সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৩ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে ৩রা ফেব্রুয়ারি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে শুরু হচ্ছে ফুটবল টুর্নামেন্ট। সেই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে খেলার মাঠের আশপাশের জঙ্গল আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল ইন্সটেক্টর।
এতেই চটেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ জঙ্গল পরিস্কারের নামে ক্যাম্পস সবুজায়নের জন্য লাগানা বিভিন্ন প্রজাতির গাছ পুড়িয়ে দিয়েছেন ওই শিক্ষক। এ কারনে ক্যাম্পাস সবুজায়ন পরিকল্পনায় বাঁধা সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি তাদের।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা সমালচনার ঝড় তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা গাছ পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদের পাশাপাশি অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচারও দাবি জানিয়েছেন কমেন্টস এর মাধ্যমে।
যদিও শিক্ষকের দাবি ভিন্নটা। ফিজিক্যাল ইন্সটেক্টর নরুল ইসলামের অভিযোগ কতিপয় শিক্ষার্থী নিজেদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে জঙ্গল পরিস্কারের আগুনের বিষয়টিকে ইস্যু করে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ‘ক্যাম্পাস সবুজায়নের লক্ষ্যে গত দুই বছর পূর্বে মুক্তমঞ্চের আসপাশে বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন এবং সাধারন শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছিলো। যা পরিচার্জা করে আসছিলো শিক্ষার্থীরাই।
কিন্তু হঠাৎ করেই গত ১ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকাল ১১টার দিকে মাঠের বাইরে জঙ্গল পরিস্কারের নামে সবুজায়নের জন্য লাগানো বেশ কিছু গাছ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মেড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল ইন্সটেক্টর নুরুল ইসলাম। এ ক্ষেত্রে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি গ্রহনেরও প্রয়োজন মনে করেননি।
যে বিষয়টি সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। এমনকি বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করা একটি ভিডিও ক্লিপ নিয়ে ফেসবুক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা-সমালচনার ঝড় বইছে।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ‘ফিজিক্যাল ইন্সটেক্টর নুরুল ইসলাম স্বীকার করছেন নিজ দায়িত্বে কারোর আদেশ ছাড়াই গাছে আগুন দিয়েছেন। ওই ভিডিওতে তাকে বদলতে শোনা গেছে ‘৫০ হাজার, এক লাখ টাকা আমার কাছে কোন সমস্যাই নয়, দরকার হলে আবার গাছ লাগিয়ে দিব।
ঘাসে আগুন দিয়ে গাছ পোড়ানোর ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের পাল্টা উত্তরে ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর নুরুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তোমাদের কিন্তু সমস্যা হয়ে যাবে ! বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আছে, তারা এই ব্যাপারে দেখবে। তোমরা কারা ? তোমাদের কাছে জবাব দিতে আমি বাধ্য নই।
এদিকে মাঠের ঘাস এবং আগাছা পরিস্কারের দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী এস্টেট অফিসার মো. সাইদুজ্জামান বলেন, ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর নুরুল ইসলাম জঙ্গল বা গাছ পোড়ানোর বিষয়ে আমাকে কিছু জানাননি। তিনি নিজ উদ্যোগেই কাজটি করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে এস্টেট শাখা সূত্রে জানাগেছে, ‘মালীর জন্য ৮ কর্মচারী থাকলেও এস্টেট অফিসারের দপ্তরে কর্মরত আছেন মাত্র ৩ জন। বাকি ৫ জনের ২ জন উপাচার্যের দপ্তরে, ২ জন সিকিউরিটি শাখায় ও ১ জন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে কর্মরত। যারা এস্টেট শাখায় কাজ করছেন তারাও নিয়মিত দায়িত্ব ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুহৃদ সমাবেশের সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম বলে, “গত দু’বছর ধরে সমকাল সুহৃদ সমাবেশ, ববি শাখার উদ্যোগে এই স্থানকে কেন্দ্র করে বকুলতলা করার লক্ষ্যে নিয়মিত গাছ রোপন ও পরিচর্যা করে আসছিলাম।
কিন্তু আমাদের দুই বছরের পরিশ্রমকে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি যতগাছ পোড়ানো হয়েছে অতিসত্বর তার দ্বিগুন গাছ যেন লাগানো হয় ও দোষীকে শাস্তির আওতায় আনারও জোর দাবি জানান এই সংগঠক।
তবে শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগ ভিত্তিন দাবি করার পাশাপাশি ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল ইন্সটেক্টর নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কোন গাছ পোড়ানো হয়নি। শুধুমাত্র জঙ্গল পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। তারও যৌক্তিক কারণ রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ৩রা ফেব্রুয়ারি খেলার মাঠে ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু হবে। খেলার সময় মাঠের বাইরে জঙ্গলে গিয়ে বল পড়ে। কিন্তু ওই জঙ্গলে বিষাক্ত সাপ রয়েছে। শনিবার ওই স্থানে জঙ্গল পরিস্কার করতে গিয়ে কর্মচারীরা একটি বিষধর সাপ দেখতে পায়।
সাপটি তাড়ানোর অন্য কোন উপায় না পেয়ে জঙ্গলে আগুন দেয়া হয়েছে। এটার প্রয়োজনও ছিল। এতে আশপাশে থাকা সবুজায়নের জন্য লাগানো কোন পোড়েনি। তবে আশে পাশে থাকা কিছু গাছে আগুনের তাপ লাগতে পারে। এতে গাছ মড়ে যাবে না। কিন্তু কিছু উৎশৃঙ্খল শিক্ষার্থী বিষয়টিকে নিয়ে অতি বাড়াবাড়ি করছে।
তিনি বলেন, ‘সামান্য বিষয় বিধায় বিষয়টি সম্পর্কে উপাচার্যের অনুমতি নেয়া হয়নি। তাছাড়া আমি যেটা করেছি সেটাতে আমার ব্যক্তিগত কোন লাভ হবে না। যা করেছি সেটা শিক্ষার্থীদের ভালর জন্যই করেছি। অথচ উৎশৃঙ্খল ওই শিক্ষার্থীরা এমন আচরণ করছে, যাতে মনে হচ্ছে তারা চাঁদা চাইছে। এটা না পেয়েই এখন সাংবাদিকদের কাছেও ভুল অভিযোগ করেছে বলে দাবি ফিজিক্যাল ইন্সটেক্টর নুরুল ইসলামের।
Leave a Reply