রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৮ পূর্বাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন। শুক্রবার বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘অর্থ পাচার প্রতিরোধ ও সমসাময়িক ব্যাংকিং ইস্যু’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, দেশের ব্যাংকিং খাত মানি লন্ডারিং বা অর্থপাচারের সবচেয়ে বড় শিকার। তার মতে, কিছু প্রভাবশালী গ্রুপ ও পরিবার ব্যাংকিং খাতের সুযোগ নিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছে, যার পরিমাণ আড়াই থেকে তিন লাখ কোটি টাকার মধ্যে হতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর দাবি করেন, দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ লাখ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। শুধু চট্টগ্রামের একটি বড় গ্রুপই দেড় লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এসব অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার লক্ষ্যে জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে। ইতিমধ্যে কয়েকটি দেশে পাচারকৃত অর্থ দিয়ে কেনা সম্পদ জব্দের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, ভবিষ্যতে যেন কেউ অর্থ লুট বা পাচার করতে না পারে, সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
গভর্নর আরও বলেন, ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা যদি অর্থ লুটপাটে জড়িত থাকে এবং তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে, তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে কোনো প্রমাণ ছাড়া কাউকে দোষারোপ করা হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
চট্টগ্রামের গুরুত্ব তুলে ধরে গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান ইউনিট ঢাকায় হলেও চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইউনিট হিসেবে বিবেচিত। সে কারণে চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক মানের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ব্যাংকিং খাতের দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেশের অর্থনীতি এখনও ভারসাম্যপূর্ণ রয়েছে। রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পাশাপাশি, শেয়ারবাজার এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরও জানান, বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে এবং বর্তমানে কোনো বড় সংকট নেই। ব্যাংকিং খাতের সমস্যা সমাধানে তিনি সকল পক্ষকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম, নির্বাহী পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন এবং পরিচালক মো. আনিসুর রহমানসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply