মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৩৯ অপরাহ্ন
শাকিব বিপ্লব: বরিশাল মহিলালীগের এক নেত্রী ধর্ষিত হয়েছেন নিজ দলীয় নেতার দ্বারা। অঝর ধারায় কাঁদলেন, অভিযোগ জানালেন কেন্দ্রীয় মহিলা লীগ নেত্রী শাহান আরা আবদুল্লাহর কাছে। তার পুত্র নবনির্বাচিত মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহও নাকি বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কেউ মাথা ঘামায়নি। বরং পরে দেখা যাবে, এই আশ্বাসে ধর্ষিতা ওই নেত্রী নীরব হয়ে যান। কিন্তু তাতে ক্ষ্যান্ত দেয়নি ধর্ষক চক্রটি। প্রতিনিয়ত তার বাড়িতে চড়াও হচ্ছে, হুমকি-ধামকি দিচ্ছে চেপে যেতে। নগরীর পলাশপুর এলাকার এ ঘটনা কম-বেশি জানাজানি হলেও ধর্ষিতার পাশে নেই কেউই।অভিযোগ রয়েছে, ধর্ষকদের একজন শ্রমিকলীগের স্থানীয় শীর্ষ সারির নেতা।
সাথে ছিল স্থানীয়ভাবে ধনকুব মোস্তফা হাওলাদারসহ আরো ৪জন। এই ঘটনার পরও এক সময়কার বিএনপি সমর্থিত হিসেবে পরিচিত মোস্তফা হাওলাদারকে দলে ভেড়ানোর উদ্যোগ প্রক্রিয়াধীন।বিলম্বপ্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, ৫নং ওয়ার্ড সংশ্লিষ্ট পলাশপুরের বাসিন্দা ওই নারী ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এক সন্তানের জননীকে একাকী ঘরে পেয়ে গত ২১ এপ্রিল দুপুরে ৪জন মিলে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। অনেকটা জিম্মি করে এই অপকর্ম সাধন করায় স্থানীয়রা বিষয়টি প্রথমে আঁচ করতে পারেনি। পরবর্তীতে অসুস্থ হয়ে পড়লে জানাজানি হয়ে যায়। তাছাড়া ওই নেত্রী সাংগঠনিকভাবে বেশ পরিচিত হওয়ায় বিষয়টি এলাকাভিত্তিক আলোচনায় প্রাধান্য পায়। কিন্তু তার চেয়েও ধর্ষকরা আরো শক্তিধর বলে প্রতিবাদে কেউ মাথায় আগ বাড়িয়ে সিঁদুর নিতে চাচ্ছে না।একপর্যায়ে ওই নেত্রী স্বীকারোক্তি দেন, স্থানীয় শ্রমিকলীগ সভাপতি মালেক হাওলাদার ও মোস্তফা হাওলাদারসহ আরো দু’জন নাসির এবং আনোয়ার একত্রিত হয়েই তার উপর এই পাশবিক নির্যাতন করে। এসময় ধর্ষিতার শিশু কন্যাকে বাড়ির উঠানে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। ঘটনার ৪ দিন পর ওই নেত্রী বরিশাল সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, ধর্ষিতার আলামত স্পষ্ট। তার শরীরে একাধিক হিংস্রতার ছাপ রয়েছে।তার স্বামী জামালের ভাষ্য, এলাকার দলীয় নেতার নেতৃত্বে সংঘটিত এই কর্মকান্ড নিয়ে তিনি থানা পুলিশ পর্যন্ত যেতে চাচ্ছেন না শাহান আরা আবদুল্লাহর একটি প্রতিশ্রুতির আলোকে। তিনি ঘটনার দু’দিন পরেই বরিশালে অবস্থানকালে কেন্দ্রীয় এই মহিলালীগ নেত্রী তথা মন্ত্রী আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর সহধর্মিনীর সাথে সাক্ষাৎ করে ঘটনার স্ববিস্তর বর্ণনা দেন এবং একটি লিখিত অভিযোগ দিয়ে আসেন। এসময়কালে সিটি নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ততা এবং তার পুত্র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ মেয়র প্রার্থী হওয়ায় তিনি জানান নির্বাচন শেষ হলে এ বিষয়ে বিহিত করা হবে।একটি সূত্র জানায়, পরবর্তীতে সাদিক আবদুল্লাহ কোন এক মাধ্যম বিষয়টি জানতে পারেন। তিনি অসুস্থ ওই নেত্রীকে হাসপাতালে দেখতে এসে ঘটনার সত্যতা নেত্রীর মুখ থেকেই অবহিত হন। পরবর্তীতে সাদিক আবদুল্লাহ পলাশপুরে নির্বাচনী প্রচারনায় গেলে স্থানীয় এই নেত্রী দলের নেতৃত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা নেতা সাদিক আবদুল্লাহকে সামনা-সামনি পেয়ে পুনরায় বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন।
এসময় সেখানে বেশ লোক সমাগমও ছিল। সাদিক বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বস্ত করে আসেন। ওই পর্যন্তই শেষ। আর এ নিয়ে কোনো হইচই নেই। জানা গেছে, ওই নেত্রী শুধু নিজেই নয়, তার স্বামী জামালের সাথে দলীয় সূত্রে হাসানাত পরিবারের সুসম্পর্ক রয়েছে। দিন গেল অনেক, নির্বাচনও শেষ। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো সুরাহা হবে কিনা তা জানতে শাহান আরা আবদুল্লাহ ও সাদিক আবদুল্লাহর সাথে ধর্ষিতার স্বামী কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করে কালিবাড়ি সড়ক থেকে ফিরে আসেন বলে জানান।জামালের দাবি, তিনি দলীয় সমর্থক এবং তার স্ত্রী দলের স্থানীয় পর্যায়ের একজন নেত্রী। সুতরাং বিষয়টি তিনি আইনীভাবে নয় দলের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিতে চান। অপর একটি সূত্রের দাবি- কোনো এক মাধ্যম এ ঘটনা থানার দরজায় পৌছেছিল। কাউনিয়া থানার ওসি (তদন্ত) গোলাম কবিরসহ আরো এক কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গেলে কেউ সাক্ষী দিতে চায়নি। সবাই শুধু মৌখিকভাবে ঘটনা শুনেছেন বলে জানায়। পরে পুলিশ কর্মকর্তারা মেডিকেল সার্টিফিকেট নিয়ে নির্যাতিতাকে দেখা করার পরামর্শ দিয়ে আসে।এদিকে প্রতিবাদমূখর জামালের এই দৌঁড়ঝাপের মুখে ধর্ষণ চক্রের হোতা শ্রমিকলীগ নেতা মালেক ও মোস্তফা তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে এখন রীতিমত ওই নেত্রীর বাড়িতে চড়াও হয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে, বলছে বাড়লে খবর আছে। এ বিষয়টি নিয়ে ওয়ার্ড মহিলালীগও দ্বিধাবিভক্ত। সংগঠনের সভাপতি বিউটি ও সাধারণ সম্পাদক জেসমিন পরস্পরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আছে বলে জানা গেছে।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, ওয়ার্ড শ্রমিকলীগের সভাপতি মালেক সাদিক আবদুল্লাহর কাছের লোক হিসেবে পরিচিত। নির্বাচনকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের এই মেয়র প্রার্থী পলাশপুরে গেলে তাকে এই শ্রমিকলীগ নেতা প্রচারনায় বেশ সহায়তা করেন। এমনকি বিশালকায় গেইট নির্মাণ সাদিক আবদুল্লাহকে অভ্যর্থনাও জানান। ওই গেইট নির্মাণে সব ব্যয়ভার মোস্তফার কাছ থেকে যোগান আসে। মোস্তফা একজন ভূমিদস্যু হিসেবে এলাকায় পরিচিত। তার পরিবার মাদক ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট বলে নানামুখী অভিযোগ রয়েছে। অবশ্য থানা পুলিশের কাছে মোস্তফার বিরুদ্ধে এই অভিযোগের কোনো তথ্যাদি নেই। রাতারাতি ধনবান হয়ে যাওয়া এই মোস্তফাকে এখন দলে টানতে মধ্যস্ততার ভূমিকায় রয়েছে শ্রমিকলীগ নেতা মালেক। জানা গেছে, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতারাও এই প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছে। কিন্তু চলমান আগস্ট শোকের মাস হওয়ায় আপাতত তার যোগদানের আনুষ্ঠানিকতা থেকে বিরত রাখা হয়েছে।
কিন্তু বিস্ময়কর বিষয় হলো- মোস্তফার সাথে যোগাযোগ করা হলে ধর্ষণ ঘটনার সাথে তার সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকারতো করেনই উল্টো নিজেকে এক সময় যুবলীগের তুখর নেতা হিসেবে দাবি করেন। এবং এখনো দলীয়ভাবে সক্রিয় থাকার কথা জানিয়ে নিজেই বললেন, ধর্ষণের যে ভুয়া অভিযোগ তোলা হয়েছে তার বিচার চেয়ে তিনিও সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতাদের কাছে একটি সুরাহা চেয়েছেন। যদি তিনি দলের সাথেই সম্পৃক্ত থাকেন তাহলে নতুন করে যোগদানের প্রশ্ন কোথায়। এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেল আরো কিছু তথ্য। আসলে তিনি বিএনপির শাসনামলে মজিবর রহমান সরোয়ারের সাথে যোগাযোগ রেখে পলাশপুর সংলগ্ন কীর্তনখোলার চর দখলে বেশ ভূমিকা রাখেন। সেখান থেকেই অর্থের চাবিকাঠি পেয়ে এখন ধনকুবের।
ফলে নতুন করে দলে যোগ দিতে শ্রমিকলীগ নেতা মালেকের সাথে ঐক্য গড়ে তুলে এই দু’জনে নয়া রাজত্ব তৈরী করেছেন। সবকিছু ম্যানেজ করছেন মালেক। ফলে তার দলে যোগদান এখন সময়মাত্র। এ কারণেই ওই ধর্ষণ ঘটনা নিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগ ও নির্বাচিত মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ নীরব কিনা, তা নিয়ে এলাকায় আলোচনায় বিষয়টি বেশ জোর পেয়েছে। আলোচনার টেবিলে প্রশ্ন উঠেছে, দলীয় নেত্রীর যদি হয় এই হাল তাহলে বরিশাল পরিস্থিতি কোন পথে যাচ্ছে ?
Leave a Reply