রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৫৭ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ ‘আমাকে নিয়ে যান। আপনি কোথায় গেলেন? আমি আপনার কাছে কিছুই চাই না। শুধু সংসার করতে চাই।’ তীব্র শীতে বাসস্ট্যান্ডে বসে ঋতুপর্ণা নামে এক নারী মোবাইলে কান্না করে ওপাশের কাউকে বলছিলেন কথাগুলো। ঋতু পর্ণার কোলে আছে ছয় মাসের এক শিশু। পাশেই হাত দিয়ে ধরে রেখেছেন চার বছর বয়সী আরেক সন্তানকে।
জানা গেছে, বিয়ের ১০ বছর পর প্রথমবারের মতো শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বাসস্ট্যান্ডে ওই নারীকে সন্তানসহ রেখে লাপাত্তা হয়েছেন স্বামী। বারবার ফোন দিলেও তার (স্বামী) আর সংসার করা সম্ভব নয় বলে ফোন কেটে দেন। শুক্রবার সকালে এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের নান্দাইল উপজেলা সদরের পুরনো বাসস্ট্যান্ডে।
যাত্রীবাহী বাসের টিকিট মাস্টার মো. মুন্না মিয়া জানান, খুব ভোরে ওই নারী দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে আসেন। পরে দেখা যায় ওই নারী মোবাইলে কার সঙ্গে যেন উচ্চঃস্বরে কান্না করে তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আকুতি জানান।
ভুক্তভোগী ঋতুপর্ণা জানান, তিনি জামালপুর সদর উপজেলার লাহিড়িকান্দা নামক স্থানের সামছুল হকের মেয়ে। তিনি ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করতেন। সেখানেই পরিচয়ের সূত্র ধরে ১০ বছর আগে বিয়ে হয় মোশারফ হোসেন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। কয়েক বছর ঢাকায় থাকার পর বাবার বাড়িতে চলে যান ঋতুপর্ণা। স্বামী মোশারফ মাঝেমধ্যে আসতেন। তাদের সংসারে নিরব ও রূপা নামে দুটি সন্তান রয়েছে। নিরবের বয়স ছয় মাস এবং রূপার চার বছর।
সন্তান জন্ম নেয়ার পর থেকেই ভরণ-পোষণ দিতে অনীহা দেখান স্বামী। একপর্যায়ে শ্বশুরবাড়ি যেতে চাইলে বিভিন্ন টালবাহানায় এড়িয়ে যান। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দুই সন্তানের অসুস্থতার কথা বলে টাকা দাবি করলে স্বামী মোশারফ দিতে অস্বীকার করেন। পরে সন্তানসহ নিজে আত্মহত্যার হুমকি দিলে তাকে ফোনে জানান নান্দাইলে আসার জন্য।
স্বামীর কথামতো বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর নান্দাইল সদরে এসে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার সঙ্গে থাকা স্বামীর একটি জন্মনিবন্ধনের ঠিকানা ধরে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় উপজেলার শেরপুর ইউনিয়নের লংগারপার গ্রামে গিয়ে স্বামীর সন্ধান পান।
রাত যাপনের পর শুক্রবার ভোরে স্বামী তাকে নিয়ে যান নান্দাইল বাসস্ট্যান্ডে। এরপর আসছি বলে একটি বাসে উঠে চলে যান মোশারফ। বেশ কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও স্বামীর খোঁজ পাননি ঋতুপর্ণা। ফোনে বারবার চেষ্টা করে একবার সংযোগ পেলে স্বামী জানান, তার পক্ষে সংসার করা সম্ভব না। পরে সকাল ১০টার দিকে ওই নারী বাবার বাড়িতে রওনা দেন।
Leave a Reply