সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৭ পূর্বাহ্ন
বাউফল প্রতিনিধি:পটুয়াখালীর বাউফলে সালিশ বৈঠকে ১০ম শ্রেণির এক পরীক্ষার্থীকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। শুধু তাই নয় আরও তিন পরীক্ষার্থীসহ মোট পাঁচ জনকে কান ধরে বাজার ঘুরিয়ে সামাজিকভাবে অপদস্থ করা হয়েছে। এদের মধ্যে মারধরের শিকার সিজান নামের এক পরীক্ষার্থীকে বাউফল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার শরীরে একাধিক জখমের চিহ্ন রয়েছে।নির্যাতনের শিকার ওইসব পরীক্ষার্থীর অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন, কনকদিয়া বাজার এলাকায় সাইফুল নামের এক ব্যবসায়ীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে বাউফল থানার এসআই আনোয়ার রায়হান ও নাঈম নামের দুই কনকদিয়া স্যার সলিমুল্লাহ কলেজিয়েট স্কুলের দুই পরীক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়।
খবর পেয়ে পরের দিন সকাল ১০টার দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগে নেতা ইউনুস জোমাদ্দার ও কনকদিয়া ইউপির ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার কুলসুম বেগমের স্বামী জাহাঙ্গীর সরদারসহ অভিভাবকরা বাউফল থানায় এসে মুচলেকা দিয়ে তাদেরকে ছাড়িয়ে নেয়। এরপর ওই ইউপির চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার, আওয়ামী লীগ নেতা ও বাউফল সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. রফিকুল ইসলামের নির্দেশে শনিবার সন্ধ্যায় কনকদিয়া আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সালিস বৈঠক বসে। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এ সালিস বৈঠক চলে।
সালিস বৈঠকে অভিযুক্ত সিজান, রায়হান, নুরু, নাঈম ও রাব্বিকে দোষী প্রমাণিত করে মোট ৯০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং ৩ শ’ টাকার অলিখিত স্ট্যাম্পে সাক্ষর নেওয়া হয়। এর মধ্যে নুরুকে ৫০ হাজার, সিজানের কাছ থেকে ২০ হাজার, রায়হান ও নাঈমকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। রাব্বিকে কোন জরিমানা করা হয়নি। এরপর চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার সালিস বৈঠকে বসে সিজানকে এলোপাতাড়িভাবে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় অমানুষিক ভাবে ২৫ থেকে ৩০টি বেত্রাঘাত করে জখম করে।
অন্যান্যদের বেত্রাঘাত করা হয়নি। বেত্রাঘাতের সময় সিজান বমি করে এবং অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পরে যায়। ১৫-২০ মিনিট পর জ্ঞান ফিরে এলে তাকেসহ অন্যান্যদের নিজ নিজ কান ধরিয়ে কনকদিয়া বাজার ঘুরানো হয়। পাঁচ জনের মধ্যে নুরু ছাড়া বাকি চার জন কনকদিয়া স্যার সলিমুল্লাহ কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।
সিজান কনকদিয়া ইউপির ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য বলে জানিয়েছেন উপজেলা ছাত্রলীগের (একাংশের) সাধারণ সম্পাদক শামসুল কবির নিশাত। এ ঘটনার পর নির্যাতরে শিকার সিজানকে তার পরিবারের সদস্যরা ওই রাতেই বাউফল হাসপাতালে এনে ভর্তি করে। সিজানের বাবা ও কনকদিয়া ইউনিয়ন শ্রমীক লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান কাজী অভিযোগ করেন, চেয়ারম্যানের বিরাগভাজন হওয়ার কারণে তার ছেলেকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান তিনি।
কনকদিয়া ইউপির চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার বলেন, কনদিয়া বাজারে একটি হাইজ্যাকের ঘটনায় পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করে। পরে অভিভাবকরা সালিস বৈঠকের কথা বলে তাদেরকে থানা থেকে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনে। শনিবার রাতে সালিস বৈঠক হয়। আমিসহ বাউফল সরকালী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম ও মোকসেদ বয়াতী সালিস করি। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের কিছু টাকা জরিমানা করা হয় এবং কান ধরে বাজার ঘোরানো হয়। মারধরের কথা সত্য নয়।
Leave a Reply