রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৮ অপরাহ্ন
গলাচিপা প্রতিনিধি॥ পটুয়াখালীর গলাচিপায় দ্বিতীয় ধাপে ইউপি নির্বাচনে পানপট্টির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রামর্দ্দন এলাকার কাজীকান্দা ভোটকেন্দ্রে ইভিএম মেশিন লুটের ঘটনায় মামলার পর গ্রামছাড়া পাঁচ শতাধিক পুরুষ।
পুরুষশূন্য হওয়ার সুযোগে প্রতিপক্ষের বিজয়ী ইউপি সদস্যের সংঘবদ্ধ বাহিনী ওই গ্রামের তিনটি দোকান বন্ধ করে দিয়েছে। অপরদিকে পুরুষশূন্য বাড়িতে এলাকার নারীদের বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দিচ্ছে বিজয়ী ইউপি সদস্য মো. দাদন মিয়ার বাহিনী। এতে ওই গ্রামে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
গলাচিপা থানার ওসি এম আর শওকত আনোয়ার ইসলাম খবর পেয়ে দোকান তিনটি খোলা ও নারীদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন বলে নিশ্চিত করেন। সরেজমিনে গ্রামর্দ্দন ও কাজীকান্দা ভোটকেন্দ্র এলাকা ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
গ্রামর্দ্দন এলাকার বন্ধ থাকা দোকানের মালিক সেলিম খাঁর স্ত্রী মোসা. শাহিনুর বেগম (৩২) বলেন, দাদন মেম্বারের সমর্থক রুস্তম মাস্টার আমার স্বামীর দোকান খুলতে বাধা দেয়। দোকান খুললে পুলিশে ধরিয়ে দেবে বলে হুমকি দেয়। দোকানের রুটি, কেক, বিস্কুটসহ বিভিন্ন খাবার নষ্ট হয়ে গেছে। ভয়ে দোকান খুলতে পারি না। বাজারে আমরা ছাড়াও জাকির খাঁ ও ইলিয়াস গাজীর দোকান আছে। রাতের আঁধারে কারা যেন ঘরে বড় বড় মাটির ঢিল ছুঁড়ে মারে। দরজা ধাক্কায়। আমার হার্টে সমস্যা, তাই ঘর ছেড়ে শাশুড়ির ঘরে আশ্রয় নিয়েছি। রাতের আঁধারে ভয়ে দরজা খুলি না।
শারীরিক প্রতিবন্ধী দিনমজুর আইয়ুব খাঁর স্ত্রী বিউটি বেগম (৪০) বলেন, ‘আমার স্বামী একজন প্রতিবন্ধী। ঠিকমতো হাঁটতে পারে না। এলাকার ৭০০-৮০০ মাইনসের নামে নাকি পুলিশ মামলা করছে। হেই ডরে আমার স্বামীও সবাইর লগে পলাইছে। কাম না করলে টাহা পাই না। স্বামী পলানো, ঘরে চাউল নাই, কাইল কী খামু কইতে পারি না। চাইরডা পোলাপানের (দুই ছেলে-দুই মেয়ে) মোহের দিকে চাইলে কান্দন আয়। আবার সপ্তাহে দুইডা এনজিওর কিস্তি, হেরাও আমাগো বিপদের কতা হোনতে চায় না।
কৃষক শাহজালাল খাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম (৩৫) বলেন, “আমার স্বামীও পুলিশের মামলার ভয়ে এলাকা ছাইড়া পলাইছে। বিজয়ী মেম্বার দাদন মিয়ার ভাই ‘নজির’ মিয়া হুন্ডা লইয়া বাড়িতে আইয়া ডর দেহায়। খালি কয় ‘পুলিশ আইছে, পুলিশ আইছে’। হে (নজির) হগুলডিরে (সকলকে) ধাপ (হুমকি) দেয়, ‘এ কান্দার (এলাকার) পুরুষগুলা পলাইছে ক্যা? পারলে রাস্তায় আউক (আসুক)।’ রাইত ১২টা ১টার দিকে নজির আর তার লোকেরা ঘরের বেড়া, দরজা টাহায় (ধাক্কা দেয়)। আমরা ডাক-চিৎকার দিলে পালাইয়া যায়। ঘরে বয়স্তা (যুবতী) মাইয়া লইয়া ডরের (ভয়) মধ্যে থাহা লাগে। হারা রাইত দাদন ও নজির হুন্ডা লইয়া আমাগো এলাকার মধ্যে ঘোরে। আমরা রাইতে ডরে ঘরের বাইরে যাইতে পারি না (প্রাকৃতিক কাজ সারতে)। আমরা এই ডর থেইক্যা (থেকে) মুক্তি চাই।”
এ বিষয়ে জানার জন্য গ্রামর্দ্দন এলাকার রুস্তম মাস্টারের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে নজরুল ইসলাম নজির (নজিব) বলেন, ‘আমার ছোট ভাই দাদন এ বছর আবারও মেম্বার হইছে। গ্রামের কিছু লোকের সাথে আমার লেনদেন আছে। এ কারণে গ্রামের লোকজনের কাছে যেতে হয়। আমার বিরুদ্ধে মহিলারা মিথ্যা কথা বলছে। আমি কাউকেই খারাপ কোনো কথা বলি নাই।
এ ব্যাপারে পানপট্টি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদ্য বিজয়ী ইউপি সদস্য মো. দাদন মিয়া বলেন, আমি নিজেই ভয়ে আছি। আমার এন্টি গ্রুপ আমাকে হেয় করার জন্য এগুলো করছে। আমি এর কিছুই জানি না।
এ প্রসঙ্গে গলাচিপা থানার ওসি এমআর শওকত আনোয়ার ইসলাম বলেন, ‘এক নারীর মোবাইল পেয়ে আজ মঙ্গলবার দুপুরে সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। দোকান বন্ধ থাকলে খোলার ব্যবস্থা করা হবে। আর কেউ যদি গ্রামে আতঙ্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য ওই গ্রামে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’
Leave a Reply