হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিলে যা লেখা ছিল Latest Update News of Bangladesh

সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০২:৪০ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] অথবা [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিলে যা লেখা ছিল

হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিলে যা লেখা ছিল




ডেস্ক রিপোর্ট : ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী দলিলে সই করে আত্মসমর্পণ করেন। যে দলিলে তিনি সই করেছিলেন তার প্রতিটি শর্তই ঠিক করেছিল বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনী। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান এসব শর্তের বেশ কিছু বিষয়ে আপত্তি করলেও তা গ্রহণ করা হয়নি।

এই আত্মসমর্পণ নিয়ে নিয়াজীর সঙ্গে আলোচনা করতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব ১৬ ডিসেম্বর সকালে ঢাকায় উপস্থিত হন।

তিনি জানান, শর্তগুলো নিয়াজীকে দেখানো হলে তিনি বেশ কিছু শর্তের ব্যাপারে আপত্তি করেন। কিন্তু জ্যাকব তাকে বলেন, তাদের বিবেচনায় শর্তগুলো যথেষ্ট উদারই।

নিয়াজী পরে আর কিছু না বললেও দাবি করতে থাকেন আত্মসমর্পণের গোপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে। কিন্তু জ্যাকব জানিয়ে দেন, অনুষ্ঠান হলে তা প্রকাশ্যেই হবে।

মনোবল ভেঙে পড়া পাকিস্তানি বাহিনীর সেনা কর্মকর্তাদের সে সময় আর কোনও ধরনের শর্তারোপের ক্ষমতাই ছিল না। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর পাঠানো দলিলেই সই করতে বাধ্য হন নিয়াজী।

তবে আত্মসমর্পণের দলিলটি যেন অসম্মানজনক না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর রাখা হয়েছিল বলে পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন জ্যাকব।

তিনি তার বই ‘সারেন্ডার অ্যাট ঢাকা’ লিখেছেন, ‘ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় যে, অনমনীয় নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ পরবর্তীতে সুফল বয়ে আনেনি। পরাজিত প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা না করাটাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অতীতে যা কিছুই ঘটুক না কেন, কিছুটা ছাড় তাদেরকে অবশ্যই দেওয়া উচিত।’

বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (সে সময়কার রেসকোর্স ময়দান) এই আত্মসমর্পণের দলিলে সই করে পাকিস্তান।

এতে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর পক্ষে সই করেন কমান্ডার-ইন-চিফ লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা, আর যুদ্ধরত পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ডের কমান্ডার লে. জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ছিলেন তখনকার বিমান বাহিনীর প্রধান ও মুক্তিবাহিনীর উপপ্রধান এয়ার কমোডর এ কে খন্দকার। ভারতের পক্ষে ছিলেন সে দেশের তখনকার পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের চিফ অব স্টাফ লে. জেনারেল জ্যাকব রাফায়েল জ্যাকব।

আর পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন পূর্বাঞ্চলীয় পাকিস্তানি নৌবাহিনীর কমান্ডার ভাইস অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শরীফ ও পূর্বাঞ্চলীয় ভারতীয় বিমান বাহিনীর এয়ার ভাইস মার্শাল প্যাট্রিক ডি কলাঘান।

আত্মসমর্পণের দলিলটি ছিল ইংরেজিতে। এর বাংলা অনুবাদটি নিচে তুলে ধরা হলো।

‘পূর্ব রণাঙ্গনে ভারতীয় ও বাংলাদেশি যৌথ বাহিনীর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে, পাকিস্তান পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানের সকল সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে আত্মসমর্পণে সম্মত হলো। পাকিস্তানের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীসহ সব আধা-সামরিক ও বেসামরিক সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেত্রে এই আত্মসমর্পণ প্রযোজ্য হবে। এই বাহিনীগুলো যে যেখানে আছে, সেখান থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কর্তৃত্বাধীন নিয়মিত সবচেয়ে নিকটস্থ সেনাদের কাছে অস্ত্রসমর্পণ ও আত্মসমর্পণ করবে। এই দলিল স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড লেফটেন্যান্ট জেনারেল অরোরার নির্দেশের অধীন হবে। নির্দেশ না মানলে, তা আত্মসমর্পণের শর্তের লঙ্ঘন বলে গণ্য হবে এবং তার প্রেক্ষিতে যুদ্ধের স্বীকৃত আইন ও রীতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আত্মসমর্পণের শর্তাবলীর অর্থ অথবা ব্যাখ্যা নিয়ে কোনও সংশয় দেখা দিলে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা আত্মসমর্পণকারী সেনাদের জেনেভা কনভেনশনের বিধি অনুযায়ী প্রাপ্য মর্যাদা ও সম্মান দেওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করছেন এবং আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তানি সামরিক ও আধা-সামরিক ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ও সুবিধার অঙ্গীকার করছেন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার অধীন বাহিনীগুলোর মাধ্যমে বিদেশি নাগরিক, সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও জন্মসূত্রে পশ্চিম পাকিস্তানি ব্যক্তিদের সুরক্ষাও দেওয়া হবে।’

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করা বাঙালি জাতি নয় মাস পর ১৬ ডিসেম্বরের সন্ধ্যায় এই দলিলে সই করার মধ্য দিয়েই অর্জন করে নিজের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD