মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন
পটুয়াখালী প্রতিনিধি॥ পটুয়াখালীতে পিটুনিতে মো. সুজন মিয়া (৩০) নামের এক জেলের মৃত্যুর ঘটনায় পায়রা বন্দর নৌপুলিশের চার সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাদের নৌপুলিশ বরিশাল অঞ্চল অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে। বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নৌপুলিশ পটুয়াখালী জোনের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আহসান হাবীব।
প্রত্যাহার হওয়া চার পুলিশ সদস্য হলেন- পায়রা বন্দর নৌপুলিশের এএসআই মো. মামুন, কনস্টেবল মো. রিয়াজ, মো. সুমন ও মো. ছাত্তার মিয়া।
এর আগে, মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কলাপাড়া উপজেলার বালিয়াতলী এলাকায় তেঁতুলিয়া নদীতে কারেন্ট জাল জব্দ করার অভিযানকালে নৌপুলিশের পিটুনিতে ওই জেলের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ জনতা নৌপুলিশের এ চার জনকে অবরুদ্ধ করে রাখে। নিহত জেলের পরিবারের অভিযোগ, নৌপুলিশের সদস্যরা সুজনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী এক জেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘চর বালিয়াতলী ঢোস এলাকা থেকে পাঁচটি জেলে নিয়ে একটি মাছ ধরার ট্রলার রাবনাবাদ নদীর উদ্দেশে রওনা দেয়। ওই ট্রলারে কারেন্ট (নিষিদ্ধ) জাল রয়েছে সন্দেহে তাদের ধাওয়া করে পায়রা বন্দরের নৌপুলিশ সদস্যদের একটি ট্রলার। ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়ার পর জেলেরা পুনরায় ঢোস এলাকায় পৌঁছে তাদের ট্রলারটি তীরে ভিড়িয়ে চার জন দৌড়ে পালিয়ে যান। সে সময় ট্রলারে থাকা সুজনকে নৌপুলিশ ধরে ফেলে এবং অনেক মারধর করে। এক পর্যায়ে ট্রলারে রাখা জালের ওপর সুজন অচেতন হয়ে পড়ে যান।’
জানা গেছে, পুলিশের পিটুনিতে জেলে নিহতের গুঞ্জন এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ মানুষ নৌপুলিশের সদস্যদের ট্রলারসহ অবরুদ্ধ করে রাখেন। অপরদিকে অচেতন সুজনকে প্রথমে স্থানীয় বাবলাতলা বাজারে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। ওই বাজারের এক পল্লি চিকিৎসক দেখে জানান, সুজন মারা গেছেন। স্বজনরা সেখান থেকে কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে কলাপাড়া হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই সুজনের মৃত্যু হয়েছে। কী কারণে মৃত্যু হয়েছে জানতে চাইলে, তারা কথা বলতে রাজি হননি।
গতকাল বালিয়াতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ বি এম হুমায়ুন কবির জানিয়েছিলেন, স্থানীয় মানুষ পুলিশ সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। কলাপাড়া ও মহিপুর থেকে ২০ থেকে ২৫ জন পুলিশ এসেছে। তাদের শান্ত করে নৌপুলিশের সদস্যদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
এদিকে নৌপুলিশের চার সদস্যকে অবরুদ্ধ করে রাখা জেলেরা বলেন, ‘অবরুদ্ধ করে রাখার পরে ধাপে ধাপে প্রায় একশর মতো পুলিশ এসেছে উদ্ধার করতে। তাদের আমরা কিছুই বলিনি। কিন্তু সুজনকে যারা পিটিয়ে হত্যা করেছে, তাদের বিচার এখানেই চেয়েছিলাম। আমরা মাছ ধরি, বাজারে বিক্রি করি চাল কিনি আর খাই। বিচারের জন্য কোর্টের (আদালতের) দুয়ারে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে তো পেটে ভাত জুটবে না। কিন্তু বড় স্যারে আইসা কইলো, সুজনরে যারা হত্যা করছে তাদের কঠোর বিচার হবে, এতে আমরা ছেড়ে দিছি (অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্যদের)।’
মঙ্গলবার পটুয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছিলেন, ‘কোনও ব্যক্তির দায় পুলিশ নেবে না। ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনের জন্য জেলা পুলিশ ও নৌপুলিশের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
Leave a Reply