করোনার চাইতেও ভয়ংকর গুজব ভাইরাস Latest Update News of Bangladesh

রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫:০৪ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] অথবা [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩
সংবাদ শিরোনাম:
ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ আঘাত হানতে পারে যেদিন কলাপাড়ায় সহকারী প্রধান শিক্ষককে ব্যতিক্রমী বিদায়ী সংবর্ধনা মহিপুর থানা আওয়ামী লীগের নিজস্ব কার্যালয় উদ্বোধন শেবাচিমের সংকট কাটিয়ে উঠতে কাজ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ: সচিব বরিশালে ‘নো হেলমেট, নো ফুয়েল’ কার্যক্রম উদ্বোধন অচিরেই বরিশালে বসবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আসর: পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিক জীবন কৃষ্ণ মন্ডল’র পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন প্রতিমন্ত্রী আমার সব শক্তি-সাহস মা-বাবার কাছ থেকে পেয়েছি: প্রধানমন্ত্রী মাছ শিকার করতে গিয়ে শিক্ষার্থীর শ্বাসনালীতে ঢুকে পড়ল ৬ ইঞ্চির বাইন কলাপাড়ায় অর্ধশতাধিক অসহায় মানুষ পেল প্রধানমন্ত্রীর অর্থ সহায়তা




করোনার চাইতেও ভয়ংকর গুজব ভাইরাস

করোনার চাইতেও ভয়ংকর গুজব ভাইরাস




মো. তরিকুল ইসলাম।।
প্রথম ও দ্বতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এবার করোনা ভাইরাস বা কোভিড ১৯ এর সংক্রমনে তৃতীয়বারের মতো আতঙ্কিত পুরো বিশ্ব। ইতমধ্যে ছড়িয়েছে ১৯৫ টি দেশে । কোন কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না করোনা ভাইরাসের প্রকোপ । একের পর এক মৃত্যুর মিছিলে পুরো বিশ্ব । এরই মধ্যে বাংলাদেশেও এসেছে করোনা ভাইরাসের থাবা। সময়ের সাথে সাথে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। তার চেয়েও বেশি হারে বেড়ে চলেছে এই ভাইরাস নিয়ে গুজব এবং আতঙ্ক। এ নিয়ে নেট দুনিয়ায় চলছে গুজবের সয়লাভ।
করোনা ভাইরাসের চেয়ে মানুষ এখন গুজব ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত। কিছু না বুঝে অনেকেই গুজবের কারনে পড়েন ভংয়কর দুশ্চিন্তায়। ঘটিয়ে ফেলেন প্রাননাশের মতো কর্মকান্ড।

মানুষের‌ কাছে যখন কোন ঘটনা খুবই গুরুত্বপূর্ন হয়ে যায় । যদি উক্ত ঘটনার সুস্পষ্ট বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা না পাওয়া যায় এবং এসব নিয়ে মানুষ যখন আতঙ্কিত, ভীত ও দুশ্চিন্তায় থাকে, তখনই যেকোনো গুজব দ্রুত ছড়াতে সক্ষম হয়। কারণ, এই সময় মানুষের মন বাছবিচার না করে যেকোনো কিছু সহজেই বিশ্বাস করার জন্য উদ্‌গ্রীব থাকে । ঠিক এমন সুযোগই কাজে লাগান গুজব সৃষ্টিকারী একটি মহল।

এরই মধ্যে করোনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে শত শত গুজব যার সাথে বাস্তবের কোন মিল নেই। যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহারে সচেতন তারা গুজব থেকে একটু রেহাই পেলেও এর একটা বড় প্রভাব পরছে সাধারন মানুষের উপর । যারা শুধু মুখে শুনেই এসব গুজব বিশ্বাস করছেন। বাস্তবে তারা যেটা শুনছেন সেটার সত্যতা যাচাই করার প্রয়োজনটুকু মনে করছেন না। গুজবের ক্ষেত্রে অনেক সময় ধর্মীয় অনুভূতিকেও পুরোপুরি কাজে লাগাচ্ছেন গুজব সৃষ্টিকারীরা।

স্বপ্নে দেখে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কার। থানকুনি পাতা , আম গাছের মধু, তিল খেলে করোনা ভাইরাস হবে না। কেউ আবার মাহফিলে বলে বেড়াচ্ছে করোনা ভাইরাসের সাথে প্রতিদিন ২ ঘন্টা করে মিটিং হয়। তাই তিনি নাকি করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারের ফরমুলা জানেন। কেউ আবার রাস্তার পাশে বিক্রি করছেন করোনা ভাইরাসের টিকা ।

রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যও অনেকে আবার ছড়াচ্ছেন বিভিন্ন রকমের গুজব। হাসপাতালে নাকি অনেক মানুষ মরে পরে আছে অথচ বাংলাদেশ সরকার নাকি সেসব তথ্য গোপন রাখছেন। কেউ আবার ইচ্ছে মতো মানুষের নাম উল্লেখ করে করোনা হয়েছে বলে উল্লেখিত বেক্তি সহ আশে পাশে মানুষের মধ্য ছড়াচ্ছেন আতঙ্ক ।

ফ্রিজে মাছ-মাংস রাখলে নাকি সেনাবাহিনী এসে ফ্রিজ ভেঙ্গে ফেলে এমন গুজবে গ্রামের অনেকেই ফ্রিজের সব মাছ মাংস রান্না করে খেয়ে ফেলেছেন। সংবাদ পত্রের মাধ্যমেও নাকি করোনা ভাইরাস ছড়ায় এমন গুজবে অনেকেই সংবাদ পত্র কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন । এছাড়াও করোনা নিয়ে রয়েছে নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য।
করোনা হলে কি করবেন আর কি করবেন না তা নিয়ে শত শত গুজব ফেইজবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে চলে যাচ্ছে লাখ লাখ মানুষের কাছে। যদিও এসব গুজব প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট তৎপর রয়েছে।

ইতমধ্যেই গুজব এবং এর প্রতিরোধ নিয়ে উদ্ব্যেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। করোনা নিয়ে কোনটা ভুল আর কোন সঠিক তা পরিষ্কার করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কিছু তথ্য জানিয়েছেন সেসব মিথ বনাম বাস্তব নিচে তুলে ধরা হলোঃ
* মিথঃ হ্যান্ড ড্রায়ার দিয়ে হাত শুকালে
করোনা ভাইরাস মরে যায়।
বাস্তবঃ হ্যান্ড ড্রায়ার দিয়ে হাত শুকালে
করোনা ভাইরাস মরে না। সংক্রমন
ঠেকাতে প্রয়োজন সাবান, স্যানিটাইজার ।
* মিথঃ আল্ট্রা ভায়োলেট আলোতে করোনা
ভাইরাস মরে যায়।
বাস্তবঃ এই আলোতে করোনা ভাইরাস
মরে না। এই আলোর নিচে হাত রাখলে
জ্বালা বা সংক্রমন হতে পারে।
* মিথঃ থার্মাল স্ক্যানারে করোনা ভাইরাস
শনাক্ত করা যায়।
বাস্তবঃ এটি দিয়ে করোনা ভাইরাস শনাক্ত
করা যায় না। শরীরের তাপমাত্রা নির্নয়
করা হয়।
* মিথঃ অ্যালকোহল বা ক্লোরিন মাখলে
‌‌ করোনা ভাইরাস মারা যায় ।
বাস্তবঃ এতে করোনা ভাইরাস মরে না।
বরং এসব রাসায়নিক ত্বকের চরম ক্ষতি
করে
* মিথঃ পোষ্য থেকে করোনা ভাইরাস
ছড়াতে পারে।
বাস্তবঃ পোষ্য থেকে করোনা ভাইরাস
ছড়ানোর প্রমান নেই। তবে পোষ্য ধরার
পর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলা উচিৎ
* মিথঃ নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন করোনা
ভাইরাস রুখতে পারে।
বাস্তবঃ নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন করোনা
ভাইরাস রুখতে পারে না। বাজারে এখন
পর্যন্ত এই ভাইরাসের কোন প্রতিষেধক
নেই।
* মিথঃ নুন পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করলে করোনা ভাইরাস জব্দ হয়।
বাস্তবঃ বৈজ্ঞানিকভাবে এর কোন প্রমান নেই । নুন পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করলে সর্দি কাশির ক্ষেত্রে কিছুটা উপকার হতে পারে।
* মিথঃ রসুন খেলে করোনা ভাইরাস দূরে থাকে ।
বাস্তবঃ রসুন খেলে করোনা ভাইরাস দূরে থাকবে এর কোন প্রমান নেই । যদিও রসুন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
* মিথঃ তিলের তেল মাখলে করোনা ভাইরাস দূরে থাকে ।
বাস্তবঃ তিলের তেল করোনা ভাইরাস ঠেকায় না। ৭৫% ইথানল,পেরাসেটিক অ্যাসিড, ক্লোরোফর্ম করোনা ভাইরাস মারতে পারে। তবে এসব জিনিস গায়ে মাখলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
* মিথঃ করোনায় শুধু বয়স্করা আক্রান্ত হয়।
বাস্তবঃ যে কোন বয়সের মানুষই করোনায়
আক্রান্ত হতে পারে
* মিথঃ অ্যান্টিবায়োটিকে করোনা ভাইরাস
থামবে।
বাস্তবঃ WHO এর তথ্য অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক শুধু ব্যাকটেরিয়া মারতে পারে। ভাইরাসের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক অচল।

এসব গুজব ও আতঙ্ক থেকে আমাদের বাঁচার উপায় কি??
গুজব ও আতঙ্ক থেকে বাঁচার জন্য প্রয়োজন মানসিকভাবে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর আলাদাভাবে নজর দেওয়া। আপনার মানসিক স্বাস্থ্য যত ভালো থাকবে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তত বৃদ্ধি পাবে এবং আপনার মন খারাপ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরো বেশি তৎপর হবে । চিকিৎসাবিজ্ঞান তা-ই বলে।

করোনাভাইরাস–সম্পর্কিত সঠিক ও পর্যাপ্ত তথ্য মানুষের কাছে না পৌঁছালে বিভিন্ন ধরনের গুজব সৃষ্টি হবে এবং মানুষ অধিক হারে তাতে আক্রান্ত হবে। তাই আমাদের ভয়, উদ্বেগ, মানসিক চাপ ও আতঙ্ককে মানসিকভাবে সামাল দিতে হবে। অন্যদিকে অনলাইন ও অফলাইনে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা হাজার হাজার তথ্য থেকে নির্ভরযোগ্য তথ্যগুলো বাছাই করতে হবে। সব ধরনের তথ্যে প্রভাবিত হওয়া যাবে না।
আমাদের পরিবারের বৃদ্ধ, শিশুদের করোনা সম্পর্কে যাথেষ্ট বৈজ্ঞানিক তথ্য জানাতে হবে।
আমাদের ইতিবাচক মানসিকতা তৈরির চর্চা করতে হবে।
লেখকঃ মো. তরিকুল ইসলাম।

শিক্ষার্থীঃ গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD