শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৫ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক :
দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত চিকিৎসা কেন্দ্র বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) ৫০ বছরপূর্তি হতে যাচ্ছে আগামী ২০ নভেম্বর। দীর্ঘ পথচলায় হাসপাতালে অবকাঠামোগত তেমন কোনো উন্নয়ন না হলেও আধুনিক যন্ত্রাংশের সংযোজন, শয্যা সংখ্যার উন্নতি আর রোগীর চাঁপ বেড়েছে কয়েকগুণ।রোগীর তুলনায় অদ্যবর্ধি চিকিৎসক ও সেবাদানকারী কর্মীর (তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেনী) সংখ্যা বৃদ্ধি পায়নি। উল্টো যেসব পদ রয়েছে তার থেকে অনেকটাই কম জনবল দিয়ে বছরের পর বছর পার করে যাচ্ছে হাসপাতালটি। বর্তমানে প্রায় একশ’ জন চিকিৎসক সংকট রয়েছে এ হাসপাতালে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৮ সালে নির্মিত হাসপাতালটি ৩২৪ বেড থেকে পর্যায়ক্রমে ২০১৩ সালে এক হাজার বেডে উন্নীত হয়। কাগজে কলমে হাজার শয্যায় উন্নীত হলেও হাসপাতালটির তেমন কোনো অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। পাশাপাশি চিকিৎসক ও তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেনীর জনবলও সে অনুযায়ী বাড়েনি। সর্বশেষ পাঁচশ’ শয্যার অনুকূলে থাকা জনবল দিয়েই চলছে হাসপাতালের সকল কার্যক্রম।
হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, পাঁচশ’ শয্যার অনুকূলে সৃষ্ট পদ অনুযায়ী ২২৪জন চিকিৎসকের পদের মধ্যে বর্তমানে হাসপাতালে ৯৯টি পদই শূন্য রয়েছে। এরমধ্যে ডেন্টালের জুনিয়র কনস্যালটেন্টের একটি পদের মধ্যে একটি শূন্য রয়েছে। এছাড়া অর্ধেকের বেশি খালি রয়েছে রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রার ও ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট পদ। ৩৩জনের রেজিস্ট্রার পদের মধ্যে ১৮টি, ৬৬জন সহকারী রেজিস্ট্রারের পদের মধ্যে ৩৭জন ও চারটি ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট পদের মধ্যে তিনটি পদই শূন্য রয়েছে। এছাড়া ইমারজেন্সি মেডিক্যাল কর্মকর্তা (ইএমও) পদের অর্ধেকই শূন্য রয়েছে। যেখানে ১০জন চিকিৎসকের স্থলে রয়েছেন মাত্র পাঁচজন।
অপরদিকে অ্যানেসথেসিওলজিস্ট পদে চারটি, মেডিক্যাল কর্মকর্তা (বহিঃ বিভাগ, সহকারী সার্জন, রেডিওলজিস্ট, স্বতন্ত্র রক্তরোগ, রেডিওথেরাপিস্ট, ডেন্টাল সার্জন) পদে ১৯টি, মেডিক্যাল কর্মকর্তা (নবসৃষ্ট) পদে আটটি ও ইনডোর মেডিক্যাল কর্মকর্তা পদে চারটি শূন্য রয়েছে।
চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানানো হলেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সমাধান হয়নি। তাই ইন্টার্ন (শিক্ষানবিশ চিকিৎসক) নির্ভর হয়েই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবাদানের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ বাকির হোসেন বলেন, হাসপাতালে শুধু চিকিৎসক সংকট তা নয়। এক হাজার সাজ-সজ্জার অনুকূলে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদেরও সংকট রয়েছে। সম্প্রতি কর্মচারীদের যে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তা পাঁচশ’ শয্যার অনুকূলে শূন্য পদের নিয়োগ ছিলো। কর্মচারীদের ওই নিয়োগের পর হাসপাতালে কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরে এলেও রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
তাতে যেমন হাসপাতালের পরিবেশ শতভাগ পরিচ্ছন্ন ও নিয়মে রাখা সম্ভব হচ্ছে না, তেমনি চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসকেদরও হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পাঁচশ’ শয্যার অবকাঠামোতে হাজার সাজ-সজ্জার এই হাসপাতালে বর্তমানে আন্তঃবিভাগে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ৭৫০ জন রোগী থাকছে। আর বহিঃবিভাগ থেকে তিন হাজারের অধিক রোগী প্রতিদিন সেবা নিচ্ছে। হিসেব অনুযায়ী যে সেবা দেওয়ার কথা ছিলো ৪৪০জন চিকিৎসকের।
কিন্তু হাজার সাজ-সজ্জার হাসপাতালে উন্নীত হলেও তার অনুকূলে এখনও পদ সৃজন করা হয়নি। তাই পাঁচ’শ শয্যার অনুকূলে ২২৪জন চিকিৎসকই এ হাসপাতালের জন্য এখনও বরাদ্দ। ২২৪ জনের মধ্যে প্রায় একশ’ জন চিকিৎসকের পদই শূন্য রয়েছে। এ অবস্থায় চিকিৎসকরা প্রতিদিন রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন।
Leave a Reply