জন্ম দিলেই কি পিতা হওয়া যায়? Latest Update News of Bangladesh

মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৪৭ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] অথবা [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




জন্ম দিলেই কি পিতা হওয়া যায়?

জন্ম দিলেই কি পিতা হওয়া যায়?




॥ শাকিব বিপ্লব ॥এইচ এম হেলাল:
কি নির্মম কাহিনী! প্রাসঙ্গিক এ ঘটনার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য অনুধাবন করতে না পারলে বোঝা যাবে না পৃথিবী কত বৈচিত্রময়, নিষ্ঠুর। একজন পিতা তার সন্তানের মৃত্যুর পর তার মুখখানি দেখতে তো আসলেন না, এমনকি সেই কিশোরের মৃতদেহ ময়না তদন্ত এড়িয়ে যেতে আইনী প্রক্রিয়ায় বাধ সাধলেন প্রশাসনকে সম্মতি না দিয়ে। শেষ পর্যন্ত গ্রামবাসীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও ময়না তদন্ত শেষে ওই কিশোরের জানাজায় সহ¯্রাধিক ব্যক্তির উপস্থিতি আর মানুষের চোখের জল বলে দিল- কখনো কখনো আপনের চেয়ে পর কত কাছের হতে পারে। বরিশাল নগর উপকণ্ঠের পুরানপাড়া এলাকার ১১ বছরের কিশোর আবদুল্লাহ আত্মহত্যা করে জানিয়ে দিয়ে গেল- তার এই মৃত্যু আসলে অভিমানে নয়, নিষ্ঠুর পৃথিবী থেকে অকালে চলে যাওয়াই যেন শ্রেয় মনে করেছে। এ খবরের ভেতরের খবর জানতে একটু দেরিই হল। অনেকটা কাকতালীয়ভাবে মিলে গেল মর্মস্পর্শী এই কিশোরের মৃত্যুকাহিনীর তথ্যাদি। ঘটনাটি গত ৩০ আগস্ট বৃহস্পতিবার বিকেলের। ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় এসে চলমান আলোচনা থেকে জানা গেল সেদিন কি ঘটেছিল পুরানপাড়া পল্লীতে।

সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মনটা ভালো না লাগায় নিজের ফ্ল্যাট থেকে নেমে শ’ খানেক দূরত্বে পৈত্রিক বাড়িতে মা-বাবার সাথে দেখা করে ফিরে এসে বাড়ির সামনে বসলাম একটি চায়ের দোকানে। কাউনিয়া মনসা বাড়ির গলির পারুলের সেই দোকানে দুই যুবক ব্যবসায়ী আলাপচারিতার এক ফাঁকে কিশোর আবদুল্লার মৃত্যু নিয়ে আফসোস করার শব্দ আমার কানে বাজল। সংবাদকর্মীদের যে অভ্যাস তথ্যের গন্ধ পেলে ঘাটাঘাটি করা। আমিও তো সেই অভ্যাসে অভ্যস্ত। আগ বাড়িয়ে বিষয়টি জানার আগ্রহ প্রকাশ করলাম। কারণও সঙ্গত। পুরানপাড়া সংশ্লিষ্ট কাগাশুড়া নানা বাড়ি হওয়ায় ওই এলাকার প্রতি আমার বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে।

একপর্যায়ে জিজ্ঞাসা করলাম কে এই আবদুল্লাহ? দু’জনের মধ্যেকার এক যুবক জানালেন, এক নাড়ী ছেড়া ধন হল আবদুল্লাহ। মৃত্যুর পর যার পরিচিতি অনেক দূর বিস্তৃতি ঘটেছে। সহানুভূতি জেগেছে অকাতরে। আবদুল্লাহর বিদায় শুধু মাকে নয়, কাঁদিয়ে গেল গ্রামবাসীকেও। এরপর বিস্তারিত ঘটনা ধাপে ধাপে জানতে গিয়ে যা শুনলাম তাতে নিজেই বিস্মিত হলাম। ওই কিশোরের বাবা থাকতেও যেন নেই। মা রেখা বেগম কর্মসূত্রে ঢাকার গাজীপুরে থাকাবস্থায় বিয়ে করেছিলেন বাবুলকে। এই ব্যক্তির আরো দুই স্ত্রী-সন্তানাদি রয়েছে। তা ছিল অজানা। আত্মপ্রকাশের পর পারিবারিক বিরোধে একপর্যায়ে রেখার সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। ততদিনে বাবুলের ঔরসে পৃথিবীর আলো দেখে আবদুল্লাহ। বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে আবদুল্লাহকে নিয়ে রেখা বেগম চলে আসে পিত্রালয় পুরানপাড়ায়।

রেখা বেগমের মা এলাকায় বেশ আলোচিত। কুডু মেম্বার হিসেবে তার পরিচিতি। এক সময় ইউপি সদস্য হিসেবে যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছেন। তার আমলে নারী ইউপি সদস্য হওয়া কঠিনতর ছিল বিধায় পরিচিতিটা একটু বেশি, আলোচিত। সে যাই হোক, আসি আসল ঘটনায়। আবদুল্লাহ পুরানপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। ঘটনার দিন দুপুরে টিফিনের সময় স্কুল ছেড়ে বাড়িতে এসে লাফিয়ে পড়লো পুকুরে। তার সহপাঠীদের সাথে পুকুরে দীর্ঘ সময় গোসল করা নিয়ে মা একটু ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। প্রতিউত্তরে আবদুল্লাহ সান্ত¦না দেন- আজ মা তোমাকে একটি সারপ্রাইজ দেব। কিন্তু মা বুঝে উঠতে পারেননি নিয়তির সারপ্রাইজ কি? তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে এতটাই বকাঝকা করেন যে তাতে অভিমানে নিস্তব্ধ হয়ে যায় কিশোর আবদুল্লাহ। বিকেলে এক ফাঁকে নানীর দোতলা ঘরের আড়ার সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। নিশ্চিত রওয়ানা দেয় না ফেরার দেশে। জানতে পারলাম, ওই চায়ের দোকানে বসা দুই যুবক তাদের পড়শি।

এদের মধ্যে একজন বললেন, তিনি দেখেছেন যেভাবে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়েছিল তাতে সহসা মৃত্যু হওয়ার কথা নয়। কিন্তু আল্লাহ না রাখলে থাকা কি যায়? মাকে সে যে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল হয়তো সেটাই হলো এই বেদনা, মৃত্যু। কাজের তাগিদে সেই মা ঘরের দোতলায় উঠে দেখেন পুত্র সন্তানের নিথর দেহ ঝুলছে। এই চিত্র দেখে নির্বাক। অতঃপর চিৎকার-চেচামেচি। পড়শিরা এসে ভীড় করল। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারুক আহম্মেদও আসলেন এই মর্মস্পর্শী ঘটনা শুনে। কারো কাছে যেন বিশ্বাসযোগ্য ছিল না- আবদুল্লাহ নিজেই মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছে। একদিকে কাঁদছে পরিবার, অন্যদিকে পড়শিরা আর্তনাদ জানাচ্ছে এই চঞ্চল কিশোরের অকাল মৃত্যু বেদনায়। আবদুল্লাহ যেমন ছিল দুরন্ত, তদ্রুপ মেধাবীও। যে কারণে পিতৃছাড়া এই কিশোরের গ্রামে একটা আলাদা আদর এবং কারো ভাগ্নে বা নাতি হিসেবে কদরও ছিল। কিছু দিন পূর্বে তার সুন্নতে খাৎনা অনুষ্ঠানে যে পরিমাণ লোক সমাগম ঘটেছিল তাতে প্রমাণ মেলে কিশোর আবদুল্লাহ মৃত্যুর আগে মানুষের মন জয় করে গেছে।

স্থানীয়রা সিদ্ধান্ত নিল অন্তত এই কিশোরের দেহ কাটাছেড়া না করে দাফন কার্য কিভাবে করা যায়। উপস্থিত এলাকা সংশ্লিষ্ট কাউনিয়া থানা পুলিশও এই মৃত্যুতে ব্যথিত বলে শোনা গেছে। তারাও এলাকাবাসীর সাথে একমত হলেও আইনী প্রক্রিয়াগত কারণে প্রশাসনিক অনুমোদন, পাশাপাশি পিতার সম্মতির গুরুত্ব দিলেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পিতার সাথে যোগাযোগ করা হল গাজীপুরে। এর আগে সেলফোনে জানানো হয়েছিল পুত্রের মৃত্যুর খবর। কিন্তু পিতার মন গলেনি, একবার দেখতে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেননি বলে জানা গেল। সর্বশেষ যখন থানা পুলিশ সন্তানের দাফনের বিষয়ে তার কোন আপত্তি আছে কিনা উত্তর জানতে চাইলো।

বিস্ময়কর, পিতার কাছ থেকে এমনভাবে উত্তর আসলো যে, মৃত কিশোর তার পুত্র ভাষার ভাব-ভঙ্গিমায় তা মনে হয়নি। অবাক হল পুলিশ সদস্যরাও। নিরূপায় তারা। আইনগত কারণে ময়না তদন্তের ব্যবস্থা নেওয়া হল। শেরে বাংলা মেডিকেল থেকে গ্রামে লাশ আনার পর জানাজায় দেখা গেল মানুষের ঢল। পল্লী এলাকা বিধায় যে পরিমাণ লোক জানাজায় সমাগত হয়েছে তা কল্পনাতীত। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে গিয়ে একটি কথাই বারবার উচ্চারিত হচ্ছিল- সেই অমানুষ রূপী পিতার কথা। যার ঔরসে জন্ম নেওয়া পুত্রের মৃত্যুতে কাতর তো হয়নি, একবার সন্তানের মৃত মুখখানি দেখার প্রয়োজনীয়তাও বোধ করেনি। ময়না তদন্ত এড়াতে দিল না পাষন্ড পিতার এই অমানসিকতা অসম্মতিসূচক শব্দে। কতটা নির্দয় হলে মানুষ পারে এই রূপ ভূমিকায় নিজের চরিত্র প্রকাশ করতে। আসলে জন্ম দিলেই কি পিতা হওয়া যায়? না। এই ‘না’ শব্দটি উচ্চারিত হওয়ায় মৃত্যুর এক সপ্তাহ পরও আবদুল্লাহকে নিয়ে মানুষের হায় আফসোস অথবা নিরব মাতম এখনো চলছে। যা গ্রাম থেকে শহরে এসে ধ্বনিত হচ্ছে। একটি চায়ের দোকানে এ প্রসঙ্গে আলোচনা তারই একটি অংশ বলে আমার ধারণা। বিচিত্র পৃথিবীতে নির্মম ঘটনার একটি অধ্যায় হয়ে থাকবে অভিমানী আবদুল্লাহর না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার এই কাহিনী।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD