শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৭ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক: সম্পত্তি নিয়ে দুই স্ত্রী ও সন্তানদের দ্বন্দ্বে মৃত্যুর পর সাতক্ষীরার বিশিষ্ট আইনজীবী মো. ইয়ার আলীর (৮০) দাফন আটকে গেছে।
ষষ্ঠবারের মতো মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (৩০ জুলাই) সকাল ৮টার দিকে মারা যান তিনি। পরে তাকে নিয়ে আসা হয় সাতক্ষীরার কলরোয়া উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের বাড়িতে।
তবে ৩৬ ঘণ্টা পার হলেও মঙ্গলবার (৩১ জুলাই) বিকেলে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দাফনের কাজ সম্পন্ন হয়নি। এরই মধ্যে মরদেহে পচন ধরেছে।
জানা যায়, ইয়ার আলীর মরদেহ বর্তমানে দ্বিতীয় স্ত্রীর বাড়িতে রয়েছে। দাফনে বাধা দিচ্ছেন প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অ্যাডভোকেট ইয়ার আলীর প্রথম স্ত্রী জোহরা খাতুনের চার মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে। অপরদিকে দ্বিতীয় স্ত্রী শাহিদা খানমের একটি ছেলে। ইয়ার আলী তার জীবদ্দশায় ৩০ বিঘারও বেশি সম্পত্তি, কোটি টাকার ওপরের ব্যাংক ব্যালান্স এমনকি বসত বাড়ির পুরোটাই তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও ছেলে প্রিন্সের নামে লিখে দিয়েছেন।
জমি বাড়ি ও গচ্ছিত টাকার এক কানাকড়িও পাননি তার প্রথম স্ত্রী ও সন্তানরা। অ্যাডভোকেট ইয়ার আলির মৃত্যুর পর তারা পৈতৃক সম্পত্তির ভাগ দাবি করেছেন। এসব না পাওয়া পর্যন্ত ইয়ার আলীকে দাফন করতে দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তারা।
এরই মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য ওই বাড়িতে গেছেন সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল হোসেনসহ আইনজীবীদের একটি দল। একই সঙ্গে সেখানে যান কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ আহম্মদ এবং স্থানীয় কয়লা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইমরান হোসেনসহ আরও অনেকেই। তারা বিষয়টি সমঝোতামূলক নিষ্পত্তির চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
এদিকে এরই মধ্যে মরদেহে পচন ধরতে শুরু করেছে বলে জানান এলাকাবাসী। চেয়ারম্যান জানান, তার পেট ফুলে গেছে। নাক ও কান দিয়ে বেয়ে রক্ত পড়ছে এবং দুর্গন্ধ ছুটছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রয়াত আইনজীবী ইয়ার আলীর প্রথম পক্ষের স্ত্রী জোহরা খাতুনের ছেলে অ্যাডভোকেট হাসনাত কবির বলেন, ‘আমার বাবা আমার মা ও তার চার মেয়ে এবং আমাকেসহ প্রথম পক্ষের সবাইকে জমি টাকা ও বাড়ির অংশ থেকে বঞ্চিত করে গেছেন। তিনি আমাদের কাউকে এক কানাকড়িও দেননি। তিনি তার সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দ্বিতীয় পক্ষের মা ও তার ছেলে প্রিন্সকে দিয়ে গেছেন। এতেই আমরা ক্ষুব্ধ। সহায়-সম্পত্তির প্রাপ্য অংশ আমাদের নামে না দেওয়া পর্যন্ত বাবার মরদেহ দাফন করতে দেওয়া হবে না।’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে বারবার চেষ্টা করেও দাফনে নিজের ব্যর্থতার কথা শিকার করেন কয়লা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ইমরান হোসেন।
তিনি বলেন, ‘প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রী দুই পক্ষই তাদের নিজ নিজ অবস্থানে অনড়। প্রথম পক্ষ বলছেন ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক তাদেরকে কিছু সম্পদ দিতে হবে। অপরদিকে দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী ও তার সন্তানদের দাবি, প্রয়াত আইনজীবী ইয়ার আলিকে গত ৩২ বছর ধরে সেবা দিচ্ছেন তারা। এজন্য তিনি সন্তুষ্ট হয়ে সব কিছু তাদের নামে দিয়ে গেছেন। এর থেকে এক শতক জমিও আমরা দেব না।’
চেয়ারম্যান আরও জানান, ‘গ্রামের ৯৯ শতাংশ মানুষ প্রথম পক্ষকে কিছু সম্পদের ভাগ দেওয়ার পক্ষে। কিন্তু তাদের চাওয়াও নিষ্ফল হয়ে গেছে। তবে দ্বিতীয় পক্ষের দাবি— প্রয়াত ইয়ার আলী তার পৈতৃক জমির পুরোটাই প্রথম পক্ষকে দিয়ে গেছেন। তবে নিজের উপার্জিত অর্থ ও সম্পদের কেনা অংশ তাদের দেননি। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় পক্ষ সাড়ে সাত বিঘা জমি নিজেদের নামে রেখে বাকিটা ভাগবাটোয়ারা করে দিতে সম্মত হয়েছে।’
এ বিষয়ে স্ট্যাম্পে লেখালেখি চলছে। এটি হলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলেও জানান চেয়ারম্যান ইমরান হোসেন।
এ প্রসঙ্গে কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ আহম্মদ বলেন, প্রয়াত আইনজীবী ইয়ার আলীর দাফন সম্পন্ন করার নির্দেশ চেয়ে জেলা আইনজীবী সমিতি সাতক্ষীরা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেছে। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে যথাযথ নির্দেশ পেলে প্রয়োজনে পুলিশ ইসলামী শরিয়ত মতে দাফন করার ব্যবস্থা করবে।
এমন একটি নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
এদিকে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন বলেন, ‘আমি সমঝোতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। শেষ পর্যন্ত আদালতের শরণাপন্ন হয়ে দাফনের নির্দেশ পেয়েছি। এ নির্দেশের কপি কলারোয়া থানায় পৌঁছালেই পুলিশ তার দাফনের ব্যবস্থা নেবে।
সন্ধ্যা নাগাদ বিষয়টির নিষ্পত্তি হতে পারে বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply