শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪১ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল :
দেড়যুগ আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। নেয়া হয়েছে অফিসসহ সকল কার্যক্রম গুটিয়ে। সেই থেকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এরপরও চরম জীর্ণদশার অফিস ভবনসহ স্টাফ ও অফিসার্স কোয়ার্টারে বসবাস করছে অন্তত নয়টি হতদরিদ্র পরিবারের ৪২ জন মানুষ। প্রত্যেকটি ভবনের ছাদসহ পলেস্তরা খসে পড়েছে। কার্নিশ ভেঙ্গে গেছে। বৃষ্টির সময় পানি চুইয়ে পড়ায় পলিথিন দিয়ে থাকছে। জানালার গ্রিলসহ তক্তা নেই।
দরজা নেই। ছালা টানিয়ে থাকছে। নিতান্ত দরিদ্র এসব পরিবার জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে বছরের পর বছর বসবাস করছে। ফলে ভবনগুলো ধসে বড় ধরনের প্রাণহানির শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া কেউ কেউ পানি উন্নয়ন বোর্ডের এইসব ভবনের সঙ্গে টিন-কাঠের বেড়াসহ ছাউনি দিয়ে আবাসস্থল করেছেন। এসব কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অন্তত ১৫ কোটি মূল্যের সাড়ে ছয় একর জমিসহ পুরনো স্থাপনা বেহাতের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মহিপুরে এ জমির অবস্থান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শ্রমজীবী কালাম শেখের স্ত্রী নুরজাহান পরিত্যক্ত একটি ভবনের বারান্দায় রান্না করছিলেন। নিজে মাছের আড়তে রান্না করেন। স্বামী কামলা দেন। পাঁচ সন্তানের মা নুরজাহান জানান, নিতান্ত দায় ঠেকে জীবনশঙ্কায় এখানে থাকেন। দেখালেন সব জায়গা দিয়ে পানি পড়ে। রাতে বৃষ্টি হলে ঘুমুতে পারেন না। ভবনটির পুবদিকে থাকেন আরেক হতদরিদ্র হামেদ মাদবর। পাঁচজনের সংসারে আছে শুধু এই অস্থায়ী আশ্রয়স্থল। তাও মৃত্যুশঙ্কায়। কয়েকবার পলেস্তরার বড় খন্ড মাথায়-শরীরে পড়ে আহত হয়েছেন। সাব্বির জানায়, তিনি আহত হলে মাথায় তিনটি সেলাই দিতে হয়েছে। আফতাব জানান, আহত হয়ে এখন চোখে সমস্যা হয়েছে।
শাকিবের এক হাত ভেঙ্গে গেছে। তারপরও কোন আশ্রয়স্থল না থাকায় এরা থাকছেন। সোহাগ, নুরুন্নাহার, সোবাহান, শিমুল, হাফেজ মাঝি, নুরবেগম, লাইলি বেগম, ফিরোজা বেগম ও মরিয়ম এই নয়টি পরিবার সন্তান-সন্তুতি নিয়ে থাকছেন। তাঁদের দাবি অন্তত বসতির জন্য একটু ঠাঁইয়ের সুযোগ করে দেয়া হোক।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব অফিস ও স্টাফ কোয়ার্টার করার জন্য ষাটের দশকে মহিপুরে শিববাড়িয়া মৌজায় এ পরিমান জমি অধিগ্রহন করা হয়। নির্মাণ করা হয় অফিস, স্টাফ ও অফিসার্স কোয়ার্টার। ২০০০ সালের দিকে ওখানকার অফিসটি গুটিয়ে ফেলা হয়।
জীর্ণদশার আবাসিক কোয়ার্টার এবং অফিসের মধ্যে বহিরাগত ভাসমান হতদরিদ্র এসব পরিবার বসবাস করছে। এদের একজন নুরুন্নাহার জানান, তারা নিতান্ত দায় ঠেকে এখানে বসবাস করছেন। কোন ভবনে মাদকসেবী ও জুয়াড়িদের আড্ডা বসে।
উত্তরদিকে এ জমিতে একাধিক টিনশেড স্থাপনা তোলা হয়েছে। এতে বেদখলের পাশাপাশি ভবন ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের জানান, শীঘ্রই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply