মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪০ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক॥ পূজার যৌক্তিকতা বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সিটি নির্বাচন পেছাতে চিঠি দিল খোদ রিটার্নিং কর্মকর্তা। আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করার তফসিল দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ভোটের আর ১৮দিন বাকি। এ অবস্থায় চিঠিটি নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবকে পাঠিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন।
এতে বলা হয়েছে- ‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখের ১৭.০০.০০০০.৩৪.৩৭.০০৯.১৯-৪৮৪ নং প্রজ্ঞাপনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ০১-২৫ নম্বর ওয়ার্ড এবং সাধারণ আসনের কাউন্সিলর ০১.৭৫ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩০ জানুয়ারি ২০২০ তারিখ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু আগামী ৩০/০১/২০২০ তারিখে সনাতন ধর্মালম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব বিদ্যার দেবী শ্রীশ্রী সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত পূজা লগ্ন বা তিথির মধ্যে সম্পন্ন করতে হয় বিধায় পূজার তারিখ পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।’
‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এর অধিভুক্ত এলাকাসমূহে বাপক সংখ্যক সনাতন ধর্মালম্বী লোকের বসবাস। এখানে সনাতন ধর্মালীদের সর্ববৃহৎ পূজামণ্ডপ রামকৃষ্ণ মিশন অবস্থিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলও ওই এলাকাতে অবস্থিত। রামকৃষ্ণ মিশন ও জগন্নাথ হলের ওই এলাকার আশেপাশের অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে পূজা উপলক্ষে প্রচুর সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকের সমাগম ঘটে। এছাড়া নির্বাচন উপলক্ষে যেসব প্রতিষ্ঠান ভোটকেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে তাদের মধ্যে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। যেহেতু পুরাতন ঢাকা একটি ঘনজনবসতি সংকীর্ণ এলাকা বিধায় ওই এলাকার সনাতন ধর্মালম্বীদের এসব প্রতিষ্ঠান ছাড়া পূজা পালন করা অনেকাংশেই সম্ভপর হবে না।’
‘এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) জগন্নাথ হল শাখা নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের জন্য একটি চিঠি এই কার্যালয়ে দাখিল করেছে। সার্বিক বিবেচনায় সনাতন ধর্মালনীদের ধর্মীয় কাজ সুচারুরূপে পালন করার স্বার্থে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করার সুপারিশের যৌক্তিকতা বিবেচনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্ত আবেদন পত্রটি এতদসংগে মহোদয়ের নিকট প্রেরণ করা হলো।
রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন তার সুপারিশের সঙ্গে ঢাবির জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা’র আবেদনপত্রটিও জুড়ে দিয়েছেন।
এই আবেদনের ভিত্তিতেই নির্বাচন পেছানোর জন্য ১০ জানুয়ারি পত্রযোগে নির্বাচন কমিশনকে সুপারিশ করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন। যার অনুলিপি তিনি ঢাকা মেট্রোপলিট্রন পুলিশ কমিশনার, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার যুগ্ম সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের পাঠিয়েছেন।
এর আগে সরস্বতি পূজার কারণে নির্বাচন পেছানোর জন্য দু’দফা আবেদন করেছে বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। এছাড়া নির্বাচন পেছানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী এবং নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়েছে শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ বাংলাদেশ। একই কারণে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদনও করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ।
সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন পেছানোর বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে নির্বাচন কমিশন।
তবে নির্বাচন কমিশন মো. আলমগীর এ বিষয়ে বলেছেন, ভোটের তারিখ নির্ধারনের আগে পূজার বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় এসেছে। কারণ কমিশন যখন কোনো সিডিউল ঘোষণা করে তখন কমিশনের সামনে সব তথ্য উপাত্ত দেয়া হয়। অনুমোদিত সরকারি ক্যালেন্ডারও দেয়া হয়। সেই ক্যালেন্ডারে আমরা দেখেছি যে ওখানে সরস্বতি পূজার তারিখ দেয়া আছে ২৯ জানুয়ারি। সেটা দেখেই ২৯ তারিখ নির্বাচন না দিয়ে ৩০ তারিখ দেয়া হয়েছে।
Leave a Reply