বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ১২:১২ পূর্বাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট ॥ বাংলাদেশের রাজস্ব ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দীর্ঘদিন ধরে সমালোচিত ও কাঙ্ক্ষিত এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে দুটি নতুন পৃথক বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ (Revenue Policy Division)’ এবং ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ (Revenue Management Division)’ নামের এই ইউনিটগুলো অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতায় থেকেও স্বতন্ত্রভাবে কাজ করবে।
সরকারের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, এই সংস্কারের লক্ষ্য হলো কর নীতিনির্ধারণ ও কর প্রশাসনকে আলাদা করে জবাবদিহিতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করা। কর আদায়, নিরীক্ষা ও পরিপালন দেখবে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ, আর নীতিমালা, কর হার নির্ধারণ ও আন্তর্জাতিক চুক্তির দায়িত্ব থাকবে রাজস্ব নীতি বিভাগের হাতে। এতে স্বার্থের সংঘাত কমবে এবং দুর্নীতির সুযোগ হ্রাস পাবে।
সরকারি ক্রয় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “এটি শুধু প্রশাসনিক রদবদল নয়—বরং একটি কৌশলগত রূপান্তর। রাজস্ব ব্যবস্থায় দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়ানোর মাধ্যমে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনাই এর মূল লক্ষ্য।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, এনবিআর দীর্ঘদিন ধরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ, করজালের আওতা বৃদ্ধি এবং কর আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমানে দেশের ট্যাক্স-টু-জিডিপি অনুপাত মাত্র ৭.৪ শতাংশ, যা এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন। বিশ্ব গড় যেখানে ১৬.৬ শতাংশ, সেখানে এই হার স্পষ্টভাবে দুর্বল কর কাঠামোর ইঙ্গিত দেয়।
এছাড়া ব্যবসায়ী মহলে এনবিআরের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্নীতি ও হয়রানির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। একই ছাতার নিচে নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব থাকায় জবাবদিহির অভাব প্রকট ছিল। এই পরিস্থিতিতে বর্তমান সরকার দুটি ইউনিট আলাদা করে কার্যকর প্রশাসনিক কাঠামো গড়ার পদক্ষেপ নিয়েছে।
সরকার বলছে, এই নতুন কাঠামোর মাধ্যমে প্রযুক্তিনির্ভর, গণমুখী ও বিনিয়োগবান্ধব কর প্রশাসন গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা যেমন বাড়বে, তেমনি রাজস্ব আহরণেও নতুন গতি আসবে।
অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, যদি এই সংস্কার সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়, তবে এটি দেশের রাজস্ব ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক কাঠামোয় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। সরকারের এই পদক্ষেপ ভবিষ্যৎমুখী, দায়িত্বশীল এবং আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতি এক বড় অঙ্গীকার।
Leave a Reply