রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১৮ পূর্বাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট ॥ ঢাকায় ব্রিটেনের সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে সরকারি জমি ও ফ্ল্যাট সংক্রান্ত জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গুলশানের অভিজাত এলাকায় ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডকে সরকারি জমি হস্তান্তরের বিনিময়ে ফ্ল্যাট উপহার নেওয়ার অভিযোগে টিউলিপ সিদ্দিককে আসামি করে মামলা করতে যাচ্ছে সংস্থাটি। দুদক সূত্রে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহেই টিউলিপ ও রাজউকের এক সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।
তদন্ত সূত্রে জানা যায়, গুলশান-২-এর ৭১ নম্বর রোডে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের মালিক টিউলিপ সিদ্দিক। চলতি বছরের মার্চ মাসে দুদক ফ্ল্যাটটির সন্ধান পাওয়ার পর আদালতে আবেদন করে তা জব্দের আদেশ নেয়। পরে, ফ্ল্যাটটি কীভাবে টিউলিপের মালিকানায় এল তা অনুসন্ধানে নামে সংস্থাটি এবং পুরো প্রক্রিয়ায় অভিনব জালিয়াতির একাধিক চিত্র উদ্ঘাটিত হয়।
মূল ঘটনা শুরু হয় ১৯৬৪ সালে, যখন পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক প্রধান বিচারপতি ইমাম হোসেন চৌধুরী ‘ঢাকা ইম্রুভমেন্ট ট্রাস্ট’-এর (বর্তমান রাজউক) কাছে একটি আবেদন করেন। তার আবেদনের ভিত্তিতে প্রায় দুই বিঘা জমি তাকে ৯৯ বছরের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়, তবে শর্ত ছিল জমিটি হস্তান্তর করা যাবে না। কিন্তু ১৯৭৪ সাল থেকে একাধিক হাত বদলের মাধ্যমে জমিটি চলে যায় ইস্টার্ন হাউজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলামের কাছে।
২০০০ সালে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রভাব খাটিয়ে টিউলিপের খালা ওই জমিকে বৈধ রূপ দেওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করেন। ইস্টার্ন হাউজিংকে “লিগ্যাল পার্সন” হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে জমিটি ৩৬টি ফ্ল্যাটে ভাগ করে নেওয়ার অনুমোদন আদায় করা হয় রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মাধ্যমে। বিনিময়ে, প্লটের ২০১ নম্বর ফ্ল্যাটটি উপহারস্বরূপ গ্রহণ করেন টিউলিপ সিদ্দিক।
দুদক জানিয়েছে, এ ঘটনায় রাজউকের তৎকালীন কর্মকর্তা সরদার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা হচ্ছে। তবে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম ও রাজউকের সাবেক কর্মকর্তা ডক্টর মুহাম্মদ সেলিম মৃত্যুবরণ করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা সম্ভব হচ্ছে না।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন বলেন, “রাজউকের বরাদ্দকৃত জমি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কোনো সংস্থা বা বিভাগ দায় এড়াতে পারে না।”
এর আগে পূর্বাচলে শেখ পরিবারের ৬০ কাঠার প্লট জালিয়াতি মামলার হুকুমের আসামি হিসেবেও টিউলিপ সিদ্দিকের নাম এসেছিল। ফলে এটি তার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ।
দুদক সূত্রে আরও জানা গেছে, টিউলিপের বিদেশি নাগরিকত্ব ও সংসদ সদস্য পরিচয়কে সামনে রেখে অনেকেই প্রভাবমুক্ত থাকার আশঙ্কা করলেও তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য যথেষ্ট শক্তিশালী এবং আইনি পদক্ষেপ নিতে দুদক প্রস্তুত।
Leave a Reply