বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:৩৩ পূর্বাহ্ন
এম. কে. রানা ॥ ‘করোনাঃ ফ্রন্ট লাইনের যোদ্ধাদের সুরক্ষা জরুরী’ শিরোনামে একটি কলাম লিখেছিলাম গত ১১ এপ্রিল শনিবার। সচেতনতা বা সতর্কতা যে দৃষ্টিকোন থেকেই হোক সেই লেখাটির ৪ দিনের মাথায় অর্থাৎ আজ ১৫ এপ্রিল আমরা একজন দক্ষ চিকিৎসককে হারালাম। ‘যে যায় সে ফিরে আসে না, আর যিনি হারান তিনিই বুঝেন স্বজন হারানোর বেদনা। আমরা কেবল তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা, শোক প্রকাশ ছাড়া আর কি-ই বা করতে পারি। যেমনটি আমরা করছি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মইন উদ্দিন এর ক্ষেত্রে। তিনিই বাংলাদেশের প্রথম চিকিৎসক যিনি করোনার সঙ্গে লড়াই করে হেরে গেলেন।
শুধু একজন মইন উদ্দিন-ই নয়, যথাযথ ব্যবস্থা অর্থাৎ সম্মুখ যোদ্ধাদের সুরক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি না হলে করোনার সম্মুখ যুদ্ধে আরো অনেক মইন উদ্দিনকে হারাতে হবে আমাদের। আর সেই সকল সম্মুখ যোদ্ধাদের তালিকায় রয়েছে চিকিৎসক, নার্স, পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ বিভাগের সদস্য, সাংবাদিক, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সদস্যরা। এছাড়াও ঝুঁকিতে রয়েছেন, ত্রান বিতরণ কাজে নিয়োজিত আনসার ভিডিপি’র সদস্য, সড়ক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার কাজে নিয়োজিত পরিচ্ছন্ন কর্মী এবং বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা। এদের সুরক্ষায় এখনই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ বাঞ্চনীয়। না হলে একই হৃদয় বিদারক দৃশ্য বার বার দেখতে হবে আমাদের। আর লজ্জা পাবে সবাই। যেমনটি গানের পংকিতে রয়েছে ..
মানুষ মানুষের জন্য
জীবন জীবনের জন্য
একটু সহানুভূতি কি
মানুষ পেতে পারে না ও বন্ধু।
মানুষ মানুষকে পণ্য করে,
মানুষ মানুষকে জীবিকা করে,
পুরোনো ইতিহাস ফিরে এলে
লজ্জা কি তুমি পাবে না ও বন্ধু।
চীনের উহান প্রদেশ থেকে বিশ^ব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মরণঘাতি করোনা ভাইরাসের সংক্রমন থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে বাংলাদেশ সরকার। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবী করোনা মোকাবেলায় যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। তবে পরিস্থিতি বলছে ভিন্ন কথা। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছে করোনা মোকাবেলায় আমাদের সক্ষমতা কতটুকু। যেখানে বিশে^র উন্নত রাষ্ট্রগুলো করোনা মোকাবেলায় ব্যর্থ। সেখানে আমাদের মতো দেশের জন্য তা কতটুকু সম্ভব।
সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হওয়ার পর পরই দেশের নামকরা প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকগণ তাদের স্ব স্ব চেম্বার বন্ধ করে দিয়েছেন। উপায়ন্তু না পেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল বন্ধ করে দেন। সকল প্রকার স্যোশাল মিডিয়ায় চিকিৎসকদের এহেন কর্মকা-ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে থাকেন। অবশ্য ডা. মইন উদ্দিনের মৃত্যুর পর বিষয়টি খোলসা হলো। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবে চিকিৎসকগণ এমনটা করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
জানা গেছে, সিলেটের চিকিৎসক ডা. মইন উদ্দিন যে হাসপাতালে কাজ করছিলেন সেখানে পর্যাপ্ত পিপিই ছিল না। যা তিনি সেটা তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে বন্ধুদের সাথে চ্যাটিংয়ে বলেছিলেন। করোনা ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উহানের ঘটনার দুই আড়াইমাসেও কেনো পিপিইর যথেষ্ট মজুদ করা সম্ভব হয়নি বাংলাদেশে। অথচ সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানালেন, আগে তো প্রয়োজন ছিলো না। এখন প্রয়োজন হয়েছে, এখন আনা হচ্ছে।
তবে বিশেষজ্ঞদের অভিমত, দল মত নির্বিশেষে প্রত্যেকটি নাগরিক যে যার অবস্থান থেকে যদি করোনা মোকাবেলায় কাজ করে তবে আমরা প্রাণহানী থেকে রক্ষা পেতে পারি। বিশেষ করে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে যে সকল সরকারি বেসরকারি সংস্থা সরাসরি জড়িত তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। আর প্রত্যেকটি নাগরিকের উচিত সরকারি বিধিনিষেধ মেনে চলা।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে লক ডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। সরকার ঘোষণা দিয়েছে, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া যেন কেউ রাস্তাঘাটে ঘোরাঘুরি না করে, এখানে সেখানে জটলা না পাকানো, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল। কিন্তু কে শোনে কার কথা! চায়ের স্টলে আড্ডা, রাস্তা ঘাটে অকারনে ঘোরাঘুরি চলছে তো চলছেই। গত কয়েকদিন লক ডাউনের মধ্যেও কোথাও কোথাও জনসমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে কোন কারণ ছাড়াই মানুষ ঘর থেকে রাস্তায় বেরিয়ে আসছে। মনে হয় পুলিশের সাথে লুকোচুরি খেলছে সাধারণ মানুষ। একদিকে তাড়া দিলে অন্যদিকে সমাগম বাড়ে। ঠুনকো অজুহাত দিয়ে ধোকা দিচ্ছে পুলিশকে। তাদের মনে একবারও জাগছে না, কাকে ফাঁকি দিচ্ছি আমি? আমার পরিবার, নাকি পুলিশকে?
আসুন, লুকোচুরি বাদ দিয়ে সকলে সচেতন হই, করোনামুক্ত বাংলাদেশ উপহার দেই।
Leave a Reply