সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১৯ অপরাহ্ন
ভোলা প্রতিনিধি॥ ভোলায় সড়ক ও জনপদের ২৪ কোটি টাকার কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। রাস্তার সাবভেজ, কার্পেটিংসহ কাজের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নিয়ম মানা হচ্ছে না এবং নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানা যায়। দুটি ব্রিজ, ৩৪টি বাক সরলীকরণ মিলে ২৪ কোটি টাকার এসব কাজে যেন অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করে ডিসেম্বরের মধ্যে বিল তুলে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদার মাহফুজ খানকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে কাজ শেষ করে বিল তুলে নিতে সওজ সাহায্য করছে। জানা যায়, ২০১৮ সালের মার্চে বরিশালের মাহফুজ খান জেভিতে ভোলার ইলিশা থেকে চরফ্যাশন পর্যন্ত ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এ কাজটির টেন্ডার প্রকৃয়া সম্পন্ন হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভোলার বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাসস্টান্ডের পর পৌড়সভার সীমানায় ও চরফ্যাশনের আগে দুটি পুরোনো ব্রিজ ভেঙে নতুন দুটি ব্রিজ নির্মাণ করার কথা। ইতিমধ্যে একটি শেষ ও ভোলা পৌড়সভার সীমানার ব্রিজটি নির্মাণের কাজ চলমান। কিন্তু তাতে ব্যবহার করা হচ্ছে নিন্মমানের উপকরণ।
সওজের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সোলায়মান জানান, আমি জুলাইয়ের শেষে ভোলায় আসি। আগে কি ধরনের উপকরণ দিয়ে কাজ হয়েছে বলতে পারবো না। তবে এখন বাকি অংশের কাজে কোনো ধরনের খারাপ উপকরণ ব্যবহার করা হবে না।
এদিকে সওজ সূত্রে জানা যায়, ৩৪টি বাক সরলীকরসহ সকল কাজে ভালো মানের উপকরণ ব্যবহারের নিয়ম রয়েছে। ভালো করে সাবভেজ করাসহ আধুনিক পদ্ধতিতে ডাবল মিটুমিনাস কার্পেটিং বা বাইন্ডার কোর্স এর নিয়ম অনুযায়ী সরলীকরণ রাস্তার উপর প্রথমে ৭০ মিলিমিটার কার্পেটিং করার কথা পরে মূল রাস্তার সাথে মিল করে আরো ৫০ মিলিমিটার কার্পেটিং করার নিয়ম। দুধাপে কার্পেটিংয়ের এ কাজকে ডাবল মিটুমিনাস কার্পেটিং বা বাইন্ডার কোর্স বলা হয়।
সরেজমিনে আরো দেখা যায়, ডাবল বিটুমিনাস কার্পেটিংয়ের প্রথম ধাপে ৭০ মিলিমিটার কার্পেটিং নেই। ৩০ থেকে ৪০ মিলিমিটারের বেশি কোথায়ও ডাবল কার্পেটিং পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। কোথায়ও ৭০ মিলিমিটারের যায়গায় ২০-২৫ মিলিমিটার কার্পেটিং করা হয়েছে।
এদিকে জোড়াতালি দিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বাক সরলীকরণের কাজ শেষ করতে গিয়ে রোলার কম দেওয়া ও অন্যান্য কাজ নিম্নমানের হওয়ায় এক বর্ষাতেই দেবে যাচ্ছে রাস্তা। ভেঙে যাচ্ছে রাস্তার কিনারা। আর এসব অনিয়ম সওজের যোগসাজসে হচ্ছে বলে সকলের ধারনা। কারণ হিসেবে সাধারণ মানুষ মনে করছে মাহফুজ খানের এ পুকুর চুরির পেছনে বিভাগীয় কর্তারা জড়িত না থাকলে এমন নিম্নমানের কাজ হতে পারে না।
এ বিষয়ে ভোলা সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী পঙ্কজ দেবনাথ কালের কণ্ঠকে বলেন, আমাদের দেখা মতে কাজ ভালো হচ্ছে। নিম্নমানের কাজ হলে ব্রিজ ভেঙে পড়তো। ব্রিজ ভেঙে না পড়া পর্যন্ত তো এ কাজ খারাপ বলা যাবে না। আর ব্রিজ ভেঙে পরলে আমারও তো দায়ভার আছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, রাস্তা সরলীকরণের কাজে আমাদের দেখিয়ে দেওয়া পাথর তারা ব্যবহার করেছে। এখন পর্যন্ত সব কাজ মিলিয়ে ৮৩ শতাংশ শেষ হয়েছে।
এদিকে কাজের ঠিকাদার মাহফুজ খান জেবির কর্ণধার মাহফুজ খানের সাথে তার মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয়দের অভিমত, প্রভাবশালী এ ঠিকাদার বরিশাল ও ভোলা সওজের অফিসকে ম্যানেজ করে মূল্য তালিকা টেম্পারিং করে এ কাজ নিয়েছেন। তাই তিনি কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করছেন না। এর ফলে ব্যাহত হচ্ছে সরকারে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড।
Leave a Reply