মানুষ হওয়ার গল্প Latest Update News of Bangladesh

বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১৪ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] অথবা [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




মানুষ হওয়ার গল্প

মানুষ হওয়ার গল্প




আমার হাতেখড়ি শ্রদ্ধেয় মাওলানা মাকসুদুর রহমানের কাছে।সে হিসেবে দাদী, বাবা ও আমি এই তিন প্রজন্মের শিক্ষক তিনি। বলা চলে হুজুর আমার প্রথম পাঠশালা। যিনি শিখেয়েছেন কিভাবে মানুষ হতে…. কিভাবে ধর্মকে আলাদা রেখে মানুষকে ভালোবাসা যায়…..

মানুষের জন্ম কোথায় হয়? কেউ হাসপাতালে। কেউ বাড়িতে। কেউ ইস্টিশনে।যার কিছু নেই সে হয়তো প্রথম আলো দেখে জ্যোৎস্নামাখা চরাচরে।সত্যি বলতে কি আমরা আসলে জন্মাই বহুবার।যেমন আমি এই হুজুরের কাছে মানুষ হতে অযুত-নিযুতবার জন্মেছি। যত বার জন্মেছি ততবারই কোন না কোন ভুল ছিলো। তাই তো হুজুর যত্ম করে আবার জন্ম দিয়েছেন।কথা না শুনলে কানমলা কিংবা বেত্রাঘাত ছিলো জলভাত। কেউ ক্লাসে কথা বলল, সপাং। কেউ পড়া পারে নি সপাং। কোনও কোনও সময় হুজুর জোড়া বেত নিয়ে আধাসেনার মতো টহল দিতেন। আমরা কাঁপতাম। আমাদের কাছে তিনি বাংলার বাঘ।পড়া ভুল হলে এমন মারতেন…।

 

যেন পড়া মুখস্থ করার জন্যই আমাদের মানবজন্ম। অনেক পড়াই আজ মনে নেই।কিন্তু বেতের আওয়াজ ঠিক মনে আছে। তাঁর কণ্ঠস্বরও ছিলো অতি জাঁদরেল। আমাদের স্কুলে বিচিত্র সব ছেলেপুলে ছিলো।এই যেমন মোস্তফা পড়া রেডি না করেই ক্লাসে আসতো।

 

হুজুর একবার ওকে কান ধরে প্রায় ঘণ্টা খানেক দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন। তখন মোস্তফার কেমন লেগেছিলো তা জিজ্ঞেস করা হয়নি। আমাদের স্কুলে কোনও ইউনিফর্ম ছিল না। যে যা খুশি পড়তো। প্রদীপ আসতো হাফ প্যান্ট আর জামা পরে।ও প্রতি ক্লাসে নিয়ম করে ফার্স্ট হতো। তাই হুজুরের আলাদা টান ছিলো প্রদীপের প্রতি। প্রদীপ হিন্দু হলে ও হুজুর ভিষণ রকম ভালোবাসতেন ওকে।কোন ধর্মীয় বিভাজন কখনো দেখি নি হুজুরের কাছে।কোন কোন দিন ক্লাস ফাঁকি দিয়ে স্কুলের পাশে জঙ্গলে যেতাম বুনো ফল খেতে। একদিন ধরা পড়লাম, হুজুর জিজ্ঞেস করলেন কিরে লেখাপড়া কিছু করিস? নাকি দিনভর শুধু টইটই? সে দিন এতো ভয় পেয়েছি যে মুখ থেকে কোন কথা বের হয় নি!!

 

হুজুর চাকরি থেকে অবসরে গেলে ও পড়ানো ছাড়েন নি। বিনামূল্যে কোরআন শিখিয়েছেন অনেককে।বাড়ি গেলে দেখা করি, জানতে চাই গ্রামের নাম রানীপুর কেন? যুদ্ধের সময় কেমন ছিলো এ গ্রাম? যত্ম করে বুঝিয়ে দেন…. মাথা হাত বুলিয়ে দেন…

 

জিজ্ঞেস করেন তোমার কেমন চলছে?
জীবনে আলো যদি কিছু পেয়ে থাকি তা এই প্রবল শিক্ষকের জন্যই। এখন তো বাচ্চাদের গায়ে হাত দিলেই বাপ-মা রে রে করে ওঠেন।

 

আমাদের সময় ওসব ছিলো না। বাপ মা বলে দিতেন হুজুর শুধু হাড্ডি চাই। বাকিটা আপনি রেখে দিয়েন ….
যে স্কুলে হুজুরের সঙ্গে পরিচয় তা দেখি না বহুদিন। জানলার শিকে ঝং ধরেছে হয়তো। স্কুল ঘিরে জঙ্গল।কত কী গাছ। স্কুলের দুই পাশেই সরু সাদা রাস্তা। এই রাস্তা দিয়ে এখন কে হাঁটে কে জানে! হয়তো কেউ হাঁটে না। তবু ও পথ আছে, যেমন ছিলো।

 

বহুকাল ধরে এ পথ দিয়ে হজুর ও আসেন না পড়াতে…
যে-ঘরটায় আমরা পড়তাম তার বিপরীত পাশে দুটো বিল্ডিং হয়েছে।ক্লাসের পাশে এখন বসতি।বাঁশবনে শন শন হাওয়া নেই। বুনো গন্ধ নেই।জঙ্গল উধাও।

 

স্কুলের তাল গাছে সেই বুড়ো পাখির ডানা ঝাপটানো শব্দ শুনিনা বহুকাল….
হুজুর অসুস্থ। মাইল্ডস্ট্রোক করেছেন। শরীরের একপাশ কিছুটা অবশ।রাজধানীর শাহজানপুর ইসলামী হাসপাতালে ভর্তি। দেখতে যাই। কেবিনে স্কুলের গন্ধ। মনের মধ্যে বোশেখ মাসের ঝড়। স্কুলের পাশের খালে হুজুর ওজু করছেন, ওই তো তার জুতা, মেসওয়াক।চোখ ঝাপসা হয়। কান্না লুকাই। হুজুর জিজ্ঞেস করেন, কিরে নামাজ পড়বি না….

 

তাড়াতাড়ি সেরে ওঠুন হুজুর। ধর্মীয় এই বিভাজনের সময় আপনাকে ভিষণ দরকার…এক আকাশ শুভ কামনা আপনার জন্য…

 

সজল মাহামুদের ফেইজবুক থেকে নেয়া

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD