শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৭ পূর্বাহ্ন
তানজিল জামান জয়, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)প্রতিনিধি।। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সিন্ডিকেট করে নিজেদের ইচ্ছেমত টিসিবি’র নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী বিক্রী করছেন ডিলাররা। এতে সীমিত আয়ের মানুষ বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে তাদের চাহিদা মত খাদ্য সামগ্রী কিনতে পারছেন না।
সাধারন মানুষের সুবিধার্থে ভ্রাম্যমান ট্রাকে করে নির্ধারিত মূল্যে পন্য সামগ্রী বিক্রী করার নিয়ম থাকলেও তা মানছেন না ডিলাররা। তারা তাদের ইচ্ছেমত মূল্যে পন্য সামগ্রী বিক্রী করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া ডিপো থেকে খাদ্য সামগ্রী উত্তোলন ও বিক্রী প্রক্রিয়ায় যথাযথ তদারকি সহ স্বচ্ছতা না থাকায় টিসিবি’র কার্যক্রম স্বল্প আয়ের মানুষের কোন উপকারে না আসার অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, কলাপাড়া উপকূলীয় এলাকার সীমীত আয়ের মানুষের জন্য পৌরশহরে লতিফ ট্রেডার্স ও আলম ট্রেডার্স নামে লাইসেন্সধারী দু’জন ডিলার রয়েছে। যারা উভয়েই ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ায় ভ্রাম্যমান ট্রাকে করে কখনও পন্য সামগ্রী বিক্রী না করে নিজেরা সিন্ডিকেট করে ইচ্ছেমত শহরের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় বসে দু’একদিন বিক্রী করছেন।
এতে স্বল্প আয়ের মানুষ তাদের প্রয়োজনের সময় টিসিবি’র ডিলারদের কাছ থেকে খাদ্য সামগ্রী কিনতে পারছেন না। এমনকি এসব ডিলাররা শহরের প্রভাবশালী কিছু মানুষকে ম্যানেজে রাখতে ওই প্রভাবশালীদের কাছে তাদের চাহিদা মত পন্য সামগ্রী হোম ডেলিভারী করে আসছেন। আর নি¤œ বিত্ত মানুষজন যারা ডিলারের ঘরের সামনে ঘন্টাকাল সময় ধরে লাইনে দাড়িয়ে অপেক্ষায় থাকছেন তারা মাল বিক্রী শেষ হয়ে গেছে শুনে খালি হাতে বাড়ী ফিরছেন।
এদিকে পৌরশহরের লতিফ ট্রেডার্স ও আলম ট্রেডার্স মার্চ মাসে বরিশাল ডিপো থেকে সিন্ডিকেট করে তেল, চিনি ও ডাল সামগ্রী দু’দফায় ১১টন ও ৭ টন উত্তোলন করেন। এসব পন্য সামগ্রী আলাদা ভাবে দু’জন ডিলার ভ্রাম্যমান ট্রাকে করে মানুষের কাছে বিক্রী করার নিয়ম থাকলেও পৌরশহরের ট্রলার ঘাটে অবস্থিত একটি ঘরে সীমিত পন্য সামগ্রী বিক্রী করেছেন তারা। উপজেলা পর্যায়ে ইউএনও’র তদারকি করার নিয়ম থাকলেও কখনও তিনি তদারকি করেছেন বলে শোনা যায়নি। এতে এসব পন্য সামগ্রী দৃশ্যত লাইনে দাড়োনো মানুষের মাঝে বিক্রী না হলেও বিক্রী শেষ হয়েছে বলে ডিলারদের দাবী। এছাড়া প্রতিবার এসব পন্য সামগ্রী ইউএনওকে জানিয়েই বিক্রী করা হয়েছে বলেও ডিলারদের দাবী।
অপরদিকে পৌরশহরের সীমীত আয়ের ইসমাইল নামের এক ক্রেতা বলেন, ’আমি ট্রলার ঘাটে লাইনে দাড়িয়ে ৬০০ টাকায় ৬লিটার ভোজ্য তেল ও ২ কেজি চিনি কিনতে পেরেছি।’
টিসিবি’র ডিলার লতিফ ষ্টোর’র স্বত্তাধিকারী লতিফ খালাশি বলেন, তারা ইউএনওকে জানিয়ে দু’জন ডিলার একত্রে শহরের একটি নির্দিষ্ট স্থানে টিসিবি’র পন্য সামগ্রী বিক্রী করছেন। প্রতি কেজি চিনি ৫০ টাকা, ডাল ৫০ টাকা এবং তেল ৮০ টাকা মূল্যে তারা বিক্রী করেছেন।
একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ৫ লিটার তেল, ৪ কেজি চিনি ও ১ কেজি ডাল কিনতে পারবেন। বর্তমানে তাদের পন্য সামগ্রী শেষ হয়ে যাওয়ায় ডিপো থেকে মাল ছাড়াতে তারা বরিশালে রয়েছেন। তারা ১২টন পন্য সামগ্রী ছাড় করতে ব্যাংকে টাকা জমা দিচ্ছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
টিসিবি’র ডেপুটি সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ও বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের অফিস প্রধান আনিচুর রহমান বলেন, ডিলারদের পৃথক ভাবে ট্রাকে করে ভ্রাম্যমান ভাবে টিসিবি’র পন্য সামগ্রী বিক্রী করতে হবে।
সিন্ডিকেট করে কিংবা একই স্থানে বসে বিক্রী করার কোন নিয়ম নেই। এছাড়া টিসিবির নির্ধারিত মূল্যে বিক্রী করতে হবে। জেলা পর্যায়ে ডিসি ও উপজেলা পর্যায়ে ইউএনও টিসিবি’র কার্যক্রমে তদারকি করবেন। বর্তমানে ডিপো থেকে ডিলারদের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত তেল, ডাল ও চিনি সরবরাহ করা হচ্ছে। রমজান মাসের পূর্বে সোলা বুট সরবরাহ করা হবে।
কলাপাড়া ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, ‘টিসিবি’র ডিলারদের ডেকে নীতিমালা অনুসরন করে সরকার নির্ধারিত মূল্যে পন্য সামগ্রী বিক্রীর জন্য তাদের প্রাথমিক ভাবে সতর্ক করা হবে। এর ব্যত্যয় হলে পরবর্তীতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযুক্ত ডিলারদের লাইসেন্স বাতিলের জন্য সুপারিশ করা হবে।
Leave a Reply