বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩১ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সংক্রমণ শুরুর প্রথম দিকে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু এতে জনজীবন পুরো বিধ্বস্ত হয়ে ওঠে, দেশের অর্থনীতির চাকা অনেকটা অচল হয়ে পড়ে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কিছুদিন পর সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চলাচলের ঘোষণা দেয়। প্রথমদিকে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে গণপরিবহনগুলোতে নিয়ম করে দেয়া হয় দুজনের সিটে একজন করে বসবে। অর্থাৎ দুই সিট মিলে একজন বসবে।
এর কিছুদিন পর করোনা সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসায় ১ সেপ্টেম্বর থেকে ‘যত সিট তত যাত্রী’ নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে গণপরিবহন চলাচলের অনুমোদন দেয় সরকার। এর সঙ্গে কিছু শর্তও জুড়ে দেয়া হয়। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানার সেইসব শর্ত ও নিয়মকে রীতিমত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সড়কে দাপিয়ে চলছে গণপরিবহন।
সেই শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- গণপরিবহনের যাত্রী, চালক, সুপারভাইজার, চালকের সহকারী, টিকিট বিক্রয়কারীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। বাসস্ট্যান্ডে হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত সাবান, পানি অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। আসন সংখ্যার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা যাবে না। অর্থাৎ ‘যত আসন তত যাত্রী পরিবহন’ নীতি কার্যকর হবে। বাসে দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয়া যাবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাড়ি চালাতে হবে। ট্রিপের শুরু এবং শেষে যানবাহন জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
শুরুর দিকে এইসব নিয়ম গণপরিবহনগুলো যথাযথভাবে পালন করলেও এখন আর এ নিয়ম মানছে না কেউ। এমনকি কোনো প্রকার স্বাস্থ্যবিধিও মানা হচ্ছে না।
এদিকে করোনা সংক্রমণ এখনও নিয়ন্ত্রণে না আসায় গণপরিবহন আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়াতে বড় ধরণের স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরেজমিন রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে গণপরিবহনে বিভিন্ন এলাকার উদ্দেশে যাত্রীদের বাসে উঠতে দেখা গেছে। হেলপাররা আগের মতো করেই টেনে টেনে যাত্রী তুলছেন। এ সময় কোনো পরিবহনে জীবাণুনাশক ছিটাতেও দেখা যায়নি। এমনকি বাস টার্মিনাল থেকে পরিবহনগুলো বের হওয়ার আগে জীবাণুমুক্ত করে রাখা হয়েছে কি না সেটাও চোখে পরেনি। এছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে একইচিত্র।
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করছে না- বিহঙ্গ পরিবহন, বাহন পরিবহন, সাভার পরিবহন, শিকড় পরিবহন, বিআরটিসি, ওয়েলকাম পরিবহন, নিউ ভিশন পরিবহন, ঠিকানা পরিবহন, মৌমিতা ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড, মেঘনা সুপার সার্ভিস, হিমাচলসহ বিভিন্ন পরিবহন।
কোনো কোনো পরিবহনে সব সিটে যাত্রী থাকলেও আবার দাঁড়িয়েও নেয়া হচ্ছে অনেককে। হিমাচল পরিবহনে অতিরিক্ত মানুষ নেয়ায় যাত্রীদের সঙ্গে হেলপারের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হতেও দেখা গেছে। এমনকি যাত্রীদের একটা অংশকে মাস্ক ছাড়াই চলাচল করতে দেখা যায়। একইসঙ্গে কিছু বাসের ড্রাইভার এবং হেলপারদেরও মাস্ক ছাড়া দেখা গেছে।
বাস যাত্রীদের দাবি, স্বাস্থ্যবিধি এবং নিয়মকানুন মেনে চলার জন্য প্রয়োজনীয় তদারকির ব্যবস্থা করা হোক।
এ ব্যাপারে বাস মালিকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘যখন যাত্রীর চাপ বাড়ে, তখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। ঢাকা সিটি এবং আন্তঃজেলার কিছু বাসে এই সমস্যাটা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ‘অফিস শুরু হওয়ার আগমুহূর্তে কোথাও কোথাও প্রয়োজনের বেশি যাত্রীই উঠে যাচ্ছেন। এ বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আমরা কয়েকটি বৈঠক করেছি। চিঠিপত্রও দিয়েছি। এ ব্যাপারে ডিএমপি, হাইওয়ে পুলিশও কাজ করছে।
‘আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি মনে করি, যাত্রীর চাপ থাকলে এটা নিয়ন্ত্রণ করা একটু কঠিন’ যোগ করেন খন্দকার এনায়েত উল্লাহ।
Leave a Reply