রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩১ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশালে আলোচিত দুটি আসনে (বরিশাল-৪ ও বরিশাল-৫) একপক্ষের নেতাকর্মীরা আপিল বিভাগের দিকে তাকিয়ে আছে আর অপরপক্ষ প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের মতো এবারের নির্বাচনে এখনো উত্তাপ ছড়ায়নি এ দুটি আসনে। দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. শাম্মী আহম্মেদ এবং বরিশাল-৫ (সদর) আসনের স্বতন্ত্র প্রাথী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় এমনটি হচ্ছে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। এছাড়া নির্বাচন থেকে এক প্রকার ছিটকে গেছেন ‘হেভিওয়েট’ এই দুই প্রার্থী। তবে কর্মীদের মধ্যে আশা জাগিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পেতে লিভ টু আপিল করেছেন শাম্মী-সাদিক।
এদিকে আগামী ২৯ ডিসেম্বর আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরিশাল আগমনকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন দক্ষিণের ২১টি আসনের নৌকার প্রার্থীরা।
বরিশাল-৪: এক সময়ের বিএনপি ও জামায়াত অধিষ্ঠিত এ আসনটি নানা কৌশলে ছিনিয়ে আনেন বর্তমান এমপি পঙ্কজ দেবনাথ। টানা দুইবারের এমপি পঙ্কজ ওই আসনে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করে আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে পরিনত করেছেন। কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগের সাথে তার বিরোধের সূত্রধরে নানা অপপ্রচারের কারণে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনি দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয় দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মি আহমেদকে। শুরু থেকেই বর্তমান সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথ বলে আসছিলেন, তিনি নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করবেন না। কিন্তু শাম্মি আহমেদকে মনোনয়ন দেওয়ার পর পরই পঙ্কজ অনুসারীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা। ফলে উপায় না পেয়ে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের অনুরোধে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষদিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অনলাইনের মাধ্যমে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন পঙ্কজ দেবনাথ। এরপরই ভাগ্য খুলতে শুরু করে পঙ্কজ দেবনাথের। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময় তিনি নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে দ্বৈত্য নাগরিকত্ব থাকার অভিযোগ এনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। যার প্রমান পাওয়ায় নৌকার প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করা হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তার এ রায়ের বিরুদ্ধে নৌকার প্রার্থী ইসির কাছে আপিল করেও কোন সুফল না পেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন। সেখানেও নৌকার প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। ফলে ভাগ্য খুলতে শুরু করেছে ঈগল মার্কা নিয়ে নির্বাচনী মাঠের পাকা খেলোয়াড় বর্তমান সংসদ সদস্য ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী পঙ্কজ দেবনাথের।
এদিকে পঙ্কজ নাথের বিকল্প না থাকায় নির্বাচনী মাঠে কোনো পক্ষে কাজ করার সুযোগ নেই শাম্মী অনুসারীদের। শাম্মী প্রার্থী হতে না পারায় তার কর্মীরা এলাকায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। এসব নেতাকর্মীরা নির্বাচনে কারো পক্ষে কাজ করবেন নাকি নিরব ভুমিকা পালন করবেন সে নির্দেশনার অপেক্ষায় তৃণমূল নেতারা। ড. শাম্মীর অনুসারী মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পৌর মেয়র কামাল উদ্দিন খান বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। প্রার্থিতা ফিরে পেতে ড. শাম্মী উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন। সেখানে গিয়েও তিনি প্রার্থিতা পাননি। এখন পরবর্তী করণীয় সর্ম্পকে ভাবছি।’ তবে তারা এখনো আশাবাদী প্রার্থীতা ফিরে পাবেন নৌকার প্রার্থী ড. শাম্মী।
বরিশাল-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ বলেন, সবাইকে নিয়ে নিবাচনে ভোট চাইবো। যারা আমার বিরোধিতা করেছিল, আমার সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়েছিল তাদের নিয়েই নির্বাচনে প্রচারণা চালাবো।
ওই আসনে জাতীয় পার্টির মিজানুর রহমান লাঙ্গল, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের হৃদয় ইসলাম চুন্নু ছড়ি প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও তাদের তেমন কোন কর্মী সমর্থক বা প্রচার প্রচারণা দেখা যায়নি।
বরিশাল-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সদ্য সাবেক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর প্রার্থীতা বৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। ১৯ ডিসেম্বরের এ রায়ের কারণে আপাতত মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পাচ্ছেন না। যেকারনে এ আসনে অনেকটা বিজয়ে পথে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম। ইতোমধ্যে প্রচার-প্রচারনায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নির্বাচনী এলাকা সরগরম করে রেখেছেন।
অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদিক আব্দুল্লাহ এখন কার্যত নির্বাচনী মাঠে নেই। তাই কর্মীরা একঘরে হয়ে পড়েছেন। সাদিকের অনুসারীরা বলছেন, সিটি নির্বাচন থেকেই তাঁদের নৌকার পক্ষে কাজ করার সুযোগ দিচ্ছে না প্রতিপক্ষ। সিটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকেই নেতাকর্মীরা সাদিককে বাধ্য করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে। সাদিক সমর্থক বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসাইন বলেন, ইসিতে সাদিক আব্দুল্লাহ ন্যায়বিচার পাননি। এখন তিনি লিব টু আপিল করেছেন। আমরা এখনো আশাবাদী। নেতাকর্মীদের হতাশ না হয়ে নির্বাচনী কমিটিগুলোকে নিজ নিজ এলাকায় কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন সাদিক আব্দুল্লাহ। শেষপর্যন্ত সাদিক আব্দুল্লাহ তার প্রার্থীতা ফিরে পেলে পাল্টে যেতে পারে বর্তমানের নির্বাচনী মাঠের হিসেব নিকেশ।
বরিশাল-৫ আসনে নৌকার প্রার্থী জাহিদ ফারুকের সমর্থক মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আফজালুল করীম বলেন, দলে সাদিকের গ্রহণযোগ্যতা নেই, সেটা গেল সিটি নিবাচনে প্রমাণিত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় জাতীয় নির্বাচনে দল তাকে মনোনয়ন দেয়নি। তার যারা অনুসারী রয়েছেন, তারা সিটি নিবাচনে নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছিলেন। জাতীয় সংসদ নিবাচনেও তারা নৌকার বিপক্ষেই কাজ করবেন। এটা ধরে নিয়েই আমরা ভোটের মাঠ সাজিয়েছি।
এদিকে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের পাশাপাশি এ আসনে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন দলের মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া ট্রাক প্রতীকের মোঃ সালাহউদ্দিন রিপন। অতীত কর্মকান্ডের কারণে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী সালাহউদ্দিন রিপন।
এ আসনের অপর প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা হলেন-জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপস লাঙ্গল, এনপিপি’র আবদুল হান্নান সিকদার আম, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মোঃ আসাদুজ্জামান ছড়ি ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের মাহাতাব হোসেন ডাব। তবে এসব প্রার্থীদের পক্ষে এখনো কোন প্রচার প্রচারণা দেখা যায়নি।
এদিকে আগামী ২৯ ডিসেম্বর বরিশাল সফর করে নির্বাচনী জনসভায় বক্তব দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে তার এ আগমন ঘিরে বরিশাল বিভাগজুড়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বসিত। সেইসঙ্গে দলের মনোনীত নৌকার প্রার্থীরাও আনন্দে উদ্বেলিত। প্রার্থীরা মনে করছেন, নৌকার মূল মাঝি শেখ হাসিনার আগমন এ অঞ্চলে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের পক্ষে গণজোয়ারের সৃষ্টি করবে এবং নৌকার প্রার্থীরাই বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন।
Leave a Reply