রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১৯ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক:একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন জোটের হেভিওয়েট প্রার্থীদের সবাই জয়লাভ করেছেন। একটি মাত্র আসনে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অসুস্থতার কারণে প্রচারণায় অংশ না নিলেও রংপুরে নিজের আসনটিতে বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ। বড় ব্যবধানে জিতেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের হাসানুল হক ইনু ও ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা।
ভোট গণনা শেষে নির্বাচন কমিশন থেকে প্রথম পূর্ণাঙ্গ ফল ঘোষণা হয় গোপালগঞ্জ-৩ আসনের। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ আসনের ১০৮টি কেন্দ্রের মধ্যে সবক’টির ফলাফলে শেখ হাসিনা পেয়েছেন ২ লাখ ২৯ হাজার ৫২৯ ভোট। আসনটিতে মোট ভোটার ২ লাখ ৪৬ হাজার ৫১৪।
অন্যদিকে রংপুর-৩ আসনে লাঙ্গল প্রতীকে এইচএম এরশাদ ১ লাখ ৪২ হাজার ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষের প্রার্থী রিটা রহমান পেয়েছেন ৫৩ হাজার ৮৯ ভোট।
নোয়াখালী-৫ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ২ লাখ ৫২ হাজার ৭৪৪ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। ওই আসনে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ পেয়েছেন ১০ হাজার ৯৭০ ভোট।
কিশোরগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রচারণায় অনুপস্থিত থাকলেও বিপুল ব্যবধানে জয় পেয়েছেন। ওই আসনে তার নৌকা প্রতীকে ভোট পড়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ৪৭০। অন্যদিকে ধানের শীষের রেজাউল করিম খান চুন্নু পেয়েছেন ৭১ হাজার ৭৭৩ ভোট।
ভোলা-১ আসনে আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ ২ লাখ ৪২ হাজার ১৭ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন।
কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে মহাজোট সমর্থিত জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু জয়লাভ করেছেন। নৌকা প্রতীকে তিনি ২ লাখ ৮২ হাজার ৬২২ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঐক্যফ্রন্ট সমর্থিত (জাপা-জাফর) প্রার্থী আহসান হাবিব লিংকন ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৩৫ হাজার ৭৫১ ভোট। ইনুর আসনটিসহ কুষ্টিয়ার চারটি আসনেই নৌকার প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন।
জয়ের রেকর্ড গড়লেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা আটবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন তিনি।
১৯৮০ সালে গোপালগঞ্জ-২ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু পরিবারের এই সদস্য। এরপর আর কখনো ভোটে হারেননি তিনি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে তিনি দুই লাখ ৮১ হাজার ৯০৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম সিরাজ পেয়েছেন ২৮৬ ভোট।
রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ২ লাখ ৬০ হাজার ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আবদুস সালাম সুরুজ (হাতপাখা) প্রতীকে পেয়েছেন ২৫ হাজার ৪৩২ ভোট। অন্য আসনগুলোর তুলনায় এখানে ভোট প্রাপ্তিতে রেকর্ড গড়েছে হাতপাখা। এ আসনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৪২ হাজার ৯৮ জন। ভোটগ্রহণ হয়েছে এখানকার ১০৭ কেন্দ্রে।
কুষ্টিয়া-৩ আসনে মোট ভোটার ৩,৭২,৮০৫। মোট কেন্দ্র ১৩৪টি। সবকটি কেন্দ্রের বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী আওয়ামী লীগের মাহবুবুল আলম হানিফ ২,৯৬,৫৯২ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির জাকির হোসেন সরকার পেয়েছেন ১৪,৩৭৯ ভোট।
সিলেট-৬ আসনে বেসরকারিভাবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। ১৯১টি কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৯৬ হাজার ১৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত বিএনপির প্রার্থী ধানের শীষে ফয়সল আহমদ চৌধুরী পেয়েছেন ১ লাখ ৮ হাজার ৮৯ ভোট।
মাদারীপুর-২ (মাদারীপুর সদর ও রাজরৈ) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাজাহান খান (নৌকা প্রতীক) ৩ লাখ ১১ হাজার ৭৪০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিন্দ্বন্দ্বী মিল্টন বৈদ্য (ধানের শীষ) ২ হাজার ৫৯০ ভোট পেয়েছেন। এ আসনে মোট কেন্দ্র সংখ্যা ১৪১টি। জেলা রিটার্নিং অফিসার জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম এ ফলাফল ঘোষণা করেন।
বাগেরহাট-১ (চিতলমারী, মোল্লাহাট ও ফকিরহাট) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ হেলাল উদ্দীন বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন।
তিন উপজেলার এ আসনে ১১০টি কেন্দ্রে শেখ হেলাল উদ্দিন ২ লাখ ৫২ হাজার ৬৪৬ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মো. শেখ মাসুদ রানা পেয়েছেন ১১ হাজার ৪৮৫ ভোট।
ঢাকা-১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ হাসিনার উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন।
তিনি ৩ লাখ ২ হাজার ৯৯৩ ভোট পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে জয় পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম মোটরগাড়ি প্রতীক নিয়ে ৩৭ হাজার ৭৬৩ ভোট পেয়েছেন।
চাঁদপুর-৩ (সদর ও হাইমচর উপজেলা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. দীপু মনি নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩ লাখ ৪ হাজার ৮১২ ভোট। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে শেখ ফরিদ আহম্মেদ পেয়েছেন ৩৫ হাজার ৫০১ ভোট।
মুন্সিগঞ্জ-১ আসনে (শ্রীনগর-সিরাজদিখান) মহাজোটের নৌকা প্রতীক নিয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন বিকল্পধারার মাহী বি চৌধুরী।
এ আসনের মোট ১৬৭টি ভোটকেন্দ্রের সবগুলোর ভোট গণনা শেষে এ ফলাফল পাওয়া যায়। এ আসনের মোট ৪ লাখ ৪০ হাজার ৫১৬ ভোটারের মধ্যে মাহী বি চৌধুরী পেয়েছেন ২ লাখ ৮৬ হাজার ৬৮১ ভোট। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন পেয়েছেন ৪৪ হাজার ৮৮৮ ভোট।
মানিকগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মমতাজ বেগম (নৌকা) পেয়েছেন ২ লাখ ৭৮ হাজার ৮১৬ ভোট। তার নিকটতম বিএনপির প্রার্থী মইনুল ইসলাম খান শান্ত (ধানের শীষ) ৪৯ হাজার ৩১।
শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনে ফের বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী অগ্নিকন্যা মতিয়া চৌধুরী।
নৌকা প্রতীক নিয়ে মতিয়া চৌধুরী পেয়েছেন ৩ লাখ ৪৪২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ধানের শীষ প্রতীকে ফাহিম চৌধুরী পেয়েছেন ৭ হাজার ৬৫২ ভোট।
নীলফামারী-২ (সদর) আসনে আবারও বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী আসাদুজ্জামান নূর।
তিনি ভোট পেয়েছেন এক লাখ ৭৭ হাজার ৬৫৭টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকে মনিরুজ্জামান মন্টু পেয়েছেন ৭৯ হাজার ৪৮৪টি।
এছাড়া এবারের নির্বাচনে নতুন প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিলেন ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা। দেশব্যাপী তুমুল জনপ্রিয় এ ক্রিকেটার ভোটের লড়াইয়েও চমক দেখিয়েছেন। নড়াইল-২ আসনের এ প্রার্থী নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ৩৪ গুণ বেশি ভোট পেয়েছেন।
এ আসনে ১৪০টি কেন্দ্রে মাশরাফির নৌকা প্রতীকে ভোট পড়েছে ২ লাখ ৭১ হাজার ২১০টি। অন্যদিকে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৭ হাজার ৮৮৩ ভোট।
Leave a Reply