শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৯ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক ||
অনেক আন্দোলনের ফসল বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘর। প্রতিষ্ঠা ও কার্যক্রম শুরু করার আগে থেকেই বরিশালবাসীর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল জাদুঘর। উদ্বোধনের পর তিন বছর পার হলেও একন পর্যন্ত স্থায়ী কোন জনবল নেই বিভাগীয় জাদুঘরের। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের অন্যান্য বিভাগ ও জেলায় কর্মরত লোকদের প্রেষণে এনে জোড়াতালি দিয়ে চলছে কার্যক্রম। ওদিকে দর্শনার্থীদের অভিযোগ জাদুঘরে অপ্রতুল ঐতিহাসিক নিদর্শন থাকায় দর্শক টানতে ব্যর্থ হচ্ছে। এর ফলে এক প্রকার ঝিমিয়ে পড়েছে কার্যক্রম। তাছাড়া বরিশালের অধিকাংশ মানুষই জানেনা এই জাদুঘর সম্পর্কে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রচারণা এবং অব্যবস্থাপনার কারণেই এই বিভাগীয় জাদুঘরটি পরিচিত হতে পারেনি বরিশালবাসীর কাছে। এছাড়াও রয়েছে প্রত্নবস্তুর অভাব। আর এখনো ব্যবস্থাপনার অভাবে হয়নি কোনো স্কুল প্রোগ্রাম। তবে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ বলছে, বিভিন্ন দিবসকে ঘিরে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে নগরীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেশ কয়েকবার চিঠি দিলেও তেমন কোনো সাড়া পায়নি তারা। উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র সাকিবুল হাসান অন্তর বলে, ‘আগে বিভাগীয় জাদুঘর সম্পর্কে জানতাম না।
তাই অনেকটা কৌতূহলবশত দুই বন্ধু এখানে এসেছি। তবে জাদুঘরে এসে ইতিহাস ঐতিহ্যের অনেক কিছুই জানতে পেরেছি।’ সাকিবুল হাসান অন্তর আরও জানায়, বিভাগীয় জাদুঘরে প্রত্নবস্তুর অভাব রয়েছে। আরও কিছু প্রত্নবস্তু যোগ হলে, এখানে দর্শনার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। আর ছোট-বড় সকলেরই একবার এই জাদুঘর ঘুরে দেখা উচিত বলে মনে করে অন্তর। এদিকে এই বিভাগীয় জাদুঘরে রয়েছে জনবল সংকট। স্থায়ী কোনো জনবল এই জাদুঘরে নেই। তাছাড়া বর্তমানে বিভাগীয় জাদুঘরে যে কয়জন কর্মচারী দায়িত্ব পালন করছে তাদের অধিকাংশ শেরে ই বাংলা স্মৃতি জাদুঘর ও খুলনা আঞ্চলিক প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর অফিসের কর্মচারী।
দর্শনার্থী সংকটের বিষয়ে জাদুঘরের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা সহকারী কাস্টডিয়ান শাহিন আলম জানান, জাদুঘর সম্পর্কে এখনো বরিশালের মানুষ পুরোপুরি অবগত নয়। এর ফলে দর্শনার্থীর সংখ্যাও বাড়ছে না। তবে ইতোমধ্যে ব্যানার, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ জাদুঘরে দর্শনার্থীর পদচারণা বাড়ানোর জন্য নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জন দর্শনার্থী জাদুঘর পরিদর্শন করেন। এছাড়াও জাদুঘর পরিদর্শনে বয়স্ক দর্শনার্থীদের সঙ্গে সঙ্গে শিশুরাও আসছে। আর জাদুঘরের সামনেই শিশুদের জন্য আলাদা কর্নারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জনবল সংকটের বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা জানান, বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘরে স্থায়ী জনবল নেই। অন্য জাদুঘর এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মচারীদের দিয়েই এই জাদুঘর পরিচালিত হচ্ছে। তবে বিভাগীয় জাদুঘরে স্থায়ী ৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের বিষয়টি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বিভাগীয় জাদুঘর সূত্রে জানা গেছে, বিভাগীয় জাদুঘর প্রদর্শনীর সময়সূচিকে শীত ও গ্রীষ্মকালীন দুটি ঋতুতে ভাগ করা হয়েছে। এতে ১ অক্টোবর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত শীতকালীন সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে শনিবার সকাল ৯টা-৫টা এবং সোমবার দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা রাখা হয়। অন্যদিকে ১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গ্রীষ্মকালীন সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে শনিবার সকাল ১০টা-৬টা এবং সোমবার দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা রাখা হবে। এছাড়াও রোববার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে।
তাছাড়া জাদুঘর পরিদর্শনে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ১০ টাকা, স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য ৫ টাকা, বিদেশি পর্যটকদের জন্য ১০০ টাকা এবং সার্কভুক্ত দেশ সমূহের পর্যটকদের জন্য ২৫ টাকা প্রবেশ মূল্য ধরা হয়েছে। এছাড়াও ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য জাদুঘরটি বিনামূল্যে পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভাগীয় জাদুঘরের ২ তলায় ৯টি গ্যালারিতে বিভাগের ভৌগোলিক, প্রাকৃতিক পরিচিতি ও খ্যাতনামা ব্যক্তিদের তথ্য ও চিত্র, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য লোকশিল্প এবং বাংলাদেশ প্রত্নত্ত্ত্ব সম্পদ ও ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘরটি (বরিশাল পুরাতন কালেক্টরেট ভবন) নিম্ন-গাঙ্গেয় অববাহিকায় নির্মিত ঔপনিবেশিক শাসনামলের প্রথম প্রশাসনিক ভবন বলে মনে করা হয়। দ্বিতল এই ভবনটি পাশ্চাত্য ও স্থানীয় ইন্দো-মুসলিম স্থাপত্য রীতির সংমিশ্রণে নির্মাণ করা হয়। এটা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে পাতলা ইট, টালিম লোহা ও কাঠের বর্গা এবং চুন-সুরকি। আয়তাকার ভূমি পরিকল্পনায় নির্মিত এই ভবনটির দৈর্ঘ্য ৯৪ মিটার এবং প্রস্থ ২১ মিটার। প্রায় ১.২ মিটার উঁচু খিলান যুক্ত স্তম্ভের উপরে এই ভবনটি নির্মাণ করা হয়। এই জাদুঘরের নিচতলায় ১৪টি কক্ষ এবং দোতলায় ৯টি কক্ষ রয়েছে।
উল্লেখ্য, বরিশাল কালেক্টরেটের এই ভবনটি ২০০৩ সালে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে এবং ২০০৫ সালে প্রত্নত্ত্ত্ব অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর ২০১৫ সালে শুরু হয় জাদুঘরে রূপান্তরের কাজ। পরবর্তীতে একই বছরের ৮ জুন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি এই জাদুঘরটি উদ্বোধন করেন।
Leave a Reply