নতুন নামে দলের চিন্তা জামায়াতে Latest Update News of Bangladesh

বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৪১ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] অথবা [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




নতুন নামে দলের চিন্তা জামায়াতে

নতুন নামে দলের চিন্তা জামায়াতে




অনলাইন ডেস্ক:নতুন নামে দল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে জামায়াতে ইসলামীতে। ২০০৯ সালেও একই প্রস্তাব করেছিলেন দলটির কয়েকজন নেতা। তখন তা দলীয় ফোরামে অনুমোদন পায়নি। আগে বিরোধিতা করলেও এবার নতুন নামে দল গঠনের প্রস্তাব এসেছে জামায়াতের মজলিসে শূরা থেকেই। প্রস্তাব বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের নির্বাহী পরিষদকে। চলতি বছরেই নতুন দল গঠিত হতে পারে।

জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জামায়াতের মজলিসে শূরার সভায় এ প্রস্তাব এলেও দলের নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, নতুন দল ধর্মভিত্তিক হবে না। নতুন দল গঠিত হলেও বিলুপ্ত হবে না নিবন্ধন হারানো জামায়াত। দলটি থাকবে ‘আদর্শিক সংগঠন’ হিসেবে, কিন্তু ভোটে থাকবে না। ভোটের রাজনীতিতে থাকবে নতুন দল। তবে একাত্তরে স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই জামায়াতের।

গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের বৈঠকেও নতুন নামে দল গঠন আলোচনায় ছিল বলে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ২০০৯ এবং ২০১০ সালে জামায়াতের রক্ষণশীল অংশ সংস্কার ও নতুন নামে দল গঠনের বিরোধিতা করলেও এবার দলটির সর্বস্তরের নেতারাই এতে একমত। গত ৯ বছর জামায়াতের ওপর চলা ‘দমনপীড়ন’ থেকে বাঁচতে এ ছাড়া আর পথ নেই বলেও মনে করেন তারা।

মজলিশে শূরার প্রস্তাব রয়েছে জামায়াতের গঠনতন্ত্রের ৬ (৪) ধারা স্থগিত রাখার। ৬ ধারায় জামায়াতের চারটি স্থায়ী কর্মসূচি বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথম তিনটি কর্মসূচি ধর্মীয়। ৬ (৪) ধারায় বলা হয়েছে, ‘গণতান্ত্রিক পন্থায় সরকার পরিবর্তন এবং সমাজের সর্বস্তরে সৎ ও চরিত্রবান লোকের নেতৃত্ব কায়েমের চেষ্টা করা।’ এ ধারা স্থগিত হলে জামায়াত ভোটের রাজনীতি থেকে স্থায়ীভাবে সরে যাবে। দলটির সূত্র জানিয়েছে, এ ধারা স্থগিত হলে জামায়াত রাজনৈতিক দল থেকে একটি ধর্মীয় সংগঠনে পরিণত হবে। নতুন নামে দল গঠন করা হলেও, জামায়াত ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে থেকে যাবে। ‘দ্বীনি দাওয়াতের’ কাজ চালিয়ে যাবে।

অবশ্য নতুন দল খুব শিগগির হবে, এমন সম্ভাবনা নেই। জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, আপাতত তারা নীরব থাকবে। রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচিতে থাকবে না। ‘দ্বীনি দাওয়াতের’ কার্যক্রম জোরদার করা হবে। থাকবে না মিছিল-মিটিংয়ের রাজনীতিতেও।

নতুন নামে দল গঠনের প্রস্তাবের কথা স্বীকার করেছেন দলটির কর্মপরিষদ সদস্য এহসানুল মাহবুব যোবায়ের। তিনি গত মঙ্গলবার সমকালকে বলেছেন, জামায়াত একটি বড় দল। দলে অনেক ধরনের প্রস্তাব, চিন্তা থাকে। দলের শীর্ষ নেতারা আলোচনা করে ঠিক করেন, কোন প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হবে, কোনটি বাতিল করা হবে।

ছাত্রশিবিরের সাবেক একজন সভাপতি যিনি বর্তমানের জামায়াতের কোনো পদে থাকলেও নতুন নামে দল গঠনের সমর্থক তিনি বলেছেন, পৃথিবী ও সমাজ বদলে গেছে। পরিবর্তিত পৃথিবীতে রাজনীতিও আগের মতো নেই। ইসলামী রাজনীতির চেয়ে এখন বেশি জরুরি ‘সাম্য’ ‘গণতন্ত্র’, ‘সামাজিক ন্যায়বিচারে’র রাজনীতি।

নতুন দলের রূপরেখা সম্পর্কে জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, নতুন নামে দল গঠিত হলে তা হবে সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচারের স্লোগান নিয়েই। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কেও নতুন দলের অবস্থান হবে পরিস্কার। নতুন দল জামায়াতের একাত্তরে স্বাধীনতার ভূমিকাকে সমর্থন করবে না। তবে এ বিষয়ে নির্বাহী পরিষদের কোনো সদস্যের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। দলটির কোনো পর্যায়ের নেতাই এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি।

ভারত, তুরস্ক, মিসর, তিউনিশিয়া, সুদানসহ আরও কয়েকটি দেশের উদাহরণ টেনে নতুন দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিতর্কিত জামায়াত। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) রাজনৈতিক শাখা। আরএসএস ভোটে অংশ নেয়নি। সংগঠনটি ‘আদর্শিক প্ল্যাটফর্ম’ হিসেবে কাজ করে। ভোটের মাঠে এর আদর্শ বাস্তবায়ন করে বিজেপি।

আন্তর্জাতিকভাবে জামায়াতের আদর্শের সঙ্গে মিল রয়েছে মিসরে প্রতিষ্ঠিত দল ইখাওয়ানুল মুসলিমিনের (মুসলিম ব্রাদারহুড)। জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা সৈয়দ আবুল আলা মওদুদীর অনুসারী হাসানুল বান্না মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠাতা। মুসলিম ব্রাদারহুড ভোটের রাজনীতিতে অংশ নেয় না। তবে বিভিন্ন দেশে এর রাজনৈতিক শাখা ভোটে অংশ নেয়। ইখাওয়ানের রাজনৈতিক শাখা ন্যাশনাল কংগ্রেস সুদানে ক্ষমতায় রয়েছে। ইখাওয়ান ভাবাদর্শের দল একে পার্টি তুরস্কে ক্ষমতাসীন। আরব বিশ্বের প্রতিটি দেশেই ইখাওয়ানের আদর্শে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল ভোটের রাজনীতিতে রয়েছে। মিসরে ইখাওয়ানের রাজনৈতিক শাখা জাস্টিজ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি ২০১২ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হলেও পরের বছর সামারিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারায়।

মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকা এবং দলের নেতাদের যুদ্ধাপরাধের কারণে জামায়াত রাজনীতিতে সবসময় বিতর্কিত। ২০১০ সালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরুর পর থেকেই জামায়াত প্রবল চাপে রয়েছে। দলটির শীর্ষস্থানীয় পাঁচ নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে মানবতা অপরাধের দায়ে। আরও দুই নেতার ফাঁসির রায় হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। একজন ভোগ করছেন আমৃত্যু কারাদণ্ড। যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে ২০১০ সালে আন্দোলনে নেমেও সফল হতে পারেনি জামায়াত।

জামায়াতের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, বছরে দুইবার মজলিশে শূরার অধিবেশনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে গত ৯ বছরের মতো এবারও ‘পরিবেশ পরিস্থিতির’ কারণে অবিবেশন প্রকাশ্যে হয়নি। জামায়াতের ১৩টি সাংগঠনিক অঞ্চলে পৃথক অধিবেশন হয়। তাদের সবার মতামত এসেছে নির্বাহী পরিষদে।

জামায়াতের মজলিশে শূরার বিশ্নেষণ, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ‘নজিরবিহীন কারচুপি ও ভোট ডাকাতি’ হলেও জনগণ এর প্রতিবাদে নেমে আসেনি। এবারের নির্বাচনেও জামায়াতের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে প্রচার চালান সরকার দলের প্রার্থীরা। জামায়াতের যেসব প্রার্থী একাত্তরে শিশু ছিলেন তারাও এ প্রচারের বিরুদ্ধে জবাব দিতে পারেননি। বরং এ ইস্যুতে কোণঠাসা হয়ে পড়েন জামায়াতের প্রার্থীরা।

জামায়াত নামে রাজনীতি করলে, ভবিষ্যতেও একই পরিস্থিতিতে পড়তে হবে বলে মনে করেন মজলিশে শূরার সদস্যরা। তাদের অভিমত, সরকারি ‘প্রচার-প্রপাগান্ডায়’ পরিস্থিতি যেখানে পৌঁছেছে, তাতে জামায়াত নামে রাজনীতি চালিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। জামায়াতের কারণে ভারতের চাপে রয়েছে বিএনপি। ভোটের আগেই ভারত খোলাখুলিভাবে তার জামায়াতবিরোধী মনোভাবের কথা জানিয়ে দেয়। বৃহৎ প্রতিবেশীর এমন প্রবল বিরোধিতার মুখে জামায়াতের ভোটের রাজনীতিতে ফিরে আসা কঠিন হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে ইসলামপন্থিদের উত্থান হতে দেবে না ভারত। তাই নতুন নামে দল গঠন করা উচিত।

তবে নতুন নামে দল গঠনের উদ্যোগে প্রধান কারণ জামায়াতের নেতাকর্মীদের সুরক্ষা। দলটির মজলিশে শূরার বিশ্নেষণ, ২০০৮ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবি জোরদার হওয়ার পরপরই জামায়াতের সংস্কার প্রয়োজন ছিল। আওয়ামী লীগ একে ইস্যু করে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে জামায়াতের ওপর ‘দমনপীড়ন’ চালাচ্ছে। দলের নেতাকর্মীরা অরক্ষিত হয়ে পড়েছেন। শুধু ‘জেল জুলুম’ নয়, জামায়াত নেতাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বেদখল হয়ে পড়েছে। অনেক কর্মী জেলে। অনেক কর্মী বেকার। কর্মী-সমর্থকদের রক্ষায় নতুন নামে দল গঠনের মত এসেছে।

জামায়াতের অধিকাংশ নেতা নতুন দল গঠনের পক্ষপাতী হলেও, একটি অংশের বিরোধিতাও রয়েছে। তারা বলছেন, নাম বদলে ‘দমনপীড়ন’ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না। বরং নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে যেতে পারেন। এতে জামায়াত বিলুপ্তির দিকে এগোতে পারে।

স্বাধীনতার পর জামায়াত নিষিদ্ধ হয়। ১৯৭৫-এর পর মাওলানা আব্দুর রহিমের নেতৃত্বে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ (আইডিএল) নামে রাজনীতিতে সক্রিয় হয় জামায়াত। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে আইডিএল জোট ২০টি আসন পায়। ১৯৮০ সালে আব্দুর রহিমের প্রবল বিরোধিতার পরও জামায়াতকে পুনরুজ্জীবিত করেন গোলাম আযম। আব্দুর রহিম ও তার অনুসারীদের অভিমত ছিল, একাত্তরের ভূমিকার কারণে জামায়াত নামে সফলতা পাওয়া সম্ভব নয়। পরে আব্দুর রহিমকে দল থেকেও বাদ দেওয়া হয়।

২০১০ সালে কামারুজ্জামান ও মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে জামায়াতের ভেতর সংস্কারের প্রচেষ্টা চলে। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে সামনে রেখে এ প্রচেষ্টা চালানো হয়। তাদের পরিকল্পনা ছিল নতুন নামে দল গঠন করা ও জামায়াতের যেসব নেতা স্বাধীনতার বিরোধী ছিলেন তাদের নতুন দল থেকে দূরে রাখা। তবে কট্টরপন্থি নেতাদের বিরোধিতার মুখে সংস্কারের উদ্যোগ থেমে যায়।সুত্র,সমকাল

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD