মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৬ অপরাহ্ন
পটুয়াখালী সংবাদদাতা॥ পটুয়াখালীতে পরিত্যক্ত এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সংস্কারের নামে সরকারি বরাদ্দ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কতিপয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে তথ্যের জন্য একাধিকবার ধরনা ধরলেও তারা তথ্য দেয়ার নামে নানা টালবাহানা শুরু করেছে।
অবৈধভাবে অর্থ লোপাটের এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে প্রভাবশালী কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে উঠেপড়ে লেগেছে। অভিযোগ ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এপিপি বরাদ্দকৃত খাতে পটুয়াখালী জেলা কারাগারে কয়েদি এবং মহিলা কয়েদি ভবন সংস্কার করে ঠিাকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চুক্তি অনুযায়ী বিল পরিশোধ করে গণপূর্ত বিভাগ। যে কাজের মেয়াদ এখনও চলমান এবং চূরান্ত বিল পরিশোধ করা হয়নি।
ওই কাজের মেয়াদ শেষ না হতেই পটুয়াখালী গণপূর্ত বিভাগ পটুয়াখালী জেলা কারাগারে কয়েদি এবং হাজতিখানা মেরামতের অনুকূলে আরও দুইট দরপত্র তৈরি করে ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ এনে তাদের পছন্দের ঠিকাদারকে নিয়োগ দেয়। তৎকালীন সময়ে এ দুটি ভবনের মধ্য হাজতিখানা ভবনের ছাদ ধসে হাজতিরা আহত হলে ডিসি ড. মাছুমুর রহমান ওই ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। কিন্তু গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, উপসহকারী প্রকৌশলী এবং কতিপয় কর্মচারীরা অর্থ লোপাট করার উদ্দেশ্যে পরিত্যক্ত ভবন সংস্কারের নামে প্রকল্প তৈরি করে গোপনে তাদের পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে কাজ করতে পাঠালে বর্তমান জেল সুপার মজিবুর রহমান সঠিক যুক্তি তুলে ধরে কাজে বাধা প্রদান করেন।
পরে ১৯ মার্চ মাসিক উন্নয়ন সভায় জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলামের সঙ্গে জেলা সুপারের উন্মুক্ত আলোচনায় বেড়িয়ে পরে বরাদ্দ লোপাটের বিষয়টি। ওই আলোচনার একপর্যায় ডিসিকে জেল সুপার বলেন, পরিত্যক্ত এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে কাজ করে অর্থ অপচয় করার কী দরকার। তার মধ্য একটি ভবনে চলতি বছরে কাজ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পটুয়াখালী গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ইউছুফ হাওলাদার জানান, এর আগে মাত্র তিন লাখ টাকার কাজ হয়েছে কয়েদি ভবনে।
এদিকে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের দক্ষিণ গেটে একটি নার্সিং ভবন দীর্ঘ দিন ধরে পরিত্যক্ত হলেও সেখানে সংস্কারের নামে বরাদ্দ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। পটুয়াখালী জেনালের হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ওই ভবনটি বসবাসের অযোগ্য হওয়ার ফলে সেখানে দীর্ঘদিন থেকে কোনো লোক থাকে না। কিন্তু চলতি বছর ১৩৮ খাতে বরাদ্দ এনে সেখানে সংস্কার করা হচ্ছে। এর নেপথ্যে রয়েছে অর্থ লোপাটের পাঁয়তারা। সরেজমিন দেখা গেছে, জরাজীর্ণ ওই ভবনে গণপূর্ত বিভাগের পছন্দের কয়েকজন ঠিকাদার কাজ করছেন। কিন্তু ভবনটির অবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
চলতি বছর সাধারণ মেরামত খাতে ৮ লাখ এবং বৈদ্যুতিক খাতে ২ লাখ বরাদ্দ নিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। যা সরকারের টাকার অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। এ প্রসঙ্গে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সাইদুজ্জামান জানান, যেখানে পটুয়াখালী স্বাস্থ্যখাতে সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ চলছে সেখানে একটি পুরোন ভবন মেরামত করার প্রশ্নই ওঠে না। ওই কাজের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। পটুয়াখালী গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী তৈয়বুর রহমান জানান, মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসের জন্য আগের তত্ত্বাবধায়ক মেরামতের জন্য বলছে, তাই মেরামত করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন অর রশিদের একাধিকবার যোগযোগ করা হলে তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ মঙ্গলবার তার ফোনে কল দিলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে পরে যোগাযোগ করার কথা বলে লাইনটি কেটে দেয়।
Leave a Reply