মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৬ পূর্বাহ্ন
এইচ.এম.এ রাতুল (বিশেষ প্রতিনিধি): বরিশালে বইছে তীব্র শৈত্য প্রবাহ। ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় বরিশাল তথা সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেই ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। তবে খেটে খাওয়া মানুষগুলো শীত উপেক্ষা করেই বের হচ্ছেন কাজের সন্ধানে। গত এক সপ্তাহ যাবত ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু-বয়োবৃদ্ধরা। হাসপাতালগুলোতে স্বাভাবিকের তুলনায় বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। অপরদিকে বোরো বীজতলা কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা করছেন কৃষকরা। এদিকে আবহাওয়া অফিস বলছে, দুই/একদিনের মধ্যে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়বে। তবে দু’দিন পরেই এ অঞ্চলে বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে বলে জানায় তারা।
আবহাওয়া বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, পৌষের প্রায় শেষে এসে শুক্রবার সকাল ৬টায় বরিশালে তাপমাত্রার পারদ নেমে যায় ১১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। যা মাত্র ২৪ ঘন্টা আগেই ছিল ১৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা মৌসুমের সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে। ফলে শুক্রবার সকাল থেকে অনেককেই জরুরী প্রযোজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে দেখা যায়নি। শুক্রবার সকালে বরিশাল বিভাগের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল সাগর পাড়ের খেপুপাড়াতে ১১.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এমন পরিস্থিতিতে ঠান্ডাজনিত রোগ ব্যাধী বৃদ্ধির আশংকাকেও বাড়িয়ে তুলছে। সদ্য সমাপ্ত ২০২৩ সালে বরিশালে ঠান্ডাজনিত নানা রোগ নিয়ে সরকারী হাসপাতালগুলোতে প্রায় ৭৭ হাজার রোগী এসেছে বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে। এরমধ্যে শুধুমাত্র ডিসেম্বর মাসেই নিউমোনিয়া আক্রান্ত প্রায় দেড় হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছে সরকারী হাসপাতালগুলোতে। এদিকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ৩৬ শয্যার বিপরীতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ছিলো আড়াই শতাধিক শিশু। বর্হিবিভাগেও চিকিৎসা নিয়েছে ২ শতাধিক শিশু। তাদের বেশিরভাগই গ্রামের। রোগীর চাপ থাকলেও তাদের সুষ্ঠু চিকিৎসার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম। ঠাণ্ঠাজনিত রোগ থেকে শিশুদের রক্ষায় গরম কাপড়ে শিশুদের আবৃত রাখাসহ অভিভাবকদের আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে চলামন মৃদু শৈত্য প্রবাহ জনস্বাস্থ্যের সাথে বোরো ধান, গোল আলু ও শীতকালীন সবজির ওপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন। বর্তমান শৈত্য প্রবাহ বরিশাল অঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থায় নতুন সংকট তৈরী করতে পারে বলে মনে করছেন তারা। গত অক্টোবর ও নভেম্বরে দুটি ঘুর্ণিঝড়ে ভর করে অকাল বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলের আমন ও রবি ফসল বিরূপ পরিস্থিতির শিকার হয়। এবার দক্ষিণাঞ্চলে প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমনের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করলেও বৈরী আবহাওয়ায় উৎপাদন যথেষ্ঠ ব্যাহত হয়েছে।
অপরদিকে দু দফার অকাল বর্ষণে রবি আবাদ বিলম্বিত হবার পড়ে এখন শেষ রাতের মাঝারী থেকে ঘন কুয়াশার সাথে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নিচে নেমে যাওয়ায় বোরো বীজতলা ‘কোল্ড ইনজুরীর’ কবলে পড়ছে। গোল আলুর আবাদও বিলম্বিত হবার পরে শৈত্য প্রবাহে এখন তা ‘লেট ব্লাইট’ রোগে আক্রান্ত হবার মুখে।
চলতি রবি মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের প্রায় ৪ লাখ হেক্টরে ১৭ লাখ টন বোরো চাল উৎপাদনের লক্ষে প্রায় ৯০ ভাগ বীজতলা তৈরী হয়েছে। কিন্তুঘন কুয়াশার সাথে তাপমাত্রার পারদ স্বভাবিকের নিচে নেমে যাওয়ায় এসব বীজতলা কোল্ড ইনজুরীর ঝুকির মুখে। এছাড়া প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ২ লাখ টন গোল আলু উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে, ঘন কুয়াশায় সেখানেও ‘লেট ব্লাইট’ রোগ হানা দেয়ার আশংকা ক্রমশ বাড়ছে।
অপরদিকে ঘূর্ণিঝড়ের বিরূপ প্রভাবকে পেছনে ফেলে ১৫ লাখ টন সবজী উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রায় ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে, সেখানেও নতুন সংকট তৈরী করছে ঘন কুয়াশার সাথে হিমেল হাওয়া সহ শৈত্য প্রবাহ। কনকলে ঠান্ডার সাথে ঘন কুয়াশায় ফুল কপি ও বাধা কপি সহ বিভিন্ন সবজির উৎপাদন ব্যাহত হবার পাশাপাশি গুনগত মান নষ্ট হচ্ছে। বর্তমান জলবায়ু পরিস্থিতি মাঠে থাকা গমের ‘ব্লাষ্ট’ নামের এক ধরনের ছত্রাকবাহী রোগের পরিস্থিতি তৈরী করার আশংকাও বৃদ্ধি করছে। ইতোমধ্যে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে গমের আবাদ সম্পন্নের পথে। যা লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামারবাড়ি) বরিশালের উপ-পরিচালক মো. মুরাদুল হাসান জানিয়েছেন, শীতকালীন সময়ে শৈত্য প্রবাহ আসতে পারে এ ধারণ থেকে আগে থেকেই কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের নানা পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কৃষকরা যাতে কোন ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন না হয় কিংবা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা যাতে ব্যাহত না হয় এজন্য উপজেলা পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের দিয়ে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে।
Leave a Reply