বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৩ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) সার্বক্ষণিক শারীরিক ও বাসস্থানের নিরাপত্তার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় তিন বছর আগে নির্দেশ (অনুশাসন) দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই নির্দেশ বাস্তবায়িত হয়নি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফাইল চালাচালি ও বৈঠক হয়েছে শুধু। খোঁজ নিলে এখন সংশ্লিষ্ট সবাই বলছেন বিষয়টিতে কাজ চলছে।
২০১৮ সালের ডিসি সম্মেলনের সময় কিশোরগঞ্জের ডিসি (জেলা প্রশাসক) ইউএনওদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার বিষয়টি প্রস্তাব করেছিলেন। প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মুক্ত আলোচনায় বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিদের পক্ষ থেকে ইউএনওদের নিরাপত্তার ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে ইউএনওদের সার্বক্ষণিক শারীরিক ও বাসভবনের নিরাপত্তা প্রদানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনসার সদস্যদের মাধ্যমে ইউএনওদের নিরাপত্তা বিধানের প্রস্তাব দিয়ে এসংক্রান্ত ফাইল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে আনসারের বদলে পুলিশ দিয়ে নিরাপত্তা বিধানের প্রস্তাব করা হয়। এরপর এই বিষয়ে চারটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে আন্ত মন্ত্রণালয় বৈঠকও হয়। কিন্তু পুলিশ নাকি আনসার—কাদের মাধ্যমে ইউএনওদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি।
জনপ্রশাসন চায় ইউএনওদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য একজন পুলিশ গানম্যান এবং বাসস্থানের নিরাপত্তায় পুলিশি গার্ড। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের প্রস্তাবটি হচ্ছে একজন প্লাটুন কমান্ডারসহ ১০ জন আনসার সদস্য দিয়ে নিরাপত্তা। জনপ্রশাসন বলছে, আনসার দিয়ে ইউএনওদের যথাযথ নিরাপত্তা সম্ভব নয়। এতে সায় আছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগেরও। মন্ত্রিপরিষদ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতেও পুলিশের মাধ্যমে ইউএনওদের ব্যক্তিগত ও বাসস্থানের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (রাজনৈতিক) জাহাঙ্গীর আলম গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশের মাধ্যমে ইউএনওদের নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছে। এতগুলো উপজেলায় পুলিশ দিতে গেলে পদ সৃষ্টি, আর্থিক বিষয়সহ অনেক বিষয়ের সিদ্ধান্ত আসতে হবে।’ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইউএনওদের নিরাপত্তার বিষয়ে পদক্ষেপটি ঠিক কোন পর্যায়ে আছে, সেটা রবিবার অফিসে গিয়ে ফাইল দেখে বলতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ইউএনওদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি পূরণে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে জননিরাপত্তা বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে সাবেক এসডিওরা যে মর্যাদায় ব্যক্তিগত ও বাসস্থানের নিরাপত্তা পেতেন, ইউএনওদেরও একইভাবে নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। জননিরাপত্তা বিভাগে পাঠানো চিঠিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলেছে, মাঠ প্রশাসনে ইউএনওরা প্রায় নিরাপত্তাহীন অবস্থায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। এর বাইরেও তাঁরা বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, ‘সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ইউএনওদের নিরাপত্তার বিষয়টিতে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছিল। এটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।’ প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘আমরা চাই ইউএনওদের নিরাপত্তার জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
প্রসঙ্গত, দেশে বর্তমানে উপজেলা আছে ৪৯২টি। এর মধ্যে প্রায় দেড় শর মতো উপজেলায় নারী ইউএনও দায়িত্ব পালন করছেন।
ইউএনওদের নিরাপত্তা ইস্যুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে জানতে চাইলে গতকাল রাতে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অবশ্যই বাস্তবায়ন হবে। কাজ চলছে, শিগগিরই উদ্যোগ দেখতে পাবেন। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, আগামী সপ্তাহ থেকে আনসার সদস্য মোতায়েনের মাধ্যমে ইউএনওদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেন, দিনাজপুরের ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। এমনটি যাতে আর না ঘটে এর জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।সুত্র,কালের কন্ঠ
Leave a Reply