বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪৩ পূর্বাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট ॥ আজ বাংলা নববর্ষ ১৪৩২। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে চলছে উৎসবমুখর আয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে এবার ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত হয়েছে বর্ষবরণ শোভাযাত্রা। ইউনেস্কো স্বীকৃত ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম পরিবর্তন করে এবার রাখা হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’।
সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে বের হয় শোভাযাত্রাটি। এটি শাহবাগ মোড়, টিএসসি, শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর হয়ে আবার চারুকলায় গিয়ে শেষ হয়। এই শোভাযাত্রা শুধুমাত্র নববর্ষ উদ্যাপনের উপলক্ষ নয়, এটি আজ বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং প্রতিবাদের এক সম্মিলিত রূপে পরিণত হয়েছে।
এবারের শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছে দেশের ২৮টি জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও দেশি-বিদেশি অতিথিরা। মোট ২১টি থিম ভিত্তিক মোটিফের মধ্যে ছিল কাঠের বাঘ, ইলিশ মাছ, শান্তির পায়রা, পাখা, মাথাল, লাঙল, মাছ ধরার চাই, পলো, চরকি, তুহিন পাখি, ঘোড়া ও মাছের ডোলা। বিশেষভাবে এবারের শোভাযাত্রায় সংযুক্ত করা হয়েছে ‘জুলাই আন্দোলনে নিহত মুগ্ধের পানির বোতল’ প্রতিকৃতি এবং ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়ে ‘তরমুজ’ মোটিফ।
শোভাযাত্রার মুখ্য আকর্ষণ ছিল ‘ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি’। তবে শনিবার ভোরে এই প্রতিকৃতিতে আগুন দেয় এক মুখোশধারী যুবক। এতে ক্ষয়ক্ষতি হলেও শিল্পীরা কাজ থামাননি। নতুন করে ককশিটে ‘স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার’ প্রতিকৃতি নির্মাণ করেন তারা। শিল্পী নাছির খান বলেন, “আমরা আবারও দাঁড়িয়েছি। ফ্যাসিবাদের প্রতীককে প্রতিহত করতে আমাদের এই চিত্রই বার্তা দেবে।”
চারুকলা অনুষদের ডিন প্রফেসর আজহারুল ইসলাম বলেন, “আমরা বরাবরের চেয়ে একটু ভিন্নভাবে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন করছি। প্রতিবাদের রূপ দিয়েই আমরা নববর্ষকে স্বাগত জানাচ্ছি।”
তবে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নাম পরিবর্তন করে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চারুকলার বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। তারা আয়োজক কমিটির কাছে এর যৌক্তিক ব্যাখ্যা দাবি করেছেন। একইসঙ্গে এবারের আয়োজনে শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব না দিয়ে ‘নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব দাবি তুলে ধরেন।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, “পহেলা বৈশাখ আমাদের প্রাণের উৎসব। এই দিনটি আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং সাম্যের বার্তা বহন করে।”
সবমিলিয়ে, নানা মতবিরোধের মাঝেও বর্ষবরণ শোভাযাত্রা হয়ে উঠেছে এক বর্ণাঢ্য, তাৎপর্যমণ্ডিত এবং রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক বার্তাবাহী আয়োজন।
Leave a Reply