সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৩ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক॥ প্রায় দুইমাসের ভিসি বিরোধী আন্দোলন এবং পরবর্তী সময়ে নতুন ভিসি নিয়োগে ঢিলেমির কারণে দক্ষিণ বঙ্গের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠটিতে শুরু হয়েছিল অচলাবস্থা। তবে গত ২৫ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে বর্তমান ট্রেজারার অধ্যাপক ড. এ কে এম মাহবুব হাসানকে ভিসির রুটিন ওয়ার্ক পরিচালনা করার দায়িত্ব দেওয়ায় সেই অচলাবস্থা কিছুটা লাঘব হয়।তবে নতুন করে গত রবিবার থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে আবার অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের পিছনে বিভাগটির শিক্ষকদের নিজেদের কোন্দলকেই কারণ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্ট সবাই।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিভাগটির বর্তমান চেয়ারম্যান এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর মোহসিনা হোসেন এবং আরেকজন সিনিয়র এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর সঞ্জয় কুমারের মধ্যকার পেশাগত অসহযোগীতা ও দূরত্বের কারণেই বর্তমান সমস্যার উৎপত্তি ঘটেছে।সদ্য সাবেক হওয়া ভিসি ড.ইমামুল হকের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বর্তমান চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিভিন্ন কারণে অন্যান্য শিক্ষকদের সমন্বয়হীনতা প্রকাশ পেয়েছে । এমনকি ড.ইমামুল হকের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয়টিতে হয়েছিল সেখানে শিক্ষকদের মধ্যে নেতৃত্বে ছিলেন এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর সঞ্জয় কুমার।
যার ফলশ্রুতিতে বর্তমানে তিনি সেখানকার শিক্ষকদের মধ্যে প্রভাব বিস্তারে সক্ষম। সংগত কারণেই মোহসিনা হোসেন এবং সঞ্জয় কুমারের মধ্যকার দূরত্বে বিভাগটির অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ চেয়ারম্যানের পাশ থেকে সড়ে এসেছেন এবং তার প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেছিলেন। তবে এসব পেশাগত সমীকরণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে গতকাল জানা যায় যে, গত ২৫ মে ৭ম সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষ হলেও বিভিন্ন জটিলতা ও শিক্ষকদের অন্তকোন্দলের জন্য প্রায় দুই মাসেও নতুন সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হয় নি। এ কারণে তারা অফিস রুমে তালা লাগিয়ে দিয়েছিলেন। ২০১৪-১৫ সেশনে জানুয়ারীতে অনার্স শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ৮ম সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হয়নি। আটকে আছে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা, ক্লাস শুরু হচ্ছে না ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ৩য় বর্ষ ১ম সেমিস্টারের।
উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দিতে গতকাল সোমবার বেলা তিনটায় কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড.মুহম্মদ মুহসিনের নেতৃত্বে বাংলা বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে জরুরি রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের ব্যাপারে জানতে চাইলে ড.মুহাম্মদ মুহসিন বলেন, ” শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম সহ সার্বিক পড়াশোনা যেন গতিশীল থাকে সে ব্যাপারে বর্তমান দায়িত্বে থাকা মাননীয় উপাচার্য মহোদয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আগামীকাল নতুন রুটিন করে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে”। তবে বিভাগের শিক্ষকদের পেশাগত দূরত্ব নিরসনে কোন কার্যকর পদক্ষেপের কথা তিনি জানাতে পারেন নি। এমতাবস্থায় ক্লাসে ফিরিয়ে নেওয়ার পরেও শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম গতিশীল হবে কি না সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ থেকেই যায়।
এসব ব্যাপারে বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান মোহসিনা হোসেন এর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করে ডিন মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ করেন। তবে শিক্ষার্থীদের মূল্যবান জীবনের কথা মাথায় রেখে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতারা, অন্যথায় শিক্ষার্থীদের একাডেমিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত করার দায়ভার কর্তৃপক্ষ এড়িয়ে যেতে পারবে না। সাম্প্রতিক ভিসি বিরোধী আন্দোলনের ছাত্র নেতা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম বলেন, ” পেশাগত সমন্বয়হীনতার কারণে কোনো শিক্ষার্থীর একাডেমিক জীবন যদি ঝুঁকির সম্মুখীন হয় সেটা সত্যি অমানবিক। শিক্ষকদের এমন অমানবিক জায়গা থেকে সড়ে আসাটাই আমি যৌক্তিক বলে মনে করি “।
Leave a Reply