হাতে ভাজা মুড়িতে স্বাবলম্বী দপদপিয়ার পাঁচ গ্রামের মানুষ Latest Update News of Bangladesh

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫৮ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] অথবা [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




হাতে ভাজা মুড়িতে স্বাবলম্বী দপদপিয়ার পাঁচ গ্রামের মানুষ

হাতে ভাজা মুড়িতে স্বাবলম্বী দপদপিয়ার পাঁচ গ্রামের মানুষ




নলছিটি সংবাদদাতা: ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রাম মুড়ি পল্লী নামে পরিচিত। এখানে নাখুচি অথবা মোটা ধান থেকে দেশি পদ্ধতিতে মুড়ি ভাজা হয়। রফতানি হচ্ছে দেশের গন্ডি পেড়িয়ে বিদেশে। স্বাদে অতুলনীয় বলে দপদপিয়ার মোটা মুড়ির খ্যাতি ছড়িয়েছে সর্বত্র। এখানকার ক্ষতিকারক রাসানিকমুক্ত হাতে ভাজা মুড়ির সুনাম দিনদিন ছড়িয়ে পড়ছে।

এখানে বছর জুড়ে চলে মুড়ি ভাজা ও বিক্রির কাজ। তবে রমজান মাসে ইফতার সামগ্রীতে থাকা বাড়তি মুড়ির চাহিদা মেটাতে ব্যস্ততা বাড়ে মুড়ি তৈরির কারিগরদের। বরিশাল-পটুয়াখালি আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশেই নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের রাজাখালি, দপদপিয়া, তিমিরকাঠি, ভরতকাঠি, জুরকাঠি, এবং কুমারখালী গ্রাম অবস্থিত। রমজানের মুড়ির জোগান দিতে এসব গ্রামে দিনরাত চলে মুড়ি ভাজার কর্মযজ্ঞ।

‘মুড়ি পল্লী’ নামে পরিচিত। রমজান মাস এলেই একটু বাড়তি সরগরম হয়ে ওঠে মুড়িপল্লী। রাত ২টা বাজতেই শুরু হয় মাটির হাঁড়ি-পাতিলের টুংটাং শব্দ। মুড়ি ভাজার উৎসবে জ্বলে ওঠে ৩০০ ঘরের এক হাজার ২০০ চুলার আগুন। তৈরি হয় সুস্বাদু মোটা মুড়ি। দপদপিয়াসহ আশপাশের এলাকায় প্রতিদিন তৈরি হয় ২০০ মণ মুড়ি, যা পাইকারদের হাত বদল হয়ে দেশের বিভিন্ন বাজারে চলে যায়।

রমজান আসা মাত্র মুড়ির চাহিদা আরও ১০০ মণ বেড়ে যায়। দপদপিয়ার মুড়ি পল্লীর শ্রমিকরা প্রমাণ করেছে মুড়ি ভাজাটাই একটা শিল্প। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অসংখ্য মানুষের জীবন-জীবিকা। রোজার মাসকে সামনে রেখে বেড়েছে মুড়ির চাহিদা। উৎসবের আমেজে পরিবারের সবাই মিলে শুরু করে মুড়ি ভাজার ধুম। একটু বাড়তি লাভের আশায় পরিবারের বৃদ্ধ ও শিশুরাও হাত লাগায় মুড়ি ভাজার কাজে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শ্রমিকদের মধ্যে যারা একটু আর্থিক সচ্ছল তারা নিজেরা বাজার থেকে ধান কিনে আনে। তারপর বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত করে চাল তৈরি করে মুড়ি ভেজে নিজেরাই বাজারজাত করে। আবার যারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল তারা আড়তদারদের কাছ থেকে বিনা মূল্যে চাল আনে। এই চাল দিয়ে মুড়ি ভেজে আড়তে সরবরাহ করে। এতে তাদের লাভ কম হয়। প্রতিদিন একজন গড়ে ৫০ কেজি চাল ভাজতে পারে। যেখান থেকে ৪২-৪৩ কেজি মুড়ি পাওয়া যায়। এখানকার মুড়ি ৭৫ টাকা কেজি দরে পাইকারি এবং ৮৫ টাকা খুচরা বিক্রি হয়।

তিমিরকাঠির ভূইয়া বাড়ির মুড়ির কারিগর নাছির উদ্দিন বলেন, রোজার শুরু থেকেই আমাদের মুড়ি ভাজার ব্যস্ততা বেড়ে যায়। মেশিনে ভাজা মুড়ির চেয়ে আমাদের হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা বেশি। পাইকাররা যে পরিমাণের মুড়ি চায় আমরা তা দিতে পারি না।

একই গ্রামের ফাতেমা বেগম বলেন, আমাদের টাকা নেই, এ জন্য অন্যের মুড়ি ভাজি। সেখান থেকে প্রতিবস্তায় ৪০০ টাকা পাই তা দিয়ে কোনো মতে আমাদের সংসার চলে। স্বামী মারা যাবার পরে সন্তানদের নিয়ে মুড়ি ভেজেই সংসার চালাই। তবে সরকারের পক্ষ থেকে যদি আমাদের আর্থিক সহযোগিতা করা হত তাহলে ভালো হতো।

নামমাত্র মজুরিতে দিনরাত খেটে পাইকারদের হাতে মুড়ি তুলে দেন শ্রমিকরা। এত খাটুনির পরও এ শিল্পে দেখা দিয়েছে নানা সমস্যা। মেশিনের মাধ্যমে রাসানিক মিশ্রিত মুড়ি অপেক্ষাকৃত কম খরচে তৈরি করে কম মূল্যে বাজারজাত করার কারণে এই গ্রামবাসীর রোজগারের পথের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব মুড়ি সহজ উপায়ে সার মিশিয়ে তৈরি হয়। স্বাস্থ্যের জন্য এগুলো খুবই ক্ষতিকর।

এছাড়া স্থানীয় পাইকার ও আড়ৎদারদের দৌরাত্ম্য তাদের লাভ থাকছে সামান্যই। সেসব মুড়ি বিক্রির জন্য এখানে গড়ে ওঠেছে আড়ত। একটু স্বচ্ছল লোকেরা নিজেরাই বাজার থেকে ধান কিনে তা বিশেষভাবে ভাজে।

মুড়ি ভাজায় ব্যস্ত ভরতকাঠি গ্রামের আলিম হাওলাদার (৬০) জানান পরিবারের সকলে মিলে তারা মুড়ি ভেজে সংসারের ব্যয় মিটান। পরিবারের নারী সদস্যরা বাড়িতে বসে মুড়ি ভেজে দেয় এবং পুরুষ সদস্যরা মুড়ি ভাজার কাজে সাহায্য করার পাশাপাশি ধান ক্রয় ও মুড়ি নিয়ে বাজারে বিক্রি করে বেশ ভালই আছেন।

গ্রামের পুরুষরা মুড়ি ভাজা শেষ হলে চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গেলেও নারীদের কোনো বিশ্রাম নেই। মুড়ি ভাজা শেষে ছেলে-মেয়ের দেখাশোনা ও রান্না-বান্না করে সংসারের যাবতীয় কাজ সারতে হয়। বলতে গেলে ২৪ ঘন্টাই এখন নারীদের ব্যস্ত থাকতে হয়।

মুড়ি ভাজার সাথে যুক্ত মুকুল বেগম বলেন, সামান্য একটু ঘুমের সময় পাই বাকিটা মুড়ি ভাজা ও সংসারের কাজ করতে পার হয়।

স্থানীয় আড়তদাররা এ গ্রাম থেকে মুড়ি সংগ্রহ করে তা ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ফরিদপুর, চাঁদপুর, ঝালকাঠি ও গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারদের হাতে তুলে দেন। একেকজন পাইকার এ গ্রামে অতিরিক্ত লাভের আশায় দাদন দেন পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা। তারাও মূলধনের পাশাপাশি লাভের অংশটি বুঝে নেন এ রমজান মাসে।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD