শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩০ পূর্বাহ্ন
তানজিল জামান জয়, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)প্রতিনিধি।। করোনা সংক্রমন এড়াতে সারা দেশ যখন লকডাউনে তখন প্রান্তিক জেলেদের মাঝে সরকারের বিশেষ খাদ্য বরাদ্দের মাথা পিছু ৪০ কেজি ভিজিএফ চাল নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সরকার পরিষদের জন প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ দু’মাসের ৮০ কেজি চালের স্থলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাথা পিছু ৪০-৬০ কেজি চাল বিতরন করা হয়েছে। বাকী চাল ইউনিয়ন পরিষদে রেখে দেয়া হয়েছে। সোমবার ধূলাসার ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী জেলেরা মুঠো ফোনে ইউএনওকে জানিয়েছেন।
যদিও এ বিষয়ে চেয়ারম্যান গতানুগতিক ভাবেই বললেন এটি তার বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র। সংশ্লিষ্ট তদারকি কর্মকর্তা বললেন তিনি তদারকির জন্য তার একজন অফিসারকে পাঠিয়েছিলেন। আর খাদ্য গুদাম সূত্র বলছে চাল বিতরনের সময় চেয়ারম্যান-মেম্বররা পরিমানে কম দিয়ে খাদ্য গুদাম থেকে পরিমানে কম দেয়ার কথা বলে, যা সম্পূর্ন ভিত্তিহীন।
উপজেলার ধূলাসার ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড জেলে পাড়া খ্যাত চরগঙ্গামতি গ্রামের প্রান্তিক জেলেরা তাদের মাথাপিছু বরাদ্দের ৮০ কেজির স্থলে চাল পরিমানে কম পেয়েছেন। চর গঙ্গামতি এলাকার জেলে ইয়াকুব হাওলাদার প্রতিকার পেতে মুঠো ফোনে বিষয়টি কলাপাড়া ইউএনওকে জানালে তিনি কোন পদক্ষেপ নেননি বলে তার দাবী। পরিমানে চাল কম দেয়া নিয়ে মুখ খুললেও চর গঙ্গামতি জেলে পাড়ার প্রান্তিক জেলে ইব্রাহিম মুন্সী, কুদ্দুস মুসুল্লী, দেলোয়ার তালুকদার, ইউসুফ, মনির গাজী, রুবেল গাজী, বেল্লাল ফকির, রাসেল সিকদার, হাসান সিকদার তাদের নাম প্রকাশ করতে ভয় পান। তাদের বক্তব্য, তারা এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে চেয়ারম্যান তাদের কার্ড বাতিল করে দিতে পারে। এমনকি মারধর সহ হামলার শিকার হতে পারেন তারা।
জেলে ইব্রাহিম মুন্সী’র স্ত্রী আয়শা বলেন, ’আমাদের কথা বললে চেয়ারম্যান তার লোকজন নিয়ে বাড়ী এসে মারধর করতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন ভাবে তার লোকজন দিয়ে হয়রানী করতে পারে।’
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মনোজ কুমার সাহা জানান, কলাপাড়া উপজেলার ১২ ইউনিয়ন ও দু’টি পৌরসভায় মোট তালিকাভুক্ত জেলের সংখ্যা ১৮,৩০৫ জন। এরমধ্যে ৯,১৪৩ জন প্রান্তিক জেলে সরকারের বিশেষ ভিজিএফ সুবিধা প্রাপ্ত জেলে। জাটকা নিধন বন্ধে উৎসাহিত করতে এসব প্রান্তিক জেলেদের পরিবারের জন্য প্রনোদনা হিসেবে ইলিশ প্রজনন মৌসুমে সরকার খাদ্য সহায়তা হিসেবে মাথা পিছু ৪০ কেজি করে চাল বিতরন করছে। বর্তমানে ফেব্রƒয়ারী, মার্চ দু’মাসে মাথা পিছু ৮০ কেজি করে চাল পাবে সুবিধাভোগী জেলেরা। এর কম দেয়ার কোন সুযোগ নেই।
মনোজ কুমার আরও জানান, বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন জেলেদের চাল বিতরন শেষ করেছে। কয়েকটি ইউনিয়ন আংশিক বিতরন সম্পন্ন করেছে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রন কর্মকর্তা বিএম শফিকুল ইসলাম জানান, কলাপাড়া পৌরসভা, বালিয়াতলি, মিঠাগঞ্জ, মহিপুর, ধূলাসার ও ডালবুগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গুদাম থেকে জেলেদের সম্পূর্ন চাল গ্রহন করেছে। চম্পাপুর ও কুয়াকাটা পৌরসভা তাদের বরাদ্দের অধিকাংশ চাল গ্রহন করেছে।
তবে করোনা লকডাউনের কথা বলে চাকামইয়া, টিয়াখালী, লতাচাপলি ও নীলগঞ্জ ইউনিয়ন তাদের স্বস্ব ইউনিয়নের জেলেদের বরাদ্দকৃত বিশেষ ভিজিএফ’র চাল অদ্যদিনও গ্রহন করেননি। খাদ্যগুদাম থেকে বরাদ্দকৃত চাল সঠিক পরিমানে সরবরাহের কথা বলেন তিনি। সহকারী উপ-খাদ্য পরিদর্শক জাকির হোসেন বলেন, ’চাল বিতরন নিয়ে যখনই কোন অভিযোগ ওঠে। চেয়ারম্যান-মেম্বররা খাদ্য গুদাম থেকে চাল কম সরবরাহের কথা বলেন, যা সঠিক না।’
ধূলাসার ইউপি চেয়ারম্যান আ: জলিল মাষ্টার বলেন, তদারকি কর্মকর্তার উপস্থিতিতেই চাল বিতরন করা হয়েছে। পরিমানে কম দেয়া হয়নি। এটা আমার বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র।
সংশ্লিষ্ট তদারকি কর্মকর্তা উপজেলা বিআরডিবি কর্মকর্তা ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ’আমি আমার শিশু সন্তান অসুস্থ থাকার কারনে যেতে পারিনি।
পরিবর্তে আমার একজন অফিসারকে তদারকির জন্য পাঠিয়েছি।’ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন,’ আমাকে ধূলাসারের বিষয়টি একজন জেলে মুঠো ফোনে জানিয়েছে। এছাড়া চম্পাপুর ইউনিয়ন থেকেও অনুরুপ অভিযোগ পেয়েছি। দু’টো ইউনিয়নের বিষয়েই সংশ্লিষ্ট ট্যাগ অফিসারদের জবাব দিহিতার মধ্যে নিয়ে আসা হবে।
এরপর তদন্ত সাপেক্ষে অনিয়মের সাথে জড়িত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
Leave a Reply