সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৪ অপরাহ্ন
তানজিল জামান জয়, কলাপাড়া প্রতিনিধি॥ পটুয়াখালীর কলাপাড়ার দুর্যোগ কবলিত মানুষ, তাদের পরিবার ও গৃহপালিত প্রানীদের জীবন রক্ষা এবং মূল্যবান দ্রব্য সামগ্রী নিরাপদে সংরক্ষন কল্পে নির্মিত মুজিব কিল্লা ২৩ মে উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্বোধনকে ঘিরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রনালয় গৃহীত ’মুজিব কিল্লা নির্মান, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্প’ এলাকায় এখন বইছে আনন্দের জোয়ার। কেননা বন্যা, ঘূর্নিঝড় সহ দুর্যোগকালীন সময়ে উপকূলীয় এলাকার মানুষের দু:শ্চিন্তা লাঘব হচ্ছে মুজিব কিল্লা নির্মান প্রকল্পের বাস্তবায়নে। এতে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় আরেক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে দেশ, এমনটাই বলছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রনালয়ের অধীনস্ত স্থানীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র ।
জানা যায়, ২৩মে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কলাপাড়ার চাকামইয়া ইউনিয়নের নেওয়াপাড়া গ্রামে ২ কোটি ১ লক্ষ ৮৩ হাজার ১৭৭ টাকা ও টিয়াখালী ইউনিয়নের পূর্ব টিয়াখালী গ্রামে ২ কোটি ১ লক্ষ ২০ হাজার ৬৭৪ টাকা ব্যায়ে নির্মিত দু’টি মুজিব কিল্লা উদ্বোধন করবেন।
এছাড়া ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন ২ কোটি ২ লক্ষ ৬৭ হাজার ৯২৮ টাকা ব্যায়ে নীলগঞ্জ ইউনিয়নের তাহেরপুর ও ১ কোটি ৯৫ লক্ষ ৮ হাজার ৯৯৬ টাকা ব্যায়ে গৈয়াতলা গ্রামের দু’টি মুজিব কিল্লা নির্মান প্রকল্পের, ১ কোটি ৯৭ লক্ষ ৯১ হাজার ৭৩২ টাকা ব্যায়ে মহিপুর ইউনিয়নের সেরাজপুর, ১ কোটি ৯৫ লক্ষ ৯৭ হাজার ৬৭৮ টাকা ব্যায়ে বালিয়াতলি ইউনিয়নের ছোট বালিয়াতলি এবং ১ কোটি ৯১ লক্ষ ৬৫ হাজার ৮৯২ টাকা ব্যায়ে টিয়াখালী ইউনিয়নের পূর্ব বাদুরতলি গ্রামের মোট ৫টি মুজিব কিল্লা নির্মান প্রকল্পের।
নির্মান সম্পন্ন হওয়া এবং নির্মান প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন এসব কিল্লা ৮হাজার বর্গমিটার আয়তনের। সাধারন কৃষি জমির চেয়ে প্রায় ১১ ফুট উঁচুতে পুরনো মাটির এ কিল্লার ওপরে নির্মিত ভবনে দূর্যোগকালীন সময়ে ভবনের প্রথম ফ্লোরে ও ছাদে অন্তত: ৫০০ পরিবারের মানুষ একত্রে আশ্রয় নিতে পারবে। এই মুজিব কিল্লায় গবাদিপশুর জন্য ৫৫৮ বর্গমিটারের শেড থাকছে। থাকছে ওয়াশ রুম সুবিধা সহ সুপেয় পানির ব্যবস্থা। এছাড়া ভবনে থাকছে বিদ্যুৎ ও সোলার সিষ্টেম সুবিধা। যাতে স্বাভাবিক সময়ে এসব কিল্লা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা, খেলার মাঠ ও হাট বাজার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ৭২ সালেই স্থানীয় মানুষ এসব কিল্লা নির্মানে প্রয়োজনীয় পরিমাণ জমি দিয়েছেন। সম্প্রতি দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রান মন্ত্রনালয়ের ডিজি মোঃ আতিকুল হক, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মোঃ সাইফুল হাসান বাদল, মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মোঃ জানে আলম, পটুয়াখালী ডিসি মো: মতিউল ইসলাম চৌধুরী, কলাপাড়া ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: হুমায়ুন কবির প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
এর আগে ’৭০ সালের ভয়াল বন্যা, জলোচ্ছ্বাসে লাখো উপকূলবাসী সহ গবাদিপশু মারা যাওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স¦পরিবারে গোটা উপকূল পরিদর্শন করেন। বানভাসী ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে বিতরণ করেন ত্রাণ সামগ্রী। এরপর ’৭২ সালে তাঁর নির্দেশে নির্মিত মুজিব কিল্লা গুলো আরও আধুনিক এবং ব্যবহার উপযোগী করার উদ্দোগ নেয় শেখ হাসিনা সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় কলাপাড়ায় প্রথম ধাপে ৭টি মুজিব কিল্লা নির্মানের উদ্দোগ নেয়া হয়। তবে উপকূলীয় কলাপাড়ায় অন্তত: ২৩টি মাটির নির্মিত এমন মুজিব কিল্লা রয়েছে, যা এখন বিলীনের শঙ্কায়।
কলাপাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ুন কবির জানান, ’মুজিব কিল্লা নির্মান, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্প’ যথাযথ ভাবে প্রকল্পের নির্দেশনা অনুসারে গুনগত মান অক্ষুন্ন রেখে নির্মানে আমরা সার্বিক সহযোগীতা করে আসছি। নির্মান কাজ তদারকির জন্য একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিরলস ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই আমরা এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতো পারবো বলে আশা করছি।
প্রসংগত, সরকারী ১৯৫৭.৪৯ কোটি টাকা ব্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রান মন্ত্রনালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর দেশের ঘূর্নিঝড় প্রবন ১৬টি জেলার ৬৪টি উপজেলায় এবং বন্যা প্রবন ও নদী ভাঙ্গন ২২টি জেলার ৮৪টি উপজেলায় সর্বমোট ৫৫০টি মুজিব কিল্লা নির্মানের প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। যা জুলাই ২০১৮ থেকে ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত বাস্তবায়ন কাল নির্ধারন করা হয়েছে।
Leave a Reply