ধৃষ্টতা নাকি সচেতনতা ? Latest Update News of Bangladesh

বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] অথবা [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




ধৃষ্টতা নাকি সচেতনতা ?

ধৃষ্টতা নাকি সচেতনতা ?




এম.কে. রানা,॥   ‘বিষ’ শব্দটি শুনলে আঁতকে ওঠার দিন বোধ হয় শেষ। বরং বিষের সঙ্গে এক ধরনের সখ্যতা গড়ে উঠেছে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের। বিষ ছাড়া আমাদের চলেই না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত গান ‘আমি জেনেশুনে বিষ করেছি পান, প্রাণের আশা ছেড়ে সঁপেছি প্রাণ।’ আমরা এখন কিন্তু প্রাণের আশা ছেড়ে বিষের শরণাপন্ন হই না, বরং জেনেশুনে বিষ খাই প্রাণ বাঁচানোর নামে, দাম্ভিকতা নিয়ে। ধনী দরিদ্র সব পরিবারের মধ্যে এখন দাম্ভিকতার অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে।

এই বিষ এমন বিষ, যা খেলে আমরা একবারে মরি না। বরং আমরা প্রতিদিন একটু একটু করে মরি। যার নাম মাদক। আমাদের সন্তানেরা মাদক নামক সেই বিষের জ্বালায় প্রতিদিন নীল হয়। মাদকের বিষে বুদ হয়ে থাকা আমাদের সন্তানরাই আজ সমাজে তৈরী করছে “কিশোর গ্যাং” কিশোর কিলার। তারা ঘটাচ্ছে গ্যাং রেপ (ধর্ষণ)’র মতো জঘন্য অপরাধ। এছাড়া যুব সমাজের উচ্ছৃঙ্খলতা আজ আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। এদিকে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র সব সময়ই আমাদের দেশের প্রতি ভালবাসা ও উদারতার পরিবর্তে সমাজকে উস্কে দিচ্ছে। এদের কঠোর হাতে দমন করা না হলে এ ধরণের অপরাধ/ধৃষ্টতা আমাদের অনলে পুড়িয়ে মারবে। সম্প্রতি পত্রিকা অফিসের কাজ শেষে গভীর রাতে বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎই চোখ পড়লো বরিশাল জেনারেল (সদর) হাসপাতালে মসজিদ লাগোয়া দেয়ালে। যেখানে লেখা রয়েছে “পুত্রের হাতে ধর্ষিতা তুমি, জননী বাংলাদেশ”। দেয়ালের ওই লেখাগুলো দেখে কেউ মিটি মিটি হাসেন, কেউ মুখ লুকিয়ে রাখেন লজ্জায়, কেউ বা দায় এড়িয়ে দেখেও না দেখার ভান করছেন।

স্থানীয় কয়েকজন ওষুধ ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, তারাও বিষয়টি গত ৭ দিন ধরে দেখছেন। তবে কে বা কাহারা কখন এ লেখা লিখেছে তা বলতে পারেননি কেউ। ধারণা করা হচ্ছে, গভীর রাতে শুনসান নিরবতায় কেউ হয়তো এ লেখাটা লিখেছেন। তবে লেখাটির অর্থ বুঝতে পারছিলাম না। এটা কি ধৃষ্টতা, নাকি সচেতনতা। এ বিষয়ে পরিস্কার ধারণা নিতে আইনজীবী, প্রশাসন ও সংস্কৃতিজনদের সাথে আলোচনা করি। যে বা যারা এটা লিখেছে আসলে কি বোঝাতে চেয়েছেন তা না বুঝলেও কেউ কেউ ধারণা করছেন, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিরা এ ধরণের উস্কানী বা ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে। কেননা, জননী হলো মা, মা মানে মাতৃভূমি। আর মাতৃভূমির পুত্র হলেন মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করেছেন এবং যারা শহীদ হয়েছেন।

যদি এই অর্থেই বোঝাতে এ ধরণের লেখা হয়ে থাকে তবে তা মারাত্মক অপরাধ, যা রাষ্ট্রদ্রোহীতার শামিল। অবশ্য মাদক আর ধর্ষণের মতো সামাজিক ব্যাধি যদি বোঝাতে চান তাহলেও আমাদের আরো সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আকাশ সংস্কৃতিতে ভেসে বেড়ায় আমাদের সন্তানেরা। আর তার প্রভাব পড়ছে সমাজে। প্রকারন্তরে তার প্রভাব রাষ্ট্রের উপরেও পড়ে। তাই এখনই আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষায় এক হয়ে কাজ করতে হবে। যে যার অবস্থান থেকে একটু সচেতন হলেই বেঁচে যেতে পারে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম। যার শুরুটা হতে হবে পরিবার থেকেই।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি রাবেয়া খাতুন ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে সরাসরি বিচার বিভাগকে দায়ী করে বলেন, ধর্ষকের বিচার কাজ ধীরগতিতে হওয়ায় অনেক সময় ধর্ষকরা আইনের ফাঁক-ফোকড় গলে বেরিয়ে আসে। তিনি বলেন, ধর্ষকের শাস্তি যত দ্রুত সম্ভব সম্পন্ন করা এবং ধর্ষকের ফাঁসি হওয়া উচিত। এছাড়া মাদক কারবারীদেরও বিচারকাজ দ্রুত শেষ করে শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, আকাশ সংস্কৃতি রোধ করতে হবে, যে সকল চ্যানেল বা সাবসক্রাইবার যৌন বিষয়ে প্রদর্শন করে তা সরাসরি বন্ধ করা দরকার। তিনি বলেন, নারী সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন, আইনজীবী, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, শিক্ষক সমাজ, সাংবাদিক, জনগণ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মাদক ও ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ রোধ করা সম্ভব।

বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের জেলা সভাপতি নাট্যজন সৈয়দ দুলাল, এ ধরণের লেখা দ্বারা দেশটাকে যারা স্বাধীন করেছে তাদেরকেই বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে, যা রাষ্ট্রদ্রোহীতার শামিল। এ ব্যাপারে অবশ্যই তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত। যে বা যাহারাই এটা লিখে থাকুক এটা কাম্য নয় উল্লেখ করে তিনি জানান, এ ধরণের দৃষ্টিকটু লেখাটি দ্রুত মুছে ফেলা দরকার।

জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার প্রিন্স ইলাহী বলেন, যেহেতু কে বা কাহারা এ লেখা লিখেছে এটা জানা যায়নি, কাকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে অথবা কি বোঝাতে চেয়েছে তাই এ বিষয়ে বলা মুশকিল। তবে শাব্দিক অর্থে যা বোঝায় তা হলো, পুত্র মানে মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদদের তথা যারা দেশটাকে স্বাধীন করেছে তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আর এই অর্থে যদি বলে থাকে তবে অবশ্যই এটা অনেক বড় অপরাধ। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের ও শহীদদের অবমাননা করা হয়েছে, এটা অবশ্যই রাষ্ট্রদোহীতার মধ্যে পড়ে। তবে এই লেখা দ্বারা যদি “মাদক বা ধর্ষণ সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত” বোঝানো হয় তাহলেও একটি জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে এ ধরণের লেখা থাকা কাম্য নয়। যদি আমাদের শহীদদের বোঝানোর চেষ্টা করা হয়ে থাকে তবে আইনের যারা রক্ষক অর্থাৎ গোয়েন্দা সংস্থা তদন্তের মাধ্যমে এটা যারা লিখেছে তাদেরকে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন তিনি।

এ ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান (বিপিএম-বার) বলেন, যদি উস্কানীর উদ্দেশ্যে কেউ এ ধরণের লেখা লিখে থাকে অবশ্যই তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে যেহেতু কে বা কাহারা লিখেছে তা স্পষ্ট নয় তাই এ ব্যাপারে মন্তব্য করা যাচ্ছেনা জানিয়ে তিনি বলেন, লেখাটি অবশ্যই দৃষ্টিকটু। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে লেখাটি মুছে ফেলার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD