দেয় আবাসন সংকট।কলেজের প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা গেছে,বছর পাঁচেক আগে আবাসন সংকট প্রকট আকার ধারণ করলে ডেন্টাল অনুষদের ছাত্রীদের জন্য ক্যাম্পাসের বাইরে বাসা ভাড়া নেওয়া হয়।পাশাপাশি ডেন্টালের ছাত্ররাও ক্যাম্পাসের বাইরে উপাধ্যক্ষের বাসভবনটি হোস্টেল হিসেবে ব্যবহার করতেন,যদিও তাদের অল্প সময়ের মধ্যে স্থানান্তর করে ছাত্রবাসে নিয়ে আসা হয়েছে।এর কিছুদিন পরে আবাসন সংকটের অযুহাতে তৎকালীণ সময়ে অব্যবহৃত আধুনিক মরচুয়ারি ভবনটিতে কিছু ছাত্রীদের অনেকটা জোরপূর্বক থাকার জন্য উঠিয়ে দেওয়া হয়।যদিও কিছু ছাত্রী সেখানে না উঠে নিজ উদ্যোগে বাসা ভাড়া করে বাইরে চলে যায়। তবে অনেকেই বাধ্য হয়ে মরচুয়ারি ভবনেই থাকতে শুরু করেন।চলতি বছরে বাইরের ছাত্রীদের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে এনে ছাত্রী হোস্টেলে জায়গা দেওয়া হলেও মরচুয়ারি ভবনের মেয়েরা পানি ও আবাসন ব্যবস্থার নানান সমস্যার মধ্যেই সেখানেই থেকে যান।বর্তমানে সেখানে ৩৭ জনের মতো ছাত্রী থাকছেন,যার মধ্যে বেশিরভাগই প্রায় ৩টি বছর কাটিয়ে দিয়েছেন।সমস্যার মধ্যে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে সব সময় উদ্বিগ্ন থাকতে হয় বলে জানিয়েছেন কথিত এই হোস্টেলের নিবাসী ছাত্রীরা।তাদের মতে,মরচুয়ারি এই ভবনের সীমানায় বহিরাগত লোকদের যেমন আনাগোনা থাকে,তেমনি এটি কলেজ ও ছাত্রী হোস্টেল থেকে অনেকটা দূরে হওয়ায় বখাটেদের উৎপাত ও রাতের বেলা চুরি-ছিনতাই আতঙ্ক থাকছেই।ছাত্রী হোস্টেলের সেক্রেটারি জেবিন জাহান জানান,শুরুর দিকে এই মরচুয়ারিতে থাকতে ভয় করতো।
কারণ পাশের মর্গ ভবনেই দিনের বেলা মরদেহ কাটাছেড়া করা হয়।সন্ধ্যার পর ভবনের সামনেও কেউ দাঁড়াতে চাইতো না।তবে স্বাভাবিক হোস্টেলের মতো সুযোগ-সুবিধা না থাকলেও এখন অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে নিবাসীরা।ছাত্রীদের হোস্টেলে ফিরে যেতে বলা হলেও তারা যেতে চায়নি বলে জানিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ ডা. ভাস্কর সাহা বলেন,দিনে দিনে গোটা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে আবাসন সংকট তীব্র হচ্ছে।আর এ কারণেই কয়েকবছর আগে ওই ছাত্রীদের মরদেহ কাটা ঘরে নয় ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের দোতলা মরচুয়ারি ভবনে থাকতে বলা হয়।যেখানে আমাদের সরকারি স্টাফরা তাদের নিরাপত্তা ও সহযোগিতা দিতে নিয়োজিত রয়েছেন।তিনি বলেন,বর্তমান পরিস্থিতিতে কলেজের ছাত্রাবাস হাবিবুর রহমান ছাত্রাবাস,ছাত্রীদের পুরাতন (১ নম্বর) হোস্টেল ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।ছাত্রী হোস্টেলটি তো এক রকম বাতিল বলা যায়।তারপরও এসব হোস্টেলে ছাত্র-ছাত্রীরা থাকছেন।বর্তমানে ডেন্টাল অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা হোস্টেলের পাশাপাশি একটি ছেলেদের ও ২টি মেয়েদের হোস্টেল জরুরি প্রয়োজন রয়েছে।যা নিয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।আশাকরি দ্রুত এর নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
Leave a Reply