শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৬ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল:বরিশালে লঞ্চের ভেতর কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের ওপর নাখোশ হয়েছে দলটির হাইকমান্ড। গত শনিবারের ওই ঘটনায় বরিশালে তোলপাড় চলছে। এ বিষয়ে পুলিশ বাদী হয়ে থানায় মামলা করলেও গতকাল পর্যন্ত লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জড়িত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় মেয়র প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণা শেষে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে গত শনিবার ঢাকায় ফিরছিলেন। বরিশাল আধুনিক নৌবন্দরে অবস্থানরত সুন্দরবন-১১ লঞ্চের ভিআইপি কেবিনে তার উপস্থিতিতেই তার নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করেন।
শাহে আলম মুরাদও পুলিশের ওপর চড়াও হন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। সেখানে বরিশাল মহানগর পুলিশের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমানও আক্রান্ত হন বলে খবরে প্রকাশ। ঘটনার ব্যাপারে পুলিশ যে মামলা দায়ের করেছে, সেখানে মুরাদেরদেহরক্ষীকে প্রধান অভিযুক্ত করলেও এজাহারের কোথাও শাহে আলম মুরাদের নাম উল্লেখ করা হয়নি। ঘটনায় বরিশাল পুলিশের পাশাপাশি প্রশাসনের অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তাদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
ঘটনার ব্যাপারে বরিশাল মহানগর পুলিশ কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) মাহফুজুর রহমান জানান, শনিবার যে ঘটনা ঘটেছে তা তেমন কোনো বিষয় না। ঢাকা থেকে কতিপয় বাজে ছেলে পান তাদের সদস্যদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে। এ ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মো. আওলাদ হোসেন জানান, মামলার কোনো আসামি এখনো আটক হয়নি। তাদের আটক করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জানা যায়, গত শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় বরিশাল নৌবন্দর হয়ে ঢাকায় যাওয়ার জন্য লঞ্চঘাটে অবস্থানরত সুন্দরবন-১১ লঞ্চে ওঠে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহম্মেদ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান। এ সময় তাদের বিদায় জানাতে লঞ্চে যান বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি শফিকুল ইসলাম ও বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) মাহফুজুর রহমান। তারা লঞ্চের ভিআইপি কেবিনের লাউঞ্জে প্রবেশ করেই দেখতে পান এক মধ্য বয়সী ব্যক্তি একটি অস্ত্র হাতে নিয়ে সোফার উপর বসে আছেন।
এ সময় ডিআইজি ও পুলিশ কমিশনার তাদের নিজেদের পরিচয় দিয়ে ভিআইপি কেবিনে ভিআইপি যাত্রী ব্যতীত অতিরিক্ত লোকজনদের স্থান ত্যাগ করার অনুরোধ করেন। এ ছাড়া দুই সচিবের আগমনের কারণে নিরাপত্তার বিষয়টিও অবহিত করেন।
এ সময় পুলিশ কমিশনারের স্টাফ অফিসার সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার জাহিদুল ইসলাম সিটি নির্বাচন ও দুই সচিবের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ওই ব্যক্তিকে অস্ত্রের লাইসেন্স দেখানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু অস্ত্রধারী ওই ব্যক্তি তার অস্ত্রের লাইসেন্স না দেখাতে চাইলে পুলিশ কমিশনারের দেহরক্ষী ওই ব্যক্তিকে ভিআইপি কেবিনের লাউঞ্জ ত্যাগ করার আহ্বান জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ব্যক্তির সঙ্গে থাকা সৈকত ইমরান নামের এক ব্যক্তি কমিশনারের দেহরক্ষীর সঙ্গে তর্কে জড়ান।
একপর্যায়ে অস্ত্রধারী ব্যক্তি ও সৈকত ইমরান উত্তেজিত হয়ে তাদের সঙ্গে থাকা লোকজন নিয়ে কনস্টেবল হাসিবকে মারপিট শুরু করেন। এ সময় মারপিট থামাতে গিয়ে মারধরের শিকার হন কমিশনারের স্টাফ অফিসার জাহিদুল ইসলামও।
এ ঘটনায় রবিবার রাতে কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই নিজাম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং-৩৩/১৮। তবে, মামলাটির বিষয়ে পুলিশ আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেননি।
শনিবারের ওই ঘটনার বিষয়ে শাহে আলম মুরাদের বক্তব্য জানতে তার মোবাইল ফোনে বারবার ফোন দেয়া হয়। কিন্তু ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
Leave a Reply