দক্ষিণাঞ্চলে মরণ নেশা ইয়াবার চেয়ে ভয়ঙ্কর ধর্ষণ (!) Latest Update News of Bangladesh

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:০৮ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] অথবা [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




দক্ষিণাঞ্চলে মরণ নেশা ইয়াবার চেয়ে ভয়ঙ্কর ধর্ষণ (!)

দক্ষিণাঞ্চলে মরণ নেশা ইয়াবার চেয়ে ভয়ঙ্কর ধর্ষণ (!)

দক্ষিণাঞ্চলে মরণ নেশা ইয়াবার চেয়ে ভয়ঙ্কর ধর্ষণ (!) voiceofbarishal.com




এম.কে. রানা ॥ চলতি বছরের গত সাড়ে তিন মাসে সারাদেশে ৩৯৬ জন নারী-শিশু হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের (বিএসএএফ) তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের তিন মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৬৪ জন শিশু। গত তিন মাসে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৯ জন। আর ধর্ষণের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়ছে দক্ষিণাঞ্চলেও। মানবাধিকার সংগঠনের হিসেব মতে, দক্ষিণাঞ্চলে গত সাড়ে তিন মাসে ধর্ষিত হয়েছে প্রায় শতাধিক নারী ও শিশু। মরণ নেশা ইয়াবার চেয়েও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে ধর্ষণ নামক সামাজিক এ ব্যাধি।

বিভিন্ন নারী সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন, আইনজীবী, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও শিক্ষক সমাজ সকলেই এ ব্যাপারে দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া, আইণ-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোরতা এবং জনসচেতনতার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। পথে, ঘাটে, স্কুলে, মাদ্রাসায়, কলেজ কিংবা বসতঘর কোনখানেই নিরাপদ নয় নারীরা। কোনো কোনো সময় ধর্ষণ-গণ-ধর্ষণের পর খুনের শিকারও হতে হয়! গত কয়েক মাস পত্রিকার পাতায় চোখ বুলালেই ধর্ষণের মতো জঘন্য খবর পাওয়া যায়।

দিন দিন অপ্রিতিরোধ্য হচ্ছে এই জঘন্যতম কাজটি। নারীদের কাছে আজকাল ‘হায়েনা’ যতটা না ‘ভয়ঙ্কর’, তার চেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে ‘পুরুষ’ যা উদ্বেগের কারণ। ছাত্রী, শিশু, যুবতী, আয়া, বুয়া, গৃহবধূ, প্রতিবন্ধী কেউই যেন আজকাল নিরাপদ নয়। সম্প্রতি ফেনীর সোনাগাজীতে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে সারাদেশে এখনো বিক্ষোভ ও মানববন্ধন চলছে। ওই সব মানববন্ধন ও বিক্ষোভে বক্তারা এ ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবী জানিয়েছেন। সূত্রমতে, বরিশালের হিজলা উপজেলার মেমানিয়া গ্রামে ৮ম শ্রেনীর এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ধর্ষিতা ও তার পিতা বরিশাল প্রেসক্লাবে এসে সংবাদ সম্মেলন করে ধর্ষকের বিচার দাবী করেছেন।

জেলার মুলাদী উপজেলার প্রত্যন্ত চরকালেখান নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক ছাত্রীকে অপহরণের পর দুইদিন আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ধর্ষণের ভিডিও চিত্র মোবাইল ফোনে ধারণ করে এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলে ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। বখাটে ও তার সহযোগীদের অব্যাহত হুমকির মুখে ঘটনার চারদিন পরেও মামলা দায়ের করতে সাহস পাচ্ছে না ধর্ষিতা ও তার পরিবারের সদস্যরা। ৩১ মার্চ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সুন্দরদী গ্রামের নবীনগর এলাকার এক বখাটে শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী তরুণীকে ধর্ষণ করেছে।

ঘটনার এক দিন পর শনিবার রাতে ধর্ষিতা প্রতিবন্ধীর মা বাদী হয়ে গৌরনদী মডেল থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই রাতেই ধর্ষক কিশোর আল আমিন মাঝিকে গ্রেফতার করেছে। এদিকে ধর্ষণের ঘটনা এলাকায় জানাজানি হওয়ার পর গা-ঢাকা দিয়েছে আল আমিনের পরিবার। বরিশাল নগরীতে যৌতুক মামলার বাদী হিন্দু সম্প্রদায়ের এক নারী (৩০) গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই নারী বর্তমানে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। জানা গেছে, স্বামীর বিরুদ্ধে দায়ের করা যৌতুক মামলায় গত ১৬ এপ্রিল বরিশাল আদালতে হাজিরা দিয়ে বাসায় ফেরার পথে তাকে তুলে নিয়ে গণধষর্ণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।

গত ১৫ এপ্রিল বরগুনার পাথরঘাটায় পর্যটন কেন্দ্র হরিণঘাটা বনে নিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ৮ম শ্রনীর এক স্কুল ছাত্রীকে গণধর্ষনের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার মূল আসামি জলিলকে আটক করেছে পুলিশ। গত ২ এপ্রিল পিরোজপুর সদর উপজেলার কদমতলা ইউনিয়নের খানাখুনিয়ারী গ্রামে মঙ্গলবার রাতে ১৪ বছরের এক ৮ম শ্রেণীর স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে দুই বখাটে। নির্যাতিতা কদমতলা জর্জ হাইস্কুলের ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী।

থানা পুলিশ রাতেই ওই স্কুল ছাত্রীর ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য সদর হাসপাতালে প্রেরণ করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৌসুমী সুলতানা প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। গত ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় ফুফুর বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে ওঁৎ পেতে থাকা ধর্ষক কাওছার খান, এক সন্তানের জননী (২০)কে জোর পূর্বক মৃত্যুঞ্জয় মজুমদারের পুকুর পারে নিয়ে ধর্ষণ করে।

এক কলেজছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশ কনস্টেবল ও মঠবাড়িয়া উপজেলার বয়াতীর হাট গ্রামের খালেক ঘরামীর ছেলে সাহেব আলী ঘরামীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ওই ছাত্রী গত মঙ্গলবার রাতে মঠবাড়িয়া থানায় এ মামলা করেন। ধর্ষণে সহায়তার অপরাধে সাহেব আলীর বড় বোন বিলাসী বেগমকেও আসামি করা হয়েছে। পুলিশ বুধবার বিলাসী বেগমকে গ্রেফতার করেছে। গত রবিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর রাফিজা শাহীনের মতে, ‘দেশে শিশুদের ওপর সহিংসতা বাড়ছে।

আমাদের কাছে যে পরিসংখ্যান আছে, তা খুবই উদ্বেগজনক। আমরা কেন শিশুদের জন্য নিরাপদ আবাস গড়তে পারছি না, সেটি নিয়ে ভাবতে হবে। তাদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য এখনই করণীয় নির্ণয় করতে হবে।’ তারা বলেন, মূলত বিচারহীনতার জনই এমনটা হচ্ছে। শাস্তির দিকে মনোযোগ না দিয়ে, সংশোধনে মনোযোগ দেয়া জরুরি। নাহলে এই সমস্যা আরও প্রকট হবে।’ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের হিসেব মতে, সারাদেশের আদালতগুলোতে দেড় লক্ষাধিক ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন মামলা ঝুলে আছে। এসব মামলার বিচার চলছে কচ্ছপ গতিতে। মামলা নিষ্পত্তির হার প্রতি বছরে ৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

এরমধ্যে এক হাজারে সাজা পাচ্ছে সাড়ে ৪ জন। যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ ঘটনা রোধে বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগের কোন বিকল্প নেই। অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হলে এ ধরনের ঘৃণ্য কাজ সমাজ থেকে হ্রাস পাবে। এ ব্যাপারে মথুরানাথ পাবলিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ জাকির হোসেন বলেন, এ ধরণের জঘন্যতম কাজের বিচার প্রক্রিয়া ধীরগতির কারণে অনেকেই মনে করে বিচার থেকে রক্ষা পাবে। তাই বিচার বিভাগ এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর আরো কঠোর হওয়ার কথা বলেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্কুল থেকে আমরা শিক্ষকরা ছাত্র/ছাত্রীদের নৈতিক শিক্ষা দিয়ে থাকি।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি রাবেয়া খাতুন ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে সরাসরি বিচার বিভাগকে দায়ী করে বলেন, ধর্ষকের বিচার কাজ ধীরগতিতে হওয়ায় অনেক সময় ধর্ষকরা আইনের ফাঁক-ফোকড় গলে বেরিয়ে আসে। তিনি বলেন, ধর্ষকের শাস্তি যত দ্রুত সম্ভব সম্পন্ন করা এবং ধর্ষকের ফাঁসি হওয়া উচিত। তিনি আরো বলেন, আকাশ সংস্কৃতি রোধ করতে হবে, যে সকল চ্যানেল বা সাবসক্রাইবার যৌন বিষয়ে প্রদর্শন করে তা সরাসরি বন্ধ করা দরকার। এ ব্যাপারে পরিবার ও শিক্ষকদের ভুমিকা প্রসংগে তিনি বলেন, যেহেতু মেয়ে সাবালিকা হলে সে কোথায় যায়, কার সাথে সময় কাটায় এটা যেমন পরিবারের দেখা দরকার তেমনি যেহেতু দিনের একটি বেশি সময় স্কুল কলেজে থাকে ছেলে-মেয়েরা তাই শিক্ষকদেরও এ ব্যাপারে ভুমিকা রাখতে হবে।

তিনি বলেন, নারী সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন, আইনজীবী, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, শিক্ষক সমাজ, সাংবাদিক, জনগণ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ রোধ করা সম্ভব। বরিশাল শের-ই-বাংলা হাসপাতালের (শেবাচিম) পরিচালক ডাঃ মোঃ বাকির হোসেন বলেন, ধর্ষিতার যত ধরণের পরীক্ষা আছে তার প্রয়োজনীয় নমুন আমরা যত দ্রুত সম্ভব সংগ্রহ করে ঢাকা ফরেনসিক বিভাগে পাঠিয়ে থাকি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন আর টাকা দিয়ে ধর্ষণের আলামত নষ্ট করা কিংবা ভুল রিপোর্ট দেওয়ার সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে সরকারের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।

তিনি বলেন, ধর্ষিতা নারী যদি প্রশাসন কিংবা হাসপাতালে আসতে দেরী করে তাহলে আলামত নষ্ট হওয়ার আশংকা থাকে। বরিশাল ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের অতিরিক্ত দায়িত্বপালনকারী সিনিঃ সহকারী পুলিশ কমিশনার মোঃ রাসেল ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা চাই ধর্ষিতা নারী দ্রুত বিচার পান। এজন্য ধর্ষণের কোন ঘটনার সংবাদ পাওয়া মাত্রই ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে দ্রুত আন্তরিকতার সাথে সাপোর্ট দেয়া হয়। এ ব্যাপারে কার্পণ্য কিংবা প্রভাবিত হওয়ার কোন সুযোগ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে পুলিশ কমিশনার মহোদয়ের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।

তিনি বলেন, অনেক সময় অনেক নারী লজ্জায় ঘটনা ঘটার কয়েকদিন পর আমাদের কাছে সংবাদ পৌঁছায় অথবা ভিকটিম নিজেই লজ্জায় আলামত নষ্ট করে ফেলেন। সেক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে ধর্ষণ হয়েছে কিনা তা নিরূপন করা কস্টকর হয়ে যায়। যদি কোথাও ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটে তাহলে সাথে সাথে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করার আহবান জানান তিনি।

ধর্ষণ সামাজিক ব্যাধি হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, জনগণ সবারই সচেতন হতে হবে, তবেই কেবল সামাজিক এ ব্যাধি রোধ করা সম্ভব। বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার প্রিন্স ইলাহী বলেন, বিচার প্রক্রিয়ায় ধীর গতি এটা বলা যাবে না। এজন্য মেডিকেল সিস্টেম দায়ী।

কেননা ধর্ষণের আলামত সংগ্রহ থেকে শুরু করে আদালত পর্যন্ত রিপোর্ট পৌঁছাতে দেরী করেন তারা। তবে বিচার প্রক্রিয়া দেরী হলে বিচারের মোড় ঘুরে যেতে পারে বলেন তিনি। কেননা বিচার কার্যক্রম দেরী হলে ধর্ষক কোন না কোনভাবে জামিনে মুক্ত হয়। আইনের সঠিক প্রয়োগ নেই এবং সচেতনতার অভাবেই ধর্ষণের মতো ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ধর্ষককে সমাজ থেকে বয়কট করার পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধি পেলেই এ ঘটনা রোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD