সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩০ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ বরগুনার চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি ও নয়ন বন্ডের বিয়ের কাজী মো. আনিচুর রহমান। মঙ্গলবার (২৮জানুয়ারি) জেলা ও দায়রা জজ আদালতে তারা বিয়ের কাবিন আদালতে পেশ করেন।
একই দিনে আদালতে মামলার অপর দুই সাক্ষী মো. কামাল হোসেন এবং মিনারা বেগম সাক্ষ্য দিয়েছেন । এ নিয়ে মামলার প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের বিরুদ্ধে ২৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন করেছেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান।
এ বিষয়ে রিফাত হত্যা মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মজিবুল হক কিসলু বলেন, মিন্নি ও নয়ন বন্ডের বিয়ের কাজি মো. আনিচুর রহমান মঙ্গলবার আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
কাজি আনিচুর রহমান আদালতে বলেছেন, ‘২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর মিন্নি ও নয়ন বন্ডের বিয়ে আমি সম্পন্ন করি। ওই দিন নয়ন বন্ডের কয়েকজন বন্ধু আমাকে নয়ন বন্ডের বাসায় নিয়ে যায়। তখন বাসায় নয়ন বন্ডের মা এবং মিন্নিসহ অনেক লোক উপস্থিত ছিলেন। নয়ন বন্ডের বাসায় বসেই পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে মিন্নি ও নয়ন বন্ডের বিয়ে দেই আমি।’
আদালতে আনিচুর রহমান আরও বলেছেন, ‘বিয়ে সম্পন্ন করার পর আমি জানতে পারি মিন্নি বরগুনা পৌরসভার আবু সালেহ কমিশনারের ভাইয়ের মেয়ে। তখন আমি সালেহ কমিশনারকে আমার মোবাইল থেকে কল দিয়ে মিন্নি ও নয়ন বন্ডের বিয়ের খবর জানাই। তখন তিনি আমাকে বিয়ের কথা গোপন রাখতে বলেন। এরপর মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরও আমাকে ফোন করে বিবাহের বিষয়টি গোপন রাখতে অনুরোধ করেন।’
কাজি আনিচুর রহমান আদালতে আরও বলেছেন, ‘এরপর আমি জানতে পারি কুমারী পরিচয়ে রিফাত শরীফের সঙ্গে মিন্নির বিয়ে হয়েছে। রিফাত শরীফের সঙ্গে বিয়ের পরের দিন মিন্নির বাবা আমাকে ফোনে বলেন মিন্নি ও নয়ন বন্ড আগামীকাল আপনার কাছে যাবে। আপনি তাদের ডিভোর্স করিয়ে দিয়েন। কিন্তু মিন্নির বাবার কথা অনুযায়ী ওই দিন তারা আমার কাছে আসেনি। এর পরের দিন ফোন করে আবারও আমাকে একই কথা বলেন মিন্নির বাবা কিশোর। ওই দিনও ডিভোর্সের জন্য মিন্নি ও নয়ন বন্ড আমার কাছে না আসায় মিন্নির বাবাকে ফোন দেই। তখন মিন্নির বাবা আমাকে বলেন, ওরা দুজনে কমিটমেন্ট করেছে বিয়ের কথা কাউকে জানাবে না। গোপন রাখবে। আপাতত থাক।’
আইনজীবী মজিবুল হক কিসলু বলেন, সাক্ষ্য দেয়ার সময় মিন্নি ও নয়ন বন্ডের বিয়ের কাজি মো. আনিচুর রহমান আদালতে বিয়ের রেজিস্টার বালাম উপস্থাপন করেছেন। এটি গ্রহণ করেছেন আদালত।
গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। পরে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় করা মামলায় ১ সেপ্টেম্বর আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। সম্প্রতি রিফাত হত্যা মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
গত ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক; দু’ভাগে বিভক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জন। মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক আসামি মো. মুসা এখনও পলাতক। পাশাপাশি রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি এবং মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ছয়জন আসামি জামিনে রয়েছেন। বাকিরা কারাগারে।
গত ১ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এরপর ৮ জানুয়ারি অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনার শিশু আদালত।
রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক আসামিরা হলেন রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি, আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান, মো. মুসা, আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর এবং কামরুল ইসলাম সাইমুন।
Leave a Reply