মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩২ পূর্বাহ্ন
পটুয়াখালী প্রতিনিধি॥ জীবন ও সংসার পরিচালনা করতে জীবিকার প্রয়োজন। সেই জীবিকার জন্য মানুষ বিভিন্ন পথ অবলম্বন করে কেউ চাকরি কেউবা করে দিনমজুরের কাজ। বয়সের তারতম্যে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকেন।
এ সমাজে কিছু পেশা আছে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় জীবিকা কত কষ্টের। আবার দেখা যায় যেসব পেশা বয়সের সঙ্গে খাপ খায় না সেসব পেশায়ও যেতে হয়। এমন এক ব্যতিক্রম পেশায় কাজ করছে একদল কিশোর।
কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রে নদীর পারে ছুটছে দুরন্ত গতিতে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে কোনো বয়স্ক মানুষ ঘোড়ার পিঠে চড়ে ছুটে চলছে। কাছে গিয়ে দেখা মেলে ১৪ বছরের ফোরকান নামে এক কিশোরের। যে বয়সে বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা সে বয়সে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। শুধু ফোরকানই নয় রাসেল, হাসানের মতো অনেক কিশোর রয়েছে এ পেশায়। পরিবারের অভাব-অনটনের কারণে এসব পেশায় ঝুঁকছে কিশোররা।
ফোরকান জানায়, আমরা তিন ভাই এক বোন। বাবা দিনমজুর হওয়ায় খুব কষ্টে সংসার চালাতে হয় তার। সংসারে অভাব থাকার কারণে স্কুলে যেতে পারিনি। ছোট থেকেই বাবার সঙ্গে কাজ করেছি। এর আগে বাক্সে করে পান বিক্রি করতাম কুয়াকাটার সি-বিচে। পাঁচ বছর ধরে ঘোড়ার পিঠে চড়ে পর্যটকদের ঘুরাই।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘোড়ার পিঠে করে পর্যটকদের ঘুরিয়ে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় হয়। আবার কখনো ১০০০ টাকার উপরেও হয়। এ টাকা দিয়েই বাবার সংসারে সহযোগিতা করি। ফোরকানের বাড়ি পটুয়াখালীর কুয়াকাটা এলাকায়। বাবার নাম কামাল হোসেন।
একই এলাকার কিশোর হাসানের কাছে জানতে চাইলে সে বলে, বাবার সংসারে অভাব। কুয়াকাটা এলাকায় মাছের দোকানে দিনমজুর হিসেবে কাজ করে তাতে বাবার সংসার চলে না। তাই এ পথ বেছে নিয়েছে।
লেখাপড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে হাসান ও ফোরকান বলে, অভাবের জন্য সংসার চালাতেই কষ্ট হয় এরমধ্যে আবার আমাদের লেখাপড়া করাবে কীভাবে। তাই স্কুলে যাইনি। অন্যদের মতো স্কুলে যেতে মনে চায় কিনা জানতে চাইলে তারা বলে, মনে তো চায়, ইচ্ছা আছে কিন্তু কাজ হবে কী।
স্থানীয় সাংবাদিক উত্তম কর্মকার বলেন, কুয়াকাটা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পর্যটন এলাকা। পাশাপাশি এখান থেকে সরকার প্রচুর রাজস্ব আয় করে থাকে। পাশাপাশি অনেকেই এখান থেকে ব্যবসা করে ধনী হয়েছেন। কিন্তু এখানকার পুরাতন বাসিন্দারা আজও অসহায়-গরিব রয়ে গেছে। এ কারণে এখানকার বাসিন্দাদের সন্তানরা লেখাপড়া করতে পারছে না।
Leave a Reply