সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৭ পূর্বাহ্ন
মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি॥ পিরোজপুরে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ফাতেমা আক্তার ইতি (৯) কে ধর্ষণের পর হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। খালাসপ্রাপ্তরা হলো- উপজেলার মেহেদি হাসান স্বপন (২২) ও সুমন জমাদ্দার (২০)।
আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে বুধবার (৩০ জুন) বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি এ এসএম আব্দুল মবিনের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিশির মো. মনির। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান।
আপিল শুনানিতে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, আসামি সুমন জমাদ্দার ঘটনার সময় শিশু ছিলেন। তখন তার বয়স ছিল ১৬ বছর। তার এ ব্যক্তব্যের পক্ষে আসামির জন্মসনদ, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার কাগজপত্র, তার মা-বাবার বিয়ের কাবিননামা আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান বলেন, এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আসমি সুমন জমাদ্দারের জন্মসনদ সংগ্রহ করেছিলেন। তা আমরা আদালতে উপস্থাপন করেছিলাম। কিন্তু আদালত তা গ্রহণ করেনি। এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে যাবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে নোট পাঠানো হয়েছে।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ঝাটিবুনিয়া গ্রামের ৯ বছর বয়সী শিশুটি উপজেলার বুখাইতলা বান্ধবপাড়া গ্রামে তার নানার বাড়িতে থেকে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত।
২০১৪ সালের ৫ অক্টোবর সকালে মেয়েটি তার নানার একটি গরু স্কুল মাঠে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যায়। দুপুর গড়িয়ে গেলেও সে ঘরে ফিরে না আসায় নানাবাড়ির লোকজন বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি শুরু করে।
পরের দিন দুপুরে প্রতিবেশী শাহজাহান জমাদ্দারের বাগানে মেয়েটির বিবস্ত্র অবস্থায় ওড়না পেঁচানো ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পিরোজপুর জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ননী গোপাল রায় তার রিপোর্টে উল্লেখ করেন, মেয়েটিকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। পরে তার বাবা ৬ অক্টোবর একটি মামলা করেন।
এ মামলায় তদন্ত শেষ করে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা। ৭ এপ্রিল তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
এ মামলায় তদন্ত শেষ করে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা। ৭ এপ্রিল তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
আসামি সুমন জমাদ্দার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরবর্তী সময়ে এই জবানবন্দি প্রত্যাহার করেন।
রাষ্ট্রপক্ষ সর্বমোট ১৩ জন সাক্ষী উপস্থাপন করে। অপরপক্ষে আসামিরা ১১ জন সাক্ষী হাজির করে।
পরে ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. গোলাম কিবরিয়া আসামি দুইজনকে ফাঁসির আদেশ দেন।
এ মামলায় মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে আসে। একইসঙ্গে আসামিরাও আপিল করে। সে আপিল এবং ডেথ রেফারেন্সেরর শুনানি শেষে হাইকোর্ট আসামিদের খালাসের রায় দিলেন।
Leave a Reply