বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪২ পূর্বাহ্ন
কুয়াকাটা প্রতিনিধি॥ ৬৪ বছর বয়সী মো. নজরুল ইসলামকে সবাই ‘নজির মাঝি’ হিসেবেই চেনেন। কারণ তিনি একজন ট্রলার মাঝি। তবে এখন আর তেমন সমুদ্রে যান না। মাঝে মধ্যে বদলি মাঝি হিসেবে ট্রলারের হাল ধরেন।
নজির মাঝির বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানার লতাচাপলী ইউনিয়নের মম্বিপাড়া গ্রামে। মাছ ধরতে ‘এফবি আল-হাসান’ ট্রলার নিয়ে ৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সমুদ্রে যান তিনি। তার সঙ্গে ছিলেন আরো ১৭ জন জেলে। পটুয়াখালীর মৎস্য বন্দর মহিপুরের মেসার্স মনোয়ারা ফিশ ঘাট থেকে গভীর সমুদ্রে যাত্রা শুরু করেন তারা।
সমুদ্রে মাছ শিকার করা অবস্থায় আটদিনের মাথায় বিকল হয় ট্রলারের ইঞ্জিন। ভাসতে ভাসতে ট্রলারটি গভীর সমুদ্রে চলে যায়। সবাই জীবনের আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। অবশেষে ৩২ দিন পর নৌবাহিনীর সাহায্যে বেঁচে ফিরে আসেন নজির মাঝিসহ সবাই।
নজির মাঝি বলেন, আটদিনে প্রায় দুই লাখ টাকার মাছ ধরেছি। মাছ ধরা অবস্থায় ১৭ ডিসেম্বর হঠাৎ ট্রলারের ইঞ্জিন নষ্ট হয়। এরপর শত চেষ্টা করেও ইঞ্জিন ঠিক করা যায়নি। সাগরে ভাসতে ছিলাম। ভাসতে ভাসতে গভীর সমুদ্রের দিকে যাচ্ছে ট্রলারটি। গেরাপি মেরেও ট্রলার থামানো যাচ্ছে না। ট্রলারের বাজার-সদায়, জ্বালানি শেষ হয়ে গেছে। সমুদ্রের পানিও লবণ। তাই খাবার পানির জন্য ট্রলারে থাকা বরফ পানির ১২টি ড্রামে ভর্তি করি। এতে ৪ ড্রাম পানি হয়েছে। বরফ গলা পানি পান করেছি আমরা। শিকার করা মাছ আগুনে পুড়ে খেয়েছি। যখন জ্বালানি শেষ হয়ে গেছে তখন মাছ কেটে রোদে শুকিয়ে শুকনা মাছ খেয়েছি। এভাবেই কেটেছে দিন-রাত।
তিনি বলেন, ট্রলার আস্তে আস্তে গভীর সমুদ্রে আড়াইশ বাম পানিতে চলে যায়। আমরা সবাই বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছি। কারণ এত গভীর সমুদ্রে কোনো ট্রলার বা জাহাজ আসার কথা না। হঠাৎ ২৭ দিনের মাথায় দূর থেকে একটি জাহাজ দেখতে পাই। কিন্তু জাহাজ আমাদের দেখেনি। অন্যত্র চলে গেছে। ঠিক এর পরদিন একটি জাহাজ আমাদের ট্রলার দেখে কাছে আসে এবং আমাদের খাবার দেয়।
এরপর অন্য একটি জাহাজে খবর দিয়ে আমাদের ২০ ঘণ্টা টেনে সেন্টমার্টিনে নিয়ে যায়। সেখানে আমাদের সবার চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করেন। পরদিন আসরের পর অন্য একটি ট্রলারে বেঁধে সেন্টমার্টিন থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেয়। এর পরদিন সকাল ১০টায় কক্সবাজার এসে পৌঁছাই। ট্রলার কক্সবাজারে রেখে ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরি।
নজির মাঝি আরো বলেন, ট্রলার মালিক হানিফ খলিফা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। শহিদ কোম্পানির চার বছর ব্যবহৃত পুরনো বাতিল ইঞ্জিন এনে ট্রলারে স্থাপন করেছেন। যা আমার জানা ছিল না। পুরনো ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দিলে সমুদ্রে থাকা অবস্থায় ঠিক করা সম্ভব হয় না। ফিটনেসবিহীন ট্রলার নিয়ে সাগরে মাছ শিকারে না যাওয়ার জন্য আমি সবাইকে অনুরোধ করছি।
বাড়ি ফিরে আসা অন্য জেলেরা হলেন, পটুয়াখালী সদর উপজেলার মহিপুর সদর ইউনিয়নের নজিবপুর গ্রামের আল-আমিন, বরগুনার তালতলী উপজেলার ছোট বগি এলাকার শাকিল, শামিম, তোফাজ্জেল হোসেন ফকির, রমজান তালুকদার, শাহ আলম, আবদুল আজিজ, খলিল, হোচেন এবং লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার হাফিজুল্লাহ, কাশেম, ইউসুফ, বাবুল, আবুল কাশেম, কবির হোসেন, বাবলু ও শ্রী জগানাত।
Leave a Reply