শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৪ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: বরিশালের আগৈলঝাড়ায় গ্রামীণ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী মার্বেল মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রামানন্দের আঁক গ্রামে প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তিতে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
মেলায় শুধু আগৈলঝাড়া উপজেলাই নয়, পার্শ্ববর্তী কোটালীপাড়া, উজিরপুর, ডাসার, মাদারীপুর, কালকিনি, গৌরনদী, বানারীপাড়া, বাকেরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন বয়সের হাজার হাজার নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।
মেলা কমিটির সভাপতি রাম কৃষ্ণ হালদার জানান, রামানন্দের আঁক গ্রামে ২৪৩ বছর আগে আউলিয়া মা সোনাই চাঁদের ৬ বছর বয়সে বিয়ে হয়। ৭ বছর বয়সে স্বামী মারা গেলে নিঃসন্তান অবস্থায় শ্বশুরবাড়িতে একটি নিমগাছের গোড়ায় শিবের আরাধনা ও পূজা-অর্চনা আরম্ভ করেন। ক্রমশ তার অলৌকিত্ব ছড়িয়ে পরলে ওই স্থানে বাৎসরিক পূজার আয়োজন করা হয়। মা সোনাই চাঁদ আউলিয়ার জীবদ্দশায় আনুমানিক ১৭৮০ সাল থেকে শুরু হয়ে অদ্যাবধি প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তির দিনে নবান্নের অয়োজনের মাধ্যমে মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তার মৃত্যুর পরে ওই বাড়িটি সোনাই আউলিয়ার বাড়ি হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করে।
প্রতিবছর এদিনটি উপলক্ষে বৈষ্ণব সেবা, নাম সংকীর্ত্তন, কবিগান শেষে সোয়ামন (৫০ কেজি) চালের গুড়ার সঙ্গে সোয়ামন আখের গুড়, ৫০ জোড়া নারকেল ও প্রয়োজনীয় কলাসহ অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে নবান্ন তৈরি করে মেলায় আসা দর্শনার্থীদের প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম আকর্ষণ পৌষ সংক্রান্তিতে বাস্তুপূজা উপলক্ষে ২৪৩ বছর ধরে এ গ্রামে মার্বেল মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
মার্বেল খেলার মূল রহস্য সম্পর্কে স্থানীয় প্রবীর বিশ্বাস বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা এ খেলার মাধ্যমে মেলার প্রচলন করেছিল, যা আজও অব্যাহত আছে। তাদের উত্তরসূরি হিসেবে আমরা সেই প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। ওই বাড়ির মেয়ে মার্বেল মেলা উপলক্ষে ঢাকা থেকে শিখা বিশ্বাস পরিবারসহ এসেছেন। শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা থেকে মার্বেল খেলার জন্য এসেছেন সৈকত বিশ্বাস, বাগধা গ্রাম থেকে নমিতা মণ্ডল পরিবারের সবাইকে নিয়ে মার্বেল মেলায় এসেছেন। তারা জানান, মেলায় এসে মার্বেল খেলতে পেরে ভালো লাগছে।
দিনটি ঘিরে রামানন্দের আঁক গ্রামে মহোৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। স্থানীয় অধিবাসীরা তাদের মেয়ে জামাইসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের এ মার্বেল মেলায় আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছে।
কোটালীপাড়া উপজেলা থেকে মেলায় আসা প্রভাষক তরুণ চন্দ্র নাথ জানান, এ এলাকার ঐতিহ্যবাহী মার্বেল খেলার কথা শুনে মেলায় এসেছি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রামানন্দের আঁক মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মার্বেল খেলা চলছে। রাস্তার ওপর, বাড়ির আঙিনা, অনাবাদী জমি, বাগানসহ সর্বত্রই মার্বেল খেলার আসর বসেছে। বিদ্যালয় মাঠে বসেছে বাঁশ-বেত শিল্প সামগ্রী, মনিহারী, খেলনা, মিষ্টি, ফলসহ বিভিন্ন ধরনের দোকান।
কোটালীপাড়া উপজেলা থেকে মেলায় আসা শেখর দাস জানান, এ এলাকার ঐতিহ্যবাহী মার্বেল খেলার কথা শুনে মেলায় এসেছি। মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানিরা। বাশাইল গ্রামের ৭ম শ্রেণির ছাত্র দিনেশ রায় ও ১০ম শ্রেণির ছাত্র শুভ সমদ্দার জানায়, সারা বছর টাকা জমিয়েছি মার্বেল খেলার জন্য। শিশু থেকে শুরু করে কিশোর, কিশোরী, তরুণ-তরুণী মেলার প্রধান আকর্ষণ মার্বেল খেলায় অংশগ্রহণ করেন।
মেলায় মার্বেল খেলার জন্য অনেকে দূরদূরান্ত থেকে যারা এসেছেন তাদের জন্য আগে থেকেই ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মার্বেল মেলাকে জনপ্রিয় করার জন্য মেলাস্থলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিসহ মাঠ সম্প্রসারণ করার জন্য সরকারের দৃষ্টি কামনা করছেন এলাকার জনগণ।
এ ব্যাপারে আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জহিরুল ইসলাম জানান, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মার্বেল মেলায় আসা দর্শনার্থীদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply