শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১৪ পূর্বাহ্ন
পিরোজপুর প্রতিনিধি:
লোহার তৈরি সেতুটি ভেঙে পড়েছে খালে।ভাঙা সেতুর সঙ্গে সুপারিগাছ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সাঁকো।এই সাঁকো দিয়ে এক বছর ধরে চলাচল করছে পাঁচ গ্রামের ১০ হাজার মানুষ।শিশুরা প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।পিরোজপুর সদর উপজেলার খানাকুনিয়ারি গ্রামের গুদিঘাটা খালের ওপর নির্মিত সেতুর চিত্র এটি।স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে,২০০১ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৩০ ফুট দৈর্ঘ্যের লোহার সেতুটি নির্মাণ করে।গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিকেলে সেতুর পূর্ব পাশের কিছু অংশ ছাড়া বাকিটুকু ভেঙে খালে পড়ে যায়।কদমতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো.দ্বীন ইসলাম হাওলাদার বলেন,গুদিঘাটা খালের সেতুর পূর্বপ্রান্তে রয়েছে খানাকুনিয়ারি ফাজিল মাদ্রাসা,খানাকুনিয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,কদমতলা জর্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে পোরগোলা,ভোরা,রাজারকাঠি,বাগমারা,পশ্চিম চর কদমতলা গ্রাম।পশ্চিম পাশের গ্রামগুলোর ১০ হাজার বাসিন্দাকে জেলা ও উপজেলা সদর,হাসপাতাল ইউনিয়ন পরিষদ ও হাটবাজারে সড়কপথে যেতে গুদিঘাটা খালের ওপর খানাকুনিয়ারি সেতু পার হতে হয়।এছাড়া ওই গ্রামগুলোর শিক্ষার্থীদের সেতুটি পার হয়ে স্কুল,কলেজ ও মাদ্রাসায় যেতে হয়।গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সরেজমিনে দেখা যায়,সেতুর ভেঙে যাওয়া অংশের সঙ্গে সুপারিগাছ ও বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরি করে এলাকাবাসী চলাচলের ব্যবস্থা করেছেন।সাঁকোর দুই পাশে হাতল থাকলেও সেটা দিয়ে চলাচল করা ঝুঁকিপূর্ণ।সাঁকোটি সরু হওয়ায় ভারসাম্য ধরে রাখা কঠিন।খানাকুনিয়ারি ফাজিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক শাহাদাৎ হোসেন বলেন,সাঁকোটি দিয়ে প্রতিদিন আশপাশের গ্রামের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী মাদ্রাসা,প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করে।এদের মধ্যে ৫ থেকে ১০ বছরের অনেক শিশু রয়েছে।প্রায়ই সাঁকো থেকে পা ফসকে শিশুরা খালে পড়ে যায়।সম্প্রতি রওশন আরা (৭) নামের এক শিশু বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার পথে সাঁকো থেকে পড়ে হাত ভেঙে ফেলে।
সোহাগ শরীফ (৫) নামের এক শিশু খালে পড়ে গেলে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে।সরেজমিনে দেখা যায়,শিশুরা দল বেঁধে সাঁকো পার হচ্ছে।শিশুরা সাঁকো পার হওয়ার সময় অভিভাবক বা স্থানীয় লোকজন তাদের পেছনে থাকে,যাতে কোনো শিশু খালে পড়ে গেলে তাকে উদ্ধার করা যায়।সাঁকো পার হয়ে মাদ্রাসা থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে কথা হয় খানাকুনিয়ারি ফাজিল মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী আমেনা খাতুনের (৮) সঙ্গে।আমেনা খাতুন বলে,এক বছর ধরে সাঁকো পার হয়ে মাদ্রাসায় যাওয়া-আসা করে সে।সাঁকো পার হতে তার ভয় করে।এ জন্য সে ধীরে ধীরে পা ফেলে সাঁকো পার হয়।পোরগোলা গ্রামের রুস্তম আলী সরদার (৫৫) বলেন,শিশুরা স্কুল ও মাদ্রাসায় যাওয়া-আসার সময় তাঁরা সেতুর কাছে থাকেন।সাবধান থাকলে বড় ধরনের ক্ষতি মোকাবিলা করা যায়।পোরগোলা গ্রামের বাসিন্দা সরোয়ার হাওলাদার বলেন,দুই বছর আগে কার্গোর ধাক্কায় সেতুটি নড়বড়ে হয়ে যায়।এরপর ভাঙা সেতুটি দিয়েই মানুষ চলাচল করত।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিকেলে হঠাৎ সেতুটি ভেঙে যায়।এক বছর ধরে সেতুটি নির্মাণের জন্য স্থানীয় লোকজন সাংসদ ও ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে বারবার ধরনা দিচ্ছেন।কয়েকবার প্রকৌশলীরা এসে সেতুর মাপজোখ করে গেছেন।কিন্তু সেতু আর হলো না।কদমতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো.হানিফ খান বলেন,সেতু ভেঙে যাওয়ার পর উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় তিনি বিষয়টি তুলেছিলেন।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল ভেঙে যাওয়া সেতুর জায়গায় নতুন একটি সেতু নির্মাণ করা হবে।ওই সিদ্ধান্তের পর ১০ মাস পার হয়ে গেলেও সেতু নির্মাণ করা হয়নি।সদর উপজেলা প্রকৌশলী নূর উস শামস বলেন,গুদিঘাটা সেতুটির জায়গায় নতুন করে গার্ডার সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।নতুন সেতুর জন্য অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না।পরে তাঁরা সেতুটি মেরামতের কথা ভেবেছিলেন।কিন্তু ব্যয় বেশি হওয়ায় সেটা করাও সম্ভব হচ্ছে না।
Leave a Reply