বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩০ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার আবদার এলাকার একটি ফ্ল্যাট বাড়ির দ্বিতীয় তলায় মাসহ একই পরিবারের চারজনকে হত্যার ঘটনায় আরো পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১। বুধবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে এক প্রেস রিলিজে এসব তথ্য জানায় র্যাব-১।
র্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) দুপুর একটা হতে বুধবার(২৯ এপ্রিল) সকাল আটটা পর্যন্ত শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকায় র্যাব-১ অভিযান পরিচালনা করে পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলো, গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার আবদার গ্রামের প্রয়াত আরোপ আলীর ছেলে মো. কাজিম উদ্দিন (৫০), সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা থানার গাবি গ্রামের প্রয়াত আব্দুল খালেকের ছেলে হানিফ (৩২), গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার আবদার গ্রামের প্রয়াত আলাল উদ্দিনের ছেলে বশির (২৬), ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ফকিরপাড়া গ্রামের প্রয়াত হবি উদ্দিনের ছেলে মো. হেলাল (৩০), সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারা বাজার থানার কাঠালবাড়ী গ্রামের মো. আজিদ উল্লাহর ছেলে এলাহি মিয়া (৩৫)। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বাড়ি থেকে লুটকৃত মালামাল ও আসামিদের পরিধেয় বস্ত্র (রক্তমাখা) নগদ ৩০ হাজার টাকা, ১টি হলুদ রংয়ের গেঞ্জি, ১টি জিন্স প্যান্ট, ৩টি লুঙ্গি এবং ১টি আংটি উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যার সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে।
গ্রেপ্তারকৃত আসামি মো. কাজিম উদ্দিন (৫০) পেশায় রিকশা চালক, মো হানিফ (৩২) পেশায় শ্রমিক, মো বশির (২৬) পেশায় অটো রিকশা চালক, মো. হেলাল (৩০) পেশায় ভাঙ্গারী বিক্রেতা এবং মো. এলাহি মিয়া (৩৫) পেশায় শ্রমিক।
আসামিদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা ঘটনার কয়েকদিন আগে জানতে পারে কাজল মালয়েশিয়া থেকে হুন্ডির মাধ্যমে প্রায় বিশ-বাইশ লক্ষ টাকা পাঠিয়েছে। এমনি একটি ধারনার বশবর্তী হয়ে ঘটনার পাঁচ-সাতদিন আগে গ্রেপ্তারকৃত কাজিম ও হানিফ একত্রিত হয়ে কাজলের বাড়িতে ডাকাতির পরিকল্পনা করে। পরে অন্য আসামি বশির, হেলাল, এলাহি এবং অন্যান্যদেরকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। এদের দলে কাজিম এর ছেলে পারভেজকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয় বলে জানায় আসামিরা।
গ্রেপ্তারকৃতরা আরও জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার(২৩ এপ্রিল) রাত সাড়ে বারটার দিকে বাড়ির পিছনের এলাকায় জড়ো হয়। প্রথমে পারভেজ ভেন্টিলেটর দিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। এছাড়া হানিফ মাদারগাছ এবং পাইপ বেয়ে ছাদে উঠে সিঁড়ির ঢাকনা খুলে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। অতঃপর অন্যদের প্রবেশের জন্য বাড়ির পিছনের ছোট গেট খুলে দেয়া হয়। কাজিম, হেলাল, বশির, এলাহি এবং আরও কয়েকজন পিছনের গেট দিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে।
এসময় কাজিম এবং হেলালসহ তিনজন প্রথমে ফাতেমার ঘরে ঢুকে এবং কাজিমের হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে ফাতেমাকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে বিদেশ থেকে পাঠানো টাকাগুলো দিতে বলে। ফাতেমা এত টাকা নেই বলে জানায়। এসময় ফাতেমা তার রুমের স্টিলের শোকেসের উপর রাখা টেলিভিশনের নিচে চাপা দেয়া টাকা (৩০ হাজার) বের করে দেয়। পরবর্তীতে ফাতেমার স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয় এবং পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এসময় অন্যান্য রুমেও লুটতরাজ চলতে থাকে। আসামি বশির ও এলাহিসহ আরও একজন ভিকটিম নুরাকে তাদের হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে গলার চেইন ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয় এবং তাকেও পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয়। আসামি বশিরসহ আরও একজন ফাতেমার ছোট মেয়ে হাওয়ারিন’কে পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করে। আসামি পারভেজও হত্যাকাণ্ড ও ধর্ষণে অংশগ্রহণ করে। আসামিরা তাদের আরও কয়েকজন সক্রিয় সহযোগীর সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, ফাতেমা ও তার মেয়েরা তাদের কয়েকজনকে চিনে ফেলায় তাদের সবাইকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডে আসামিরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ও গলাকেটে ভিকটিমদের মৃত্যু নিশ্চিত করে। তবে, প্রতিবন্ধী শিশু ফাদিলকে হত্যা করা নিয়ে আসামিদের ভিতর দ্বিদা-দ্বন্ধ ও সংশয় তৈরি হয়। কিন্তু কোন প্রকার সাক্ষী যেন না থাকে সে জন্য প্রতিবন্ধী শিশু ফাদিল’কেও হত্যা করা হয়। পরে লুন্ঠনকৃত মালামাল ও টাকা কাজিম নিয়ে নেয় এবং সুবিধাজনক সময়ে পরস্পরকে বণ্টন করবে বলে বাকীদের জানায়। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজার এলাকার একটি বাড়ি থেকে মা স্মৃতি ফাতেমা (৩৮), তার মেয়ে সাবরিনা সুলতানা নূরা (১৬), হাওয়ারিন (১৩) এবং ছেলে ফাদিল (৮) এর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ধারণা করা হয় বুধবার (২২ এপ্রিল) দিবাগত রাতের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা চারজনকে গলা কেটে হত্যা করেছে। পরবর্তীতে গত ২৪ এপ্রিল গৃহবধূর শ্বশুর আবুল হোসেন অজ্ঞাত নামা ব্যক্তিদের আসামি করে শ্রীপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
Leave a Reply