রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০১:০১ পূর্বাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট ॥ বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো মহাকাশ গবেষণার বৈশ্বিক উদ্যোগে আনুষ্ঠানিকভাবে অংশগ্রহণ করল। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘আর্টেমিস চুক্তি’তে স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্ব মহাকাশ অন্বেষণের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় শুরু করল। এই চুক্তি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মহাকাশভিত্তিক গবেষণা, প্রযুক্তি সহযোগিতা এবং আন্তর্জাতিক মিশনে অংশগ্রহণের পথ সুগম করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
গত ৮ এপ্রিল ২০২৫, যুক্তরাষ্ট্রের আয়োজিত এক বিনিয়োগ সম্মেলনে বাংলাদেশ ‘আর্টেমিস চুক্তি’র ৫৪তম স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে যুক্ত হয়। বাংলাদেশের পক্ষে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি জ্যাকবসন।
চুক্তিতে স্বাক্ষরের পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে বাংলাদেশকে স্বাগত জানায়। বিবৃতিতে বলা হয়, “বাংলাদেশের এই অংশগ্রহণ মহাকাশে শান্তিপূর্ণ অন্বেষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে যে টেকসই সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, এই উদ্যোগ সেটিকে আরও গভীর করবে।”
আর্টেমিস চুক্তিটি প্রথম চালু হয় ২০২০ সালে, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও আরও সাতটি দেশ এটি গঠন করে। চুক্তির মূল উদ্দেশ্য হলো মহাকাশে শান্তিপূর্ণ অনুসন্ধান, টেকসই মিশন পরিচালনা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, এবং বিভিন্ন দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা নিশ্চিত করা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর সদস্য সংখ্যা বাড়তে থাকে, এবং বাংলাদেশ এখন এই বৈশ্বিক উদ্যোগের অংশ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, জ্ঞান বিনিময়, প্রযুক্তি অর্জন এবং ভবিষ্যতের মহাকাশ প্রকল্পে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে। পাশাপাশি মহাকাশ সংক্রান্ত নীতিমালা ও মানদণ্ড অনুসরণ করে বাংলাদেশ মহাকাশে শান্তিপূর্ণ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে পারবে।
বাংলাদেশের জন্য এটি শুধু একটি কূটনৈতিক অর্জন নয়, বরং দেশের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং শিক্ষাখাতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে। শিক্ষার্থী, গবেষক ও প্রযুক্তিবিদদের জন্য তৈরি হবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণার সঙ্গে সংযুক্ত হবার সুযোগ। দেশের তরুণ বিজ্ঞানীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এটি এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
এই অর্জনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রও। তাদের মতে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তিপূর্ণ সহযোগিতা এবং টেকসই উন্নয়নে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। এই চুক্তি উভয় দেশের পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেছে।
মহাকাশ অন্বেষণের এই নতুন যাত্রায় বাংলাদেশের এই সংযুক্তি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের অবস্থানকে আরও সুসংহত করবে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এখন প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি কৌশল ও বিনিয়োগ, যাতে করে এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া যায়।
Leave a Reply